যেসব কারণে দ্রুত বাড়ছে স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা
২৬ অক্টোবর, ২০২৫, 2:08 PM
NL24 News
২৬ অক্টোবর, ২০২৫, 2:08 PM
যেসব কারণে দ্রুত বাড়ছে স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা
ডা. মো. নূর আলম
স্পন্ডিলাইটিস হলো, মেরুদণ্ডের বাতজনিত রোগ। এতে কশেরুকা তথা মেরুদণ্ডের হাড় ও মেরুদণ্ড ও শ্রেণিচক্রের মাঝের সন্ধিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। তাতে মেরুদণ্ডের আশপাশের রগ ও সন্ধিবন্ধনীতে ব্যথা হয়। মানবদেহের মেরুদণ্ড বহু কশেরুকার সমন্বয়ে গঠিত। অস্থি ও তরুণাস্থির এ এক জটিল কাঠামো। এ কশেরুকাগুলোর মাঝে থাকে নরম ও স্থিতিস্থাপক ডিস্ক, যা মেরুদণ্ডকে নমনীয়তা প্রদান করে এবং ঝাঁকুনি থেকে রক্ষা করে।
তবে বয়স বাড়লে এবং ভুল ভঙ্গিতে দীর্ঘ সময় বসে থাকলে এ ডিস্কগুলো ক্ষয় হতে শুরু করে। আর্দ্রতা হারিয়ে শক্ত ও শুষ্ক হয়ে যায়। ডিস্কের স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে দুই কশেরুকার মধ্যে ঘষা লাগে এবং সেখানে নতুন হাড়ের দানা বা কাঁটা গজাতে পারে। এ হাড়ের কাঁটাগুলো স্নায়ুমূলে চাপ দিলে ঘাড়, হাত বা পায়ে তীব্র ব্যথা, অবশভাব কিংবা দুর্বলতা দেখা দেয়। অনেক সময় ক্ষয়প্রাপ্ত ডিস্ক তার স্বাভাবিক স্থান থেকে সরে গিয়ে স্নায়ুমূলে চাপ সৃষ্টি করে। একে বলে সিøপড ডিস্ক। সাধারণত দুর্ঘটনা, হঠাৎ পড়ে যাওয়া বা ঘাড়ে আঘাতের ফলে এমনটি ঘটে। ডিস্ক শক্ত হয়ে গেলে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক নড়াচড়া বাধাগ্রস্ত হয়। রোগীর দৈনন্দিন চলাফেরা ও কাজকর্মে সমস্যা দেখা দেয়।
বর্তমানে স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আগের তুলনায় এখন এ রোগের প্রাদুর্ভাব প্রায় তিন গুণ বেড়েছে, বিশেষ করে যারা তথ্যপ্রযুক্তি, কল-সেন্টার বা অফিসের কাজে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকেন, তাদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। স্পন্ডিলাইটিসের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। ঘাড়ের কশেরুকায় প্রদাহ হলে সেটিকে বলে সার্ভিকাল স্পন্ডিলাইটিস। এতে ঘাড় থেকে ব্যথা শুরু হয়ে কাঁধ, কলারবোন ও ঘাড়সংলগ্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে, ঘাড় ঘোরাতে অসুবিধা হয় এবং পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। কোমরের নিচের কশেরুকায় প্রদাহে কোমরের নিচে ব্যথা হয়। পরে পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ হলো, অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিস, যা একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত বাত। এতে মূলত মেরুদণ্ড ও শ্রেণিচক্রের সন্ধি আক্রান্ত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের হাড়গুলো একে অপরের সঙ্গে মিশে গিয়ে শক্ত হয়ে যেতে পারে। ফলে নড়াচড়ায় বাধা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থাকে বলে ‘বাঁশের মেরুদণ্ড’। রোগ নির্ণয়ে দেরি হলে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয় এবং রোগীর জীবনযাত্রার মান কমে যায়। অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিস মূলত শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের ফল এবং নিয়মিত শরীরচর্চা না করা, দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে থাকা বা অলস জীবনযাপন এ রোগ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
স্পন্ডিলাইটিসের সাধারণ লক্ষণ হলো ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা ও শক্তভাব, হাত বা আঙুলে অবশভাব, কোমর থেকে পায়ের দিকে দুর্বলতা, কখনও কখনও বুকে ব্যথা ও পেশিতে টান অনুভব করা, এবং গুরুতর অবস্থায় স্নায়ুমূলে চাপের কারণে প্রস্রাব বা মলত্যাগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হওয়া। এ রোগের মূল কারণের মধ্যে রয়েছে- পুষ্টির অভাব, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের ঘাটতি, ভুলভাবে বসা বা দাঁড়ানো, বয়স বৃদ্ধিজনিত হাড়ের দুর্বলতা, শরীরচর্চার অভাব এবং অনিয়মিত জীবনযাপন। দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে বা কম শারীরিক পরিশ্রম করলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ঘাড়, কোমর, পিঠব্যথা অনুভব করলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা এবং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস স্পন্ডিলাইটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।