ঢাকা ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
ঈদ ও পূজার ছুটি বাড়ল আশুলিয়ায় পুলিশের অভিযানে ১ ট্রাক পলিথিনসহ ২ জন আটক আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের কর্মবিরতি ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি বিএনপির ৪৬ রানে অলআউট, দেশের মাঠে সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় ভারত মানুষের মাঝে কোনো বৈষম্য থাকবে না: জামায়াত আমির সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ সেপ্টেম্বরে সড়কে ঝরেছে ৪৯৮ প্রাণ: যাত্রী কল্যাণ সমিতি শেখ হাসিনা-ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি বিমানবন্দর থেকে শমসের মবিনকে ফেরত

বিএনপি’র ভিত্তিহীন গণআন্দোলন ও ২৮ অক্টোবর

#

২৬ অক্টোবর, ২০২৩,  4:05 PM

news image

-অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া-


বিএনপি নামক সংগঠনটি সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আগামী ২৮শে অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন। জনসমর্থন হারিয়ে দলটির এখন নেতৃত্বের কোন ঠিক নেই। দলটি মূলত কার কথা মতো চলছে এটা কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারবে না। জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি সংগঠনের আন্দোলনের অতীত অভিজ্ঞতাই হলো সহিংসতা। বিএনপির আন্দোলন মানেই জ্বালাও-পোড়াও নীতি। এদেশের জনগণ বিএনপির ওপর বিশ্বাস করতে পারেনা। আন্দোলন তথা মহাসমাবেশের নামে বিএনপি আসলে কি করতে যাচ্ছে তা নিয়ে এদেশের মানুষের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। আন্দোলনের নামে সহিংসতা সৃষ্টি করে তারা ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অবস্থান করে ঢাকা অবরোধ করে ঢাকা শহরকে কলাপস করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আর এভাবেই জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং তাদের মনে আতঙ্ক তৈরি করে আন্দোলনের নামে জনজীবন বিপর্যস্ত করার পায়তারা করছে বিএনপি।

আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের এ আলটিমেটাম নতুন নয়। এর আগেও তারা আলটিমেটাম দিয়েছিল। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা চলমান অবস্থাতেও মামলা প্রত্যাহারের জন্য তারা আলটিমেটাম দিয়েছিল। ২০১৪-১৫ সালেও আলটিমেটাম দিয়েছে। গেল বছরের ১০ ডিসেম্বরেও তারা ঘোষণা দিয়েছিল। এদেশের মানুষ এখন আর বিএনপির আল্টিমেটামে বিশ্বাসী না। এগুলো এদেশের মানুষ এখন আর মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে না। জনসমর্থনের অভাবে বিএনপির আন্দোলন এখন আর সফল হওয়ার সুযোগ নেই।

বিএনপি চায় আন্দোলন তথা মহাসমাবেশের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে এ সরকারকে উৎখাত করতে। তাদের মনে রাখা উচিত যে এ সরকার কোনো ধরনের সামরিক সরকার না। জনসমর্থন ও জনগণের ভোটে নির্বাচিত দল এই আওয়ামী লীগ। জনগণের সমর্থন ও শক্তিতে বিশ্বাসী এই আওয়ামী লীগ সরকারকে উল্টে ফেলে দেওয়ার শক্তি কারো নেই। যার প্রমাণস্বরূপ গত ১৫ বছরে এত এত পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করেও বিএনপি-জামায়াত কখনো কোনভাবে সফল না হয়ে বরং ব্যর্থ হয়েছে। অতীতের করা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মতো বিএনপি আগামী ২৮ তারিখের আন্দোলন সফল করতে শত কোটি টাকা খরচ করেছে। আমাদের বিশ্বাস এটিও ফানুসে পরিণত হবে। জনসমর্থনের অভাবে এই মহাসমাবেশও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

এদিকে বিএনপির সঙ্গে এত দিন যুগপৎ আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না এমন কয়েকটি ধর্মভিত্তিক ইসলামী দল সরকারবিরোধী আন্দোলনে তৎপর হচ্ছে। তারা আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে দলীয় কর্মসূচি দিয়েছে। এই দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন আগামী ২৭ অক্টোবর জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে। পাশাপাশি দলটি ৩ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে। খেলাফত মজলিস ২৭ অক্টোবর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর এসব কর্মসূচি নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে। হঠাৎ করে ইসলামি দলগুলোর এমন সরব উপস্থিতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এই কর্মসূচি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে জনসমর্থনহীন এবং জনবিচ্ছিন্ন বিএনপির এক ধরনের বোঝাপড়া হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন হারিয়ে বিএনপি এখন এসব ইসলামি দলগুলোর সাথে বোঝাপড়া করেই তাদের পথচলা ধরে রেখেছে। এসব দলের সাথে বোঝাপড়া করে আন্দোলনের নামে যতই জ্বালাও-পোড়াও করুক তা কখনো গণআন্দোলনে পরিণত হবে না। কারণ বাঙালি জনগণের সমর্থনহীন কোন আন্দোলন যা কেবল জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে তা কখনো গণআন্দোলন হতে পারেনা। এই ক্ষেত্রে আগামী ২৮ শে অক্টোবরে বিএনপির ঘোষিত গণআন্দোলন মূলত গণনভিত্তিহীন গণআন্দোলন।

বারবার এমন মহাসমাবেশ তথা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েও কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে না পেরে কেবল কথার লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে বিএনপি দলটিকে। এই দলেট নেতারা বারবার গণ আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিচ্ছেন। বলছেন সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের কথা। কিন্তু গত নির্বাচনের আগে নিজেদের গঠন করা জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকেই দূরে সরিয়ে রেখেছে বিএনপি। প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতা কাঠামোর বাইরে, আন্দোলনে নেমে ব্যর্থতার স্মৃতি নিয়ে দলটির পক্ষে এখন বড় ধরনের কর্মসূচিতে যাওয়ার মতো সাংগঠনিক ও আর্থিক অবস্থা নেই। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হয় তাতে জনসমর্থন হারিয়ে ভরাডুবি হওয়ার পরের জাতীয় নির্বাচনে না এসে তা প্রতিরোধে আন্দোলনে নামে জ্বালাও-পোড়াও নীতি শুরু করে বিএনপি ও তার জোট। সেই আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার এক বছর পর ফের সরকার পতনের আন্দোলনে নামে তারা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় সেই আন্দোলন প্রত্যাহার না হলেও তা এক পর্যায়ে অকার্যকর হয়ে যায়। এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি তার আগের জোটের সঙ্গে নতুন শক্তি বৃদ্ধি করে অংশ নেয়। কিন্তু জনসমর্থনহীন ও জনবিচ্ছিন্ন এই বিএনপি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে খারাপ ফলাফল করে। তারপর থেকে বিএনপি মূলত আন্দোলনের নামে দফার রাজনীতিতে আবদ্ধ হয়ে আছে। বারবার বিভিন্ন দফা এবং কর্মসূচি দিচ্ছে ঠিক কিন্তু তার একটাও সফল হচ্ছে না। জনগণের সমর্থন নেই বলেই তাদের এই কর্মসূচি কখনো সফল হচ্ছে না এবং ভবিষ্যতেও হবেনা। জনবিচ্ছিন্ন এই বিএনপি দলের গণনভিত্তিহীন আন্দোলনের অবস্থা এমনই নড়বড়ে যে এক পা এগিয়ে তো চার পা পিছিয়ে যাচ্ছে।

আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে গণআন্দোলন গড়ে তোলা তো দূরের কথা বিএনপি আজ অস্তিত্ব সংকটে। তারা জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে। তারা এখন কার্যত জামায়াতের মতো সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে অবস্থান, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের প্রশ্নে দোদুল্যমান অবস্থান, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা ও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়ে সেই রূপের প্রকাশ ঘটেছে বিএনপির। যে দল স্বাধীনতার বিরোধী পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলে, সেই দল কাদের জন্য রাজনীতি করে তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা থেকেই জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখান করেছে।

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ এদেশের সাধারণ জনগণ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ মূলত একটি আন্দোলন-সংগ্রামের দল। অতীতের ন্যায় বর্তমানেও আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে জনদূর্ভোগ নয় বরং দেশের মানুষের অধিকার আদায় করেছে এবং করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ দলটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ সংগ্রাম করে এদেশের জনগণের জন্য স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবে সেই দলকে পছন্দ করে দেশের মানুষ। এদেশের মানুষের সমর্থন ও শক্তিতে ভর করে পথ চলছে আওয়ামী লীগ। কোনো বিদেশি শক্তি তথা ষড়যন্ত্রের ওপর ভর করে আওয়ামী লীগ পথ চলেনা। আওয়ামী লীগের পথচলার একমাত্র শক্তি এদেশের সাধারণ জনগণ যাদের ভাত ও ভোটের অধিকার রক্ষায় আপোষহীন এই আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে, বিএনপি কিন্তু তা নয়। কারণ এদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাধারণ জনগণের বিশ্বাস বিএনপি মূলত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকারীদের একটি দল। দুই দলের জন্ম-প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করলেই তা বোঝা যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের দেশে অনেক সফল গণআন্দোলন হয়েছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বও দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বে দেশের কোনো কল্যাণ হয়নি। বরং তারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালিয়ে ক্ষতি করেছে দেশের মানুষের জানমালের। দেশের জনগণ তা বুঝতে পেরে বিএনপিকে একঘরে করে রেখেছে।

সুতরাং এদেশের জনগণ কর্তৃক একঘরে করে রাখা সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি ঘোষিত ২৮ শে অক্টোবরের আন্দোলন অতীতের ন্যায় মূলত একটি গণভিত্তিহীন গণআন্দোলনের ঘোষণা। জনগণের সমর্থনহীন আন্দোলন কখনো গণআন্দোলনে পরিণত হতে পারেনা। ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ওপর ভিত্তি করা বিএনপির রাজনীতি মূলত এখন দফার রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও খেতে থাকবে। বিএনপি যতই দফা বা কর্মসূচি ঘোষণা করুক না কেন তা অতীতে কখনো সফল হয়নি এবং ভবিষ্যতেও সফল হবেনা এদেশের জনগণের সমর্থন ছাড়া। বিএনপির বুঝতে হবে জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনোদিন গণআন্দোলন গড়ে ওঠতে পারেনা এবং জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন এই বিএনপির পক্ষে কখনো গণআন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবেনা। তারা যতই গণআন্দোলন গড়ে তোলার কর্মসূচি ঘোষণা করুক না কেন দিনশেষে তা মূলত গণনভিত্তিহীন গণআন্দোলনে পরিণত হবে।

লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
ট্রেজারার
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
সাবেক চেয়ারম্যান
ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম