ঢাকা ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
ঈদ ও পূজার ছুটি বাড়ল আশুলিয়ায় পুলিশের অভিযানে ১ ট্রাক পলিথিনসহ ২ জন আটক আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের কর্মবিরতি ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি বিএনপির ৪৬ রানে অলআউট, দেশের মাঠে সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় ভারত মানুষের মাঝে কোনো বৈষম্য থাকবে না: জামায়াত আমির সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ সেপ্টেম্বরে সড়কে ঝরেছে ৪৯৮ প্রাণ: যাত্রী কল্যাণ সমিতি শেখ হাসিনা-ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি বিমানবন্দর থেকে শমসের মবিনকে ফেরত

“বিদেশী মদদে বিএনপির সহিংস আন্দোলন”

#

৩১ অক্টোবর, ২০২৩,  4:49 PM

news image

-অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া-


সহিংসতার পথ ধরেই বিএনপির হাঁটছে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতার নির্মম হত্যাকান্ডের প্রধান রাজনৈতিক বেনিফিশিয়ারি বা সুবিধাভোগী দলের নাম বিএনপি। দলের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানও নিজের তৈরি সহিংস রাজনীতির শিকার হয়েছেন। কিন্তু জিয়া-উত্তর নব্য বিএনপি দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও রাষ্ট্রপতি জিয়া হত্যার বিচারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কেন নেয়নি, তার কোনো সঠিক উত্তর কেউ জানে না। বিএনপির নেতারাও এ সম্পর্কে কোনো দিন কিছু বলেননি। রাজনীতি অত্যন্তগতিশীল একটি বিষয়। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে সে রাজনীতি অস্তিত্ব হারাবে, এটাই স্বতঃসিদ্ধ। এমন রাজনৈতিক সত্য বোঝার মতো মানুষ বিএনপিতে আছে। তার পরও তারা যখন সহিংস পথে যায়, তখন সংগত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি শান্তিপূর্ণ পথ বের করতে বিএনপি ব্যর্থ, নাকি একে একে ঘরে-বাইরের সব অবলম্বন হারিয়ে দিশাহারা। ২০১৩ থেকে ২০১৫, প্রায় দুই বছর লাগাতার চরম সহিংস রাজনীতির পথ অবলম্বন করে বিএনপি শুধু ব্যর্থ নয়, আন্তর্জাতিক

অঙ্গনে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিএনপি তাদের চিরাচরিত অভ্যাস ধরে রেখে মার্কিনীদের নীতির বশিভূত হয়ে সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়েই চলছে। যা গত ২৮ অক্টোবরে সমাবেশের নামে চালানো সহিংসতাই প্রমাণ করে। মার্কিনীরা মূলত তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নানা ধরনের আশার বানী শোনাতেই আছে বিএনপি কে। বিএনপি ও তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য পরোক্ষভাবে সহিংস রাজনীতি বেছে নিচ্ছে,যা তাদের কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। গত ২৯ জুলাই ঢাকা অবরোধের নামে যে রকম তান্ডব চালানো হয়েছে, তাতে সাধারণ জনগণের বুঝতে বাকি নাই যে এদের আসল উদ্দেশ্য কী। প্রথমেই প্রশ্ন উঠেছে অবরোধের নামে জনমানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি, রাস্তা বন্ধ এবং সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা কি বৈধ রাজনৈতিক কর্মসূচি? সংগত কারণেই এ রকম কর্মসূচিতে পুলিশ অনুমতি দিতে পারে না, বরং কেউ তা করতে চাইলে আইনি পন্থায় সর্বশক্তি দিয়ে জনস্বার্থ নিশ্চিত করা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দায়িত্ব। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তো নেতাকর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হওয়ার কথা নয়। টেলিভিশনের খবরে সচিত্র প্রতিবেদনে দেখা যায়, শত শত বিএনপির নেতাকর্মী বড় বড় লাঠি দিয়ে সম্মিলিতভাবে পুলিশের গাড়ির ওপর আঘাত করছেন। পুলিশ সেটি ঠেকাতে গেলে পুলিশের ওপরও তাঁরা আক্রমণ করেছেন। কয়েকটি বাস ও গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। বিএনপি

ভালো করে জানে এ রকম সহিংস জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতির মাধ্যমে তারা কিছু অর্জন করতে পারবে না। এর উদাহরণ ২০১৪-১৫ সাল। তখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রায় ৯০ দিন লাগাতার অবরোধের নামে ভয়াবহ জ্বালাও-পোড়াও চালিয়ে, ঘুমন্তমানুষ নিয়ে চলমান রাতের বাসে আগুন, রেলে আগুন, ফুটপাতের দোকানে আগুন অর্থাৎ সব রকম ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালিয়েও তারা কিছু অর্জন করতে পারেনি, বরং রাজনৈতিকভাবে আরো পিছিয়ে পড়েছে। তখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যা পারেনি, নেতৃত্বহীন বিএনপি সেটি আজ পারবে—এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। উপরন্তু তখন আওয়ামী লীগ সরকার কেবল পাঁচ বছর পার করেছে, দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধির চিত্রটি আজকে যেমন দেশে-বিদেশে দৃশ্যমান, এমনটি তখন ছিল না। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিরও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে, যার সব কিছু আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আর বিএনপির রাজনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। তাদের এ সহিংস রাজনীতি এখনোও আগের মতোই বিদ্যমান। গত ২৮ অক্টোবর একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে কিভাবে নির্মম ভাবে হত্যা করা হলো এটি তার বাস্তব প্রমাণ। বিএনপির এমন কার্যকলাপে পিছনে শক্তি হিসেবে কাজ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আসলে এইখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই পিছনে থেকে

লেলিয়ে দিচ্ছে, যা বিএনপি বুঝতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্র চায় তাদের সুবিধা, আর সেটা আদায়ে তারা যে কোনো দলকে সমর্থন দিতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের দাবী মেনে নিবে না বলেই এখন তারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে বিএনপিকে সমর্থন করতেছে। আর এটার জন্য তারা কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এই নীতিমালার অনুসরণ করে বিএনপি এটা কে শক্তি হিসেবে ধরে সহিংসতার দিকে নিজেদের ঠেলে দিচ্ছে যা মূলত তাঁরা তাদের নিজেদেরই ক্ষতি করছে। তাদের অজুহাত নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্রেডিবিলিটি বা বিশ্বাসযোগ্যতা তো বিএনপিই বিনষ্ট করেছে। ২০০১-০৬ মেয়াদ শেষে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তি প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য বিএনপি তখন যে বক্র পথ অবলম্বন করেছিল, সেটি তো কারো অজানা নয়। তারপর অনৈতিক পন্থায় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ গ্রহণ, খালেদা জিয়ার হুকুমমতো ইয়াজউদ্দিনের

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিচালনার চেষ্টার প্রতিবাদে চারজন উপদেষ্টার পদত্যাগ এবং সেই পথ ধরে ২০০৭-০৮ মেয়াদের যে অভিশাপ বাংলাদেশকে গ্রাস করেছিল তার অভিঘাত থেকে বিএনপিও রক্ষা পায়নি। সুতরাং গণতন্ত্র, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা— কোনো কিছুর জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরাপদ নয়। উপরন্তু ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে যথাযথ পদ্ধতি, সব রকম ডিউ প্রসেস অনুসরণ করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছে। সংবিধানে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলতে আর কিছু নেই। কিন্তু বর্তমান সময়ে তাদের যে সহিংস আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি আরোপের ফলে। তারা মনে করছে এ নীতির দ্বারা পরোক্ষভাবে তারা লাভবান হবে আর ক্ষমতাশীন দল যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তমেনে নিবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কখনোই অন্যের গোলামী করতে রাজি নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকে সরকার ও বিরোধী দল সহিংসতায় না জড়িয়ে এক

ধরণের সংযম প্রদর্শন করে আসছিলো কিন্তু শেষ পর্যন্তসেটি তারা আর ধরে রাখতে পারেনি। গত ২৭শে মে বাংলাদেশের উদ্দেশে ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়ি ত বলে মনে করলে সেই ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয় সেসময়। পরে গত ২২শে সেপ্টেম্বর সেই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরুর কথা জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের নানা চাপের কারণে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপিকে সভা সমাবেশের ক্ষেত্রে এতদিন যে সহযোগিতা পুলিশ-প্রশাসন করে আসছিলো সেটি আর অব্যাহত থাকবে-না, কারণ তাদের সহিংসতার মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলছে। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্তহচ্ছে যা একটি দেশের জন্য চরম বিপর্যয়। সুতরাং এটা সহজেই অনুমেয় যে মার্কিনীদের কিছু ভুল নীতি সহিংস বিএনপিকে আরো সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
ট্রেজারার
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
সাবেক চেয়ারম্যান
ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম