ঢাকা ৩০ আগস্ট, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
আল্লাহ ছাড়া কেউ এই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না: সালাহউদ্দিন তৌহিদ আফ্রিদি কারাগারে রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে অস্ত্রসহ ৬ যুবক গ্রেপ্তার উল্লাপাড়ায় বাইচের নৌকার সঙ্গে বরযাত্রীর নৌকার সংঘর্ষ, নিহত ২ ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ, নিহত ৩ ফোনে নুরের চিকিৎসার খোঁজ নিলেন প্রধান উপদেষ্টা, সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস টেকসই উন্নয়নের জন্য জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট হারল বাংলাদেশ নুরের ওপর হামলার নিন্দা ও তদন্তের নিশ্চয়তা প্রেস সচিবের নুরের ওপর হামলা সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ: অ্যাটর্নি জেনারেল

বন্যায় তিস্তাতীরে মানুষের ভোগান্তি

#

নিজস্ব প্রতিনিধি

১০ আগস্ট, ২০২৫,  10:59 AM

news image

বন্যা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলেও তিস্তা নদীর পানি গতকাল ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে তিস্তাতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের হাজারো মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। উজান থেকে নেমে আসা পানি কমে গতকাল বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ নুরুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ৯টায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। গতকাল সকাল ৬টায় হাতীবান্ধার তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৯টার দিকে পানি কমে ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব জলকপাট খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো।

আবহাওয়া অফিস জানায়, উজানে পানিসমতল হ্রাস পাওয়ায় শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত তিস্তার পানিসমতল ধীরগতিতে বৃদ্ধি পায়। তবে এ অববাহিকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় উল্লিখিত সময়ের মধ্যে পানিসমতল পুনরায় বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তাসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে ওই সময়ে বন্যাঝুঁকি রয়েছে। পাউবো সূত্র জানান, ভারতের উজানে ভারী বর্ষণের ফলে নদীতে প্রবাহ হঠাৎ বেড়ে যায়। রাতে পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। ডুবে গেছে আমন ধান, সবজির মাঠ ও পুকুর। সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এখন নৌকা ও ভেলা হয়ে উঠেছে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বেশ কিছু নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে পাটগ্রামের দহগ্রাম, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী ও নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী; সদরের ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়ন। তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ নুরুল ইসলাম জানান, নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম : উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে আবারও কুড়িগ্রামে তিস্তার পানি অনেকটা বেড়েছে। ১৬ নদনদীর পানি নতুন করে বাড়ায় আবারও বন্যার পদধ্বনি দেখা দিয়েছে। তিস্তাসহ সবকটি নদনদী অববাহিকার মানুষ নতুন করে বন্যা আতঙ্কে পড়েছে। কয়েক দফা এসব নদীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় শাকসবজি, মরিচ, ঢ্যাঁড়শ ও অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তার অববাহিকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। এতে নদীর পানি আবারও বাড়তে এবং নতুন করে বন্যার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তাতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা থাকায় সতর্ক করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, ‘পানি কিছুটা বেড়েছে ঠিকই, তবে এখনই বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা নেই। আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। তবে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা রয়েছে।’

বগুড়া : বগুড়ায় কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সড়কধসে শিবগঞ্জ উপজেলার ধোন্দাকোলা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন হুমকিতে রয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে স্কুল ভবনের পাশের সড়কটিতে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ওই এলাকার তিন গ্রামের মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার ধোন্দাকোলা গ্রামে করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে ধোন্দাকোলা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির পাশ দিয়ে রয়েছে পাকা সড়ক। এ সড়ক দিয়ে ওই এলাকার তিন গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে।

 এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা একই সড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে স্কুল ভবনের সঙ্গে পাকা সড়ক ধসে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, সড়কের বেশির ভাগ অংশ ভেঙে বড় আকারের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্কুল ভবন ও পাকা সড়ক হুমকিতে পড়েছে। এ ছাড়া গর্তের কারণে মানুষ ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে পারছে না। এলাকাবাসী বলছেন দ্রুত গর্তটি ভরাট করে সড়কটি সংস্কার করার কথা। তা না হলে যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া এ সড়ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিবৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ অংশ ধসে পড়েছে। সড়ক মেরামত হলে চলাচলরত মানুষ ঝুঁকিমুক্ত হবে। এদিকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় করতোয়া নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে নদীর পাশের সড়ক। পানির চাপে ধসে পড়ছে সড়ক রক্ষায় ফেলা জিও ব্যাগ। এক বছর আগে বগুড়া পাউবো গাড়ীদহ ইউনিয়নের ফুলবাড়ী-রনবিরবালা সড়কটির অন্তত ১০০ মিটার রক্ষার জন্য এ জিও ব্যাগ বসিয়েছিল। জিও ব্যাগ ধসে যাওয়ায় সড়কটির ওপর দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উপজেলা প্রকৌশলীর (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সড়কটি ২০২২ সালে ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৩০০ মিটার মেরামত করা হয়েছিল। মেরামতের মধ্যে অন্তত ১৩০ মিটার ছিল করতোয়া নদীর পাড়। এ অংশটুকুই ঝুঁকিপূর্ণ।

খাগড়াছড়ি : খাগড়ছড়ি ও রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং মহালছড়ি থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করায় মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসছে। মুবাছড়ির সঙ্গে মহালছড়ির সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। এখন এ সড়কে যানবাহন চলাচল করছে। পানি কমে যাওয়ায় ডুবে যাওয়া পরিবারগুলো বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নেমেছে। রাঙামাটির কাপ্তাই বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ায় এখন রাঙামাটি জেলার ডুবে যাওয়া গ্রামগুলো থেকেও পানি সরে যাচ্ছে। খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের পক্ষ থেকে মহালছড়ি সেনা জোন ও উপজেলা প্রশাসন আশ্রয় কেন্দ্রে ১০টি পরিবারকে খাবারসহ ওষুধপত্রের সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এসব পরিবার দীর্ঘ তিন দিন ধরে মহালছড়ির ইসলামিয়া মাদরাসা আশ্রয় কেন্দ্রে ছিল। মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান জানিয়েছেন, গ্রামগুলো থেকে পানি সরে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে আসছে। এসব পরিবারকে ওষুধপত্রসহ নানাভাবে প্রশাসন সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম