গাজায় আক্রমনে বিএনপি-জামায়াত নিরব কেন
২১ অক্টোবর, ২০২৩, 4:01 PM

NL24 News
২১ অক্টোবর, ২০২৩, 4:01 PM
গাজায় আক্রমনে বিএনপি-জামায়াত নিরব কেন
-অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া-
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এবং গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণের ওপর এই অমানবিক আগ্রাসন ও হামলার প্রতিবাদে বুধবার ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের হামলার প্রতিবাদে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন।
ফিলিস্তিনি মুসলিম জনগণের ওপর এমন অমানবিক আগ্রাসন ও হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম উম্মাহের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বাংলাদেশ সরকার কঠোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সবসময় ফিলিস্তিনীদের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। নীতিগতভাবেই বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পাশে রয়েছে। আর সেই জন্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও বাংলাদেশ ফিলিস্তিনীদের অধিকার রক্ষায় সমর্থন ও সহযোগিতা করে আসছে। ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্যও বাংলাদেশ ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজে ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থীর পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর গভীর সম্পর্ক এবং ফিলিস্তিনি ভাইদের প্রতি এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য তাদের বৈধ আকাঙ্ক্ষার প্রতি তার দৃঢ় সংহতির কথা উল্লেখ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের পাশে সবসময় দাঁড়িয়ে তাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো ফিলিস্তিনের ওপর ঈসরায়েলের এমন অমানবিক আগ্রাসন ও হামলায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ যেখানে এতো উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছে সেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে গলা ফাটানো বাংলাদেশের ধর্মব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াত একদমই নিরব। এমন অমানবিক হামলা ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে কোনো ধরনের প্রতিবাদ বা নিন্দা তারা জানায়নি। এই ধর্মব্যবসায়ী এবং সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে অরাজকতা সৃষ্টি করে অবৈধ উপায়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। প্রকৃতপক্ষে তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ধর্মবহির্ভূত একটি সংগঠন যার ফলে ফিলিস্তিনের ওপর ঈসরায়েলের এমন অমানবিক আগ্রাসনের পর যেখানে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে সেখানে তারা একদমই নিরব। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কেন ধর্মব্যবসায়ী বিএনপি-জামায়ত এমন নিরব?
বিএনপি-জামায়াতের এমন নিরবতার পিছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ঈসরায়েলের সাথে বিএনপি-জামায়াতের গোপন আঁতাতের বিষয়টি স্পষ্টভাবে আমাদের সামনে ওঠে আসে। জনসমর্থনহীন, জনবিচ্ছিন্ন এবং ধর্মব্যবসায়ী বিএনপি-জামায়াত মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর সাথে আঁতাত করে তাদের শক্তির ওপর ভর করে জনগণের সমর্থন ছাড়াই অবৈধ উপায়ে পিছনের দরজা দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতায় পূর্বের ন্যায় আসীন হতে পারবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপি-জামায়াতের ওপর খুশি থাকা মানে বিএনপির পথ একদমই সোজা বলে মনে করে। তাই পশ্চিমাদের খুশি রাখতে এবং তাদের সাথে আঁতাত রক্ষা করতে ধর্মব্যবসায়ী বিএনপি-জামায়াত মুসলিম গণহত্যায় পুরোপুরি নিরব।
আর এদিকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পালনকর্তা হিসেবে দাবি করা যুক্তরাষ্ট্রের ঈসরায়েলকে সমর্থনই প্রমাণ করে আসলে তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের রক্ষাকর্তা নাকি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরে তাদের হস্তক্ষেপ করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঈসরায়েলকে সমর্থন করায় বিএনপি এখানে নিরব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঈসরাইলকে সমর্থন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আঁতাত রক্ষার্থে ঈসরায়েলের এমন মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াতের নিরবতাই প্রমাণ করে তারা কতটা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী। তারা বরং ধর্মের দোহাই দিয়ে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে কথা বলে বাঙালি জনগণের সাথে প্রতারণা করে বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার অপপ্রচেষ্টা করছে। এছাড়াও ঈসরায়েলের সাথে আঁতাত করে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিএনপি বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকার উৎখাতে বিএনপি-জামায়াত ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ মুসলিম দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গেলে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে। বর্তমানে মুসলিম গণহত্যার মতো গুরত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াতের নিরবতা মানবতাবিরোধী ও সন্ত্রাসীরাষ্ট্র ইসরায়েল ও তার গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির গোপন আঁতাতের বিষয়টি একদম পরিষ্কারভাবে তুলে ধরছে। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা আরো প্রকট হয়েছে। দেশবিরোধী এই চক্রের অপতৎপরতায় বিএনপি-জামায়াত সর্বদাই জড়িত ছিলো এবং এখনও আছে। বিএনপি-জামায়াত তথা দেশবিরোধী গোষ্ঠী ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যেকোনো কিছুই করতে পারে এটাই তার প্রমাণ। এমনকি দেশকে বিক্রি করে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ঈসরায়েলের সাথে বিএনপি-জামায়াতের গোপন আঁতাতের জন্য ঈসরায়েলের এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তারা এতোটা নিরব।
লবিং অপরাজনীতির মাধ্যমে পশ্চিমা কিছু দেশ এবং সংস্থাকে খুশি রাখতে এসব দেশগুলোর বিভিন্ন নেতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিপুল পরিমাণ অনুদান দিয়ে আসছেন তারেক জিয়া এবং জামায়াত। এর ফলে সবসময়ই এই দেশ ও সংস্থাগুলো বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান ধরে রেখেছে। এমনকি যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অর্থের বিনিময়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে ব্যবহার করে তাদের পক্ষে লবিং করার জন্য। সেই ধারায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেমের মধ্যে স্বীকৃত ধনাঢ্য যুদ্ধাপরাধীরা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে। এটি পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এই অর্থ দেয়ার কারণেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সেই সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। শুধুমাত্র হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে নয়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকেও তারেক এবং জামায়াতের ধনাঢ্যরা অর্থায়ন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সমস্ত অর্থায়নের কারণেই তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাসহ বাংলাদেশের ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে নেতিবাচক বিভিন্ন প্রতিবেদন রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের এই অবস্থান মূলত বিএনপি-জামায়াতের লবিং রাজনীতির অপতৎপরতার ফসল।
সুতরাং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণের যেখানে ফিলিস্তিনি অসহায় জনগোষ্ঠীর পক্ষে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে সেখানে বিএনপি-জামায়াতের এমন নিরবতা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিএনপির আঁতাত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির কাছে হার মেনেছে গণতন্ত্র ও মানবতা। বিএনপির এই ষড়যন্ত্র ও আঁতাতের অপরাজনীতি বন্ধ করা উচিত। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে জনগণের সমর্থন প্রয়োজন সেটা ধর্মব্যবসায়ী বিএনপি-জামায়াতের বুঝা উচিত। সেই সাথে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা মুখে মুখে নয় বরং মনেপ্রাণে তা ধারণ করে সেই অনুযায়ী তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা উচিত। তা নাহলে অদূর ভবিষ্যতে ধর্মব্যবসায়ী এই বিএনপি-জামায়াতের অস্তিত্ব বিলীন হবে।
ট্রেজারার
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়