সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেন নাজমা মোবারেক
১১ নভেম্বর, ২০২৫, 11:01 AM
NL24 News
১১ নভেম্বর, ২০২৫, 11:01 AM
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেন নাজমা মোবারেক
মো. জাহিদুর রহমান: রুগ্ন ব্যাংকের তালিকায় থাকা এক্সিম ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, স্যোসাল ইসলামি ব্যাংক নিয়ে গঠিত হলো সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংক। একীভূত হওয়া এই ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির নামে লাইসেন্স লেটার অব ইনটেন্ট-এলওআই বা প্রাথমিক লাইসেন্স অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রবিবার গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ডের বিশেষ অনলাইন সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন গঠিত ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেককে। পর্ষদের অন্যান্য সদস্যরা হলেন অর্থ বিভাগ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব এম. সাইফুল্লাহ পান্না, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামাল উদ্দিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব মোহ. রাশেদুল আমিন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মসচিব শেখ ফরিদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত বুধবার ব্যাংকটির জন্য এলওআই ও লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছিল। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নামের অনুমোদন নিতে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধক কার্যালয় বা আরজেএসসিতে আবেদন করবে।
এরপর সেই অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠালে ব্যাংক পরিচালনার জন্য পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, নবগঠিত ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ হতে পারে ৬ মাস থেকে ১ বছর। এরপর পাঁচটি ব্যাংকের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকরা সম্পদের (অ্যাসেট) ও দায়ের (লায়াবিলিটি) পূর্ণ যাচাই শেষে নতুন ব্যাংকের অধীনে কার্যক্রম চালাবেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারের অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের থেকে নতুন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দেবে এবং ব্যাংকটি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে।
সম্প্রতি গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, একীভূত ব্যাংকটি দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হবে। আমানতকারীদের টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ব্যাংকটি সরকারি মালিকানাধীন হলেও পরিচালিত হবে বেসরকারিভাবে। কর্মীদের বেতন হবে বাজারভিত্তিক এবং আমানতকারীরাও মুনাফা পাবেন বাজারদরে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক পাঁচ ব্যাংকের কর্মীরা সবাই থাকবে,কারও চাকরি যাবে না। তবে ভবিষ্যতে চাহিদা অনুযায়ী জনবল সমন্বয় করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রাথমিক মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার। আর বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে আমানতকারীদের।
নাজাম মোবারেকের ব্যক্তিগত পরিচিতি:
নাজমা মোবারেক বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব। কর্মজীবনে তিনি প্রজাতন্ত্রের একজন সফল কর্মবীর। জীবন চলার পথে তিনি সর্বক্ষেত্রে সফলতা, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও স্বদেশপ্রেমের উজ্জল স্বাক্ষর রেখেছেন। নাজমা মোবারেক ৩১/১০/২০২৪ খ্রি. তারিখে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব হিসেবে যোগদান করেন। এ বিভাগে যোগদানের পূর্বে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গত ০৫/০৬/২০২৩ খ্রি. তারিখে সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান এবং ০৬/০৬/২০২৩ খ্রি. তারিখ হতে ৩০/১০/২০২৪ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সচিব হিসেবে যোগদানের পূর্বে তিনি অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অর্থ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। নাজমা মোবারেক বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার কাংশি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি উজিরপুরের ঐতিহ্যবাহী ধামুড়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ হতে প্রথম বিভাগে এবং ইডেন গার্লস কলেজ হতে এইচএসসি পরীক্ষাতেও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। উল্লেখ্য যে, তিনি এসএসসি পরীক্ষায় যশোর শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় প্রথম হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সমাজবিজ্ঞানে বিএসএস অনার্স এবং একই বিষয়ে এমএসএস ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
এছাড়াও তিনি যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে Public Economic Management & Finance এ এমএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন শেষে তাঁর বেশকিছু গবেষণাপত্র বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি অর্থ বিভাগের পাবলিক ফাইনান্স ইন্সটিটিউট এর একজন নিয়মিত প্রশিক্ষক/রিসোর্স পারসন।
নাজমা মোবারেক বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। ২৫ এপ্রিল ১৯৯৪ সালে তিনি সহকারী কমিশনার হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, গাজীপুরে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জামালপুরে সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি সহকারী সচিব হিসেবে বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অর্থ বিভাগে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট হিসেবে Strengthening Public Expenditure Management Project (SPEMP) শীর্ষক প্রজেক্টে দায়িত্ব পালন করেছেন।