ঢাকা ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রার তারিখ আরও পেছাচ্ছে শীতে কাঁপছে উত্তরের জেলা রাজধানীতে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, এক পরিবারের দগ্ধ ৬ বাজারে বাড়তি চাহিদার মধ্যেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জবির প্রথমবর্ষের ভর্তি আবেদন শেষ, আসনপ্রতি লড়াই করবেন ৭১ শিক্ষার্থী সুদানে আরএসএফের ড্রোন হামলায় ৭৯ বেসামরিক নিহত, শিশু ৪৩ ভারতে সবচেয়ে বড় পরমাণু স্থাপনা বানাচ্ছে রাশিয়া ইসরায়েলকে সতর্ক করল জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রের তালিকা থেকে সিরিয়াকে বাদ দিল কানাডা ফিফা শান্তি পুরস্কার পেয়ে যা বললেন ট্রাম্প

ভরা মৌসুমে কক্সবাজারে নেই পর্যটকের চাপ

#

নিজস্ব প্রতিনিধি

০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫,  10:41 AM

news image

ডিসেম্বর বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কক্সবাজারের। সারাবছরের অপেক্ষায় থাকা পর্যটননগরী হয়ে ওঠার কথা লাখো মানুষের পদচারণায় মুখর। কিন্তু এবারের দৃশ্য একেবারেই ভিন্ন-ফাঁকা সৈকত, খালি রুম, হতাশ ব্যবসায়ী আর অনিশ্চয়তার চাপ। দেশের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার যেন থমকে আছে এক অদ্ভুত নীরবতায়।

সৈকতে নীরবতা, থমকে ব্যবসা

ডিসেম্বরজুড়ে যে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামার কথা, সেই শহর এখন অনেকটাই নীরব। লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী-কোথাও নেই চিরচেনা ভিড়। ঘোড়াওয়ালা, ফটোগ্রাফার, জেড স্কী অপারেটর, কিটকট ব্যবসায়ী-সবার মুখে একই অভিযোগ, ‘পর্যটক নেই, আয় নেই, জীবিকা চলছে ধার-দেনায়।’

লাবণী পয়েন্টের ঘোড়াওয়ালা মোহাম্মদ জুনায়েদ বলেন, ‘গত বছর প্রতিদিন লাখের ওপর পর্যটক ছিল। এ বছর বেলা ১১টায় সৈকতে দুই হাজার মানুষও নেই। ব্যবসা প্রায় বন্ধ।’

ফটোগ্রাফার মো. ছফুর মনে করেন, ‘এটি তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ মৌসুম। কাজ নেই, আয় নেই-পর্যটন মৌসুমে এমন অবস্থা আগে দেখিনি।’

 ৩০ বছর ধরে সৈকতে ব্যবসা করা কিটকট (ছাতা) ব্যবসায়ী মুফিজ হোসেন হতাশ স্বরে বলেন, ‘এমন খারাপ সময় আর কখনো দেখিনি। কর্মচারীর বেতন, নিজের সংসার-কিছুই সামলাতে পারছি না।’ ১৬ বছর ধরে জেড স্কী চালানো ইউসুফের গল্পও একই- ‘পর্যটক নেই। সংসার চলছে ধার করে।’

হোটেল-রেস্তোরাঁয় টানাপোড়েন

কক্সবাজারের তারকামানের হোটেলগুলো সাধারণত ডিসেম্বরজুড়ে প্রায় শতভাগ বুকিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। কিন্তু এবার বুকিং নেমে এসেছে মাত্র ২০ শতাংশে। রেস্তোরাঁগুলোও প্রায় ফাঁকা। হোটেল ‘প্রাসাদ প্যারাডাইস’-এর মহাব্যবস্থাপক মো. ইয়াকুব আলী জানান, গত বছর ডিসেম্বরজুড়ে প্রতিদিন ৯০ শতাংশ রুম ভরা ছিল। এ বছর ৮০ শতাংশ রুম খালি পড়ে আছে।

হোটেল ‘কক্স-টুডে’-এর ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ মনে করেন রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে ভয় তৈরি হয়েছে। ‘বুকিং তো নেই-ই, ক্যানসেলেশনও নেই-কারণ ফোনই আসছে না।’ রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বড় সংকটে। সুরমা রেস্টুরেন্টের পরিচালক তানজিম হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘রোজগার নেই। কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছি।’

বার্মিজ পণ্যের দোকানেও মন্দা

বার্মিজ মার্কেটের দোকানগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা নেই। ছবি: সময় সংবাদ

ডিসেম্বরকে সামনে রেখে লাখ লাখ টাকার পণ্য মজুত করেছিলেন বার্মিজ পণ্যের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দোকানে পর্যটক নেই, নেই বেচাকেনা।

দোকানদার হুমায়ুন কবির জানান, গত বছর প্রতিদিন ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হতো। এবার ৫–৬ হাজার টাকাতেও দিন যেতে চাইছে না।

পর্যটকের অভাবে পরিবহন শ্রমিকরাও বিপাকে

হোটেলের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যাত্রী পাচ্ছেন না ইজিবাইক ও অটোরিকশা চালকরা।

ইজিবাইকচালক শামশুল আলম বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি, ১০টা বাজে—একজন পর্যটকও পাইনি। মনে হয় হোটেলেই অতিথি নেই।’

রাজনীতি ও অর্থনীতি-মূল সংকটের কারণ

হোটেল মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক চাপ পর্যটক আগমনে বড় প্রভাব ফেলেছে।

কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, মানুষ এখন ভ্রমণে কম বের হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক চাপ-সব মিলিয়ে পর্যটকের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।

তবু আশার আলো: বড়দিন-নববর্ষে ভিড় ফিরবে?

সব দুশ্চিন্তার মাঝেও ব্যবসায়ীদের চোখ এখন বড়দিন (২৫ ডিসেম্বর) ও ইংরেজি নববর্ষের (৩১ ডিসেম্বর) দিকে। তাদের আশা, বছরের শেষ দুই সপ্তাহে ভিড় ফিরবে, সৈকতে আবার পর্যটকের ঢল নামবে, কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াবে ব্যবসা। কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘ডিসেম্বরের ১৬ থেকে ৩১ তারিখকে কেন্দ্র করে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হবে। আশা করি, সামনে আমরা ভালো ব্যবসা করতে পারব।’ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের বুকে আবারও পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠুক কক্সবাজার-এই প্রত্যাশায় অপেক্ষায় রয়েছেন হাজারো পর্যটননির্ভর মানুষ। ভরা মৌসুমের এই অচলাবস্থা কাটিয়ে নতুন বছরে প্রাণ ফিরে পাবে দেশের পর্যটন রাজধানী-এমনটাই তাদের বিশ্বাস। সূত্র : সময় সংবাদ 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম