বঙ্গভবনের সামনে কাঁটাতারের বেড়া, ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ অক্টোবর, ২০২৪, 2:12 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ অক্টোবর, ২০২৪, 2:12 PM
বঙ্গভবনের সামনে কাঁটাতারের বেড়া, ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে গতরাতে বিক্ষোভকারীদের বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টার ঘটনা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার পর থেকে আরও জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের সামনে ব্যারিকেড ছাড়াও আজ (২৩ অক্টোবর) দেওয়া হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।
পাশাপাশি বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের সামনে মোতায়েন করা হয়েছে ২ প্লাটুন বিজিবি, রয়েছে বহু সংখ্যক এপিবিএন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। প্রস্তুত রাখা হয়েছে এপিসি, জলকামান ও রায়ট কার। বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে এখন পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ জনতা বা আন্দোলনকারীদের তেমন কাউকে দেখা না গেলেও বঙ্গভবন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি ছিল স্পষ্ট।
বঙ্গভবন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শাহরিয়ার আলী জানান, গতকাল রাতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ওপরে হামলা হয়েছে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত অবস্থায় আছেন। এক শিক্ষার্থীসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, আহত হয়েছেন তিনজন। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে আজ তাই বঙ্গভবন এলাকায় নিরাপত্তা আরও বেশি জোরদার করা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের চোখে পড়ছে না, তবুও সতর্ক আছে প্রশাসন। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছেন এপিবিএন, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী বঙ্গভবন এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ও যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এর আগে সোমবার (২১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ফেসবুকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র-জনতার গণজমায়েতের ডাক দিয়ে একটি পোস্ট করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বঙ্গভবন ঘেরাও করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থক ছাত্র-জনতা।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় ওইদিন রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।
তবে সম্প্রতি মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়ত সময় পাননি।’
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন হাসিনা সরকার পতনে নেতৃত্বদানকারীরা। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে বিভিন্ন ব্যানারে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগের দাবি নিয়ে বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
রাত ৮টা পর্যন্ত পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এরপর আন্দোলনরতদের মধ্য থেকে একদল অতি উৎসাহী বারবার বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর অবস্থানের ফলে তারা কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেনি।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বঙ্গভবনের সামনে পুলিশের গুলিতে এক শিক্ষার্থীসহ দুইজন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া একজন সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়।