ঢাকা ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
ঈদ ও পূজার ছুটি বাড়ল আশুলিয়ায় পুলিশের অভিযানে ১ ট্রাক পলিথিনসহ ২ জন আটক আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের কর্মবিরতি ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি বিএনপির ৪৬ রানে অলআউট, দেশের মাঠে সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় ভারত মানুষের মাঝে কোনো বৈষম্য থাকবে না: জামায়াত আমির সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ সেপ্টেম্বরে সড়কে ঝরেছে ৪৯৮ প্রাণ: যাত্রী কল্যাণ সমিতি শেখ হাসিনা-ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি বিমানবন্দর থেকে শমসের মবিনকে ফেরত

পিরিয়ডের অস্বস্তি দূর করতে দরকার সঠিক খাবার

#

০৯ জানুয়ারি, ২০২৪,  2:33 PM

news image

বয়ঃসন্ধিকাল থেকে মেনোপোজের আগ পর্যন্ত―এই সময় প্রতিমাসে নারীদের জরায়ু গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হয়। যদি গর্ভধারণ না ঘটে, তবে অনিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়ামের সঙ্গে ভেঙে পড়ে। তখন শরীর থেকে তিন থেকে সাতদিন ধরে রক্ত মিশ্রিত তরল নির্গত হয়। আর এ অবস্থাকে বলা হয় পিরিয়ড।

মাসিকচক্রে ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু হরমোনের মাত্রা ওঠা-নামা করায় শারীরিক কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন- তলপেটে ব্যথা, মুড সুইং, ক্র‍্যাম্পস, ফুড ক্রেভিং, অবসাদ, ক্লান্তি, স্তনে ব্যথা, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি। এসব সমস্যা কমাতে সঠিক খাদ্য বাছাই বেশ কার্যকরী।

উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার: পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত প্রজেস্টেরন বের করতে সাহায্য করে। গোটা শস্য জাতীয় খাবার, শাক-সবজি, ফলমূল, শিমের বীচি, মটরশুঁটি, ওটস, ব্রাউন রাইস ইত্যাদিতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। এছাড়া ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রুকলি, শালগম, মূলার মতো ক্রুসিফেরাস সবজিতে থাকে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট। যা হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে।

আয়রনসমৃদ্ধ খাদ্য: পিরিয়ডের সময় আয়রনের ঘাটতি পূরণে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন- কলিজা, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, ডার্ক চকলেট, ছোলা, বিট ইত্যাদি। এছাড়া ভিটামিন সি যুক্ত খাবার শরীরে ঠিকভাবে আয়রন শোষণে সহায়ক। পেয়ারা, পাকা পেঁপে, জাম্বুরা, কমলা, স্ট্রবেরি, ব্রুকলি, কাঁচা মরিচে প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

ওমেগা- থ্রি ফ্যাটি এসিড: সামুদ্রিক মাছ, কড লিভার অয়েল, তিসিবীজ, চিয়াবীজ, চিনাবাদাম, আখরোটে রয়েছে ওমেগা থ্রি। ওমেগা থ্রি ও ভিটামিন ডি মস্তিষ্কের হ্যাপি হরমোনের মাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে। সূর্যের আলো, মাশরুম, ডিমের কুসুম ভিটামিন ডি-এর উৎকৃষ্ট উৎস।

ম্যাগনেশিয়াম: ম্যাগনেশিয়াম প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক রাসায়নিক উপাদানের মাত্রা কমিয়ে পিরিয়ডের সময় তলপেটে তীব্র ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পালং শাক, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম ও কলা হচ্ছে ম্যাগনেশিয়ামের উৎস। সুগার ক্রেভিং কমাতে ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে। এতে আয়রন, ম্যাগনেশিয়ামসহ ট্রিপটোফ্যান নামক এমাইনো এসিড থাকে, যা বিষণ্ণতা রোধ করে।

ভিটামিন বি৬: এটি ডোপামিন ও সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা বাড়ায়। এছাড়া মাসিকের আগে খারাপ লাগার অনুভূতি কমায়। আর ক্লান্তি, বিষণ্নতা, স্তনে ব্যথা উপশমে ভিটামিন ই-ও ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে বুটের ডাল, চীনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, কলা, মিষ্টি আলু, ডিম, টুনামাছ, মুরগির মাংস, গাজর, টমেটো খুবই উপকারী।

তরল পানীয়: পিরিয়ডের সময় ডিহাইড্রেশন ও মাথাব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত পানি পান ও তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। কুসুম গরম পানি পান জরায়ুর পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। এতে জরায়ুর সংকোচনের ফলে সৃষ্ট অস্বস্তি কমে। এছাড়াও লেবুপানি, ডাল, স্যুপ, আদা চা, মৌরি চা, ক্যামোমাইল চা, কাঁচা হলুদে থাকা এন্টিইনফ্ল্যামেটরি গুণ পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে দারুণভাবে কার্যকর।

তবে সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই একমাত্র কথা নয়। অতিরিক্ত কফি ও চিনি খাওয়া ছাড়তে হবে। কেননা, এটি ম্যাগনেশিয়াম ঘাটতির অন্যতম কারণ। এছাড়া রেড মিট প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের মাত্রা বাড়িয়ে পিরিয়ডের ব্যথা ও অস্বস্তি বাড়ায়। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ভাজাপোড়া, চর্বিযুক্ত খাবার, কোমল পানীয়, অতিরিক্ত লবণ, অ্যালকোহল, দুগ্ধজাত খাবার এসময় এড়িয়ে চলাই ভালো।

এসব পিরিয়ড ক্র‍্যাম্পিং, মুড সুইং, প্রদাহকে আরও বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি নিয়মিত ঘুম ও হালকা শরীরচর্চা করা প্রয়োজন। কারণ, ব্যায়াম করার সময় শরীর থেকে এন্ডরফিন নামক একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। এই এন্ডরফিনকে ন্যাচারাল পেইনকিলার বলা হয়ে থাকে। ফলে পিরিয়ডের সময় মন ভালো রাখতে সহায়তা করে।

লেখক: ইসরাত নাদিয়া, পুষ্টিবিদ
ই-মেইল: isratnadia28@gmail.com

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম