
নিজস্ব প্রতিনিধি
১০ জানুয়ারি, ২০২৩, 10:44 AM
ঘন কুয়াশায় রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা
ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় রবিশস্য ফসল ও বোরো বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, আলু, বেগুন, টমেটো ও অন্যান্য সবজির পাতা ঝলসানো রোগ বা পাতা পচা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া ও বোরো বীজতলার পাতা মরা রোগ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, এ ধরনের লাগাতার ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলার চারা বৃদ্ধির হার মারাত্মক হ্রাস পায় সঙ্গে ধানের চারার পাতা মরে যায়। চট্টগ্রামের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরাঞ্চলে মতো তাপমাত্রা চট্টগ্রাম অঞ্চলে নেই। উত্তরাঞ্চলে প্রায় প্রতিদিন তাপমাত্রা কমছে। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। এটা এক ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তারা বলেন, অতিরিক্ত কুয়াশার মন্দ এবং ভালো দুটোই রয়েছে। মন্দ দিক হচ্ছে কিছু কিছু রবিশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আবার কিছু কিছু জমির জন্য উপকারী। বিশেষ করে যে সব জমিতে চাষ দেওয়া সম্ভব নয় সেখানে অতিরিক্ত কুয়াশায় জমির আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়।
অতিরিক্ত কুয়াশাজনিত ক্ষেত খামারে রোগ বালাই দূর করার জন্য কৃষকদেরকে বীজতলায় ছত্রাকনাশক ছিটানো এবং কুয়াশার হাত থেকে রক্ষায় পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। একইভাবে আলু, টমেটো, বেগুনসহ অন্যান্য ফসল চাষিদেরও এই ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের তাপমাত্রা উত্তরাঞ্চলে মতো নিম্নমুখী নয়। তবে কুয়াশা আছে বেশি। আবহাওয়া দপ্তরের কৃষি বিষয়ক আগাম সংকেতের ওপর ভিত্তি করে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রস্তুতিমূলক পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবারের কুয়াশার কারণে যে সব ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে সেই বিষয়ে কৃষকদের অবহিত করা হয়েছে। কৃষি দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, কৃষি সম্প্রসারণ চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবার বোরো বীজতলা করা হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে। আবাদ করা হয়েছে ৫৯ হাজার ৪২ হেক্টর জমি। এ ছাড়া ৫৫ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে আলু, বেগুন, টমেটো, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যের আবাদ করা হয়েছে। কেবল আলুর আবাদ করা হয়েছে ৬ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দোহাজারী জাতের আলু রয়েছে প্রায় চার হাজার হেক্টর। নোয়াখালী জেলায় বাদাম চাষ করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর, লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন চাষ করা হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টরে। ফেনী জেলায় খেসারি ও ফেলন আবাদ করা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে। চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সৌরভ দাশ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের মতো ঠান্ডা চট্টগ্রামে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আর চট্টগ্রামে ঘন কুয়াশার মাঝেও সূর্যের দেখা মেলে যেটা উত্তরাঞ্চলে পাওয়া কষ্টকর। সেই হিসেবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের শীতে বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না। যেসব বীজতলা আক্রান্ত হয়েছে সেগুলো কিছুটা তাপমাত্রা বাড়লেই ঠিক হয়ে যাবে। এ ছাড়া অন্যান্য রবিশস্যও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম। তিনি জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চল বলতে চট্টগ্রাম ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার এই পাঁচ জেলাকে বোঝায়।