ঢাকা ১৫ নভেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
নির্বাচিত সরকার ভোলার গ্যাস সমস্যার সমাধান করবে : শিল্প উপদেষ্টা নির্বাচনের ৫ দিন আগেই মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশের বেশি ল্যাপটপের ডিসপ্লে নিরাপদে পরিষ্কার করবেন যেভাবে গণভোটের চারটি প্রশ্নের একটিতে দ্বিমত থাকলে ‘না’ বলার সুযোগ কোথায় শনিবার থেকে নতুন পোশাকে পুলিশ হিরো আলম গ্রেপ্তার ক্ষমতায় গেলে সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা পুনর্বহাল করবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমদ রোববার ও সোমবার জামায়াতসহ ২৪ দলের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি শততম টেস্টে ‘বিশেষ’ সম্মাননা পাচ্ছেন মুশফিক

আবু সাঈদ শহীদ হন পুলিশের গুলিতে

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ নভেম্বর, ২০২৫,  12:38 PM

news image

এসআই আশরাফুলের জবানবন্দি

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। আর এ গুলি চালাতে নির্দেশ দেন রংপুর কোতোয়ালি জোন পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আরিফুজ্জামান ও তাজহাট থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম।’ গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে এমনটিই জানিয়েছেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আশরাফুল ইসলাম।

আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ১৪ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। অপর দুই সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

জবানবন্দিতে এসআই আশরাফুল বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই আমি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনসে কর্মরত ছিলাম। ওই দিন সকাল ৮টায় সিসি মূলে আমার নেতৃত্বে ১৪ জন ফোর্স নিয়ে সরকারি গাড়িতে করে রংপুর বেরোবির সামনে পার্কের মোড়ে রওনা হই। ৮টা ৪০ মিনিটে সেখানে আমাদের দায়িত্বে থাকা হারাগাছ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) (তদন্ত) নূর আলম ও পুলিশ পরিদর্শক (সশস্ত্র) খোরশেদ আলম স্যারের কাছে হাজির হই। দুপুর ১টার দিকে লালবাগ থেকে ছাত্র-জনতার একটি মিছিল আসে। তাৎক্ষণিক আমাদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে দেন এসি (কোতোয়ালি জোন) আরিফুজ্জামান, এডিসি (ডিবি) মো. শাহ নুর আলম পাটোয়ারী ও তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম।

একই সঙ্গে লালবাগ থেকে আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতাকে আটকে দেন এসি স্যার। একপর্যায়ে ছাত্রদের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। পরে উপস্থিত সব ফোর্সকে হুইসেল, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের নির্দেশ দেন তিনি। আশরাফুল বলেন, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ছাত্র-জনতা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা সিভিল পোশাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে ছাত্র-জনতা আরও উত্তেজিত হয়। এর পর গ্যাসগান ইস্যু করা পুলিশ সদস্যদের গ্যাস ফায়ারের নির্দেশ দেন আরিফুজ্জামান। তার সঙ্গে এডিসি শাহ নুর, তাজহাট থানার ওসি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায় ছিলেন। এসি আরিফুজ্জামান নিজেও গ্যাসগান ফায়ার করেন।

এই সাক্ষী আরও বলেন, গ্যাসগান ফায়ার করলে ছাত্র-জনতা আবার ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরক্ষণে উপস্থিত সব পুলিশ সদস্যকে নিয়ে এক নম্বর গেটের ভেতরে চলে যান এসি স্যার। কিছুক্ষণ পর গেট ধাক্কাধাক্কি করে খুলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে ছাত্র-জনতা। ওই সময় পুলিশ সদস্যদের সামনের দিকে ডেকে শটগান ফায়ার করতে বলেন এসি, ওসি ও এডিসি। তাদের নির্দেশে শটগান ইস্যুকৃত পুলিশ সদস্যরা ফায়ার করতে করতে গেটের বাইরের দিকে যান। এ ছাড়া, এসি আরিফুজ্জামান স্যার ও তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম স্যারের নির্দেশে এএসআই (সশস্ত্র) মো. আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়ও শটগান দিয়ে ফায়ার করেন। তাদের ছোড়া গুলি গিয়ে লাগে রাস্তায় দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ছাত্রের গায়ে। পরে আশপাশের কয়েকজন ছাত্র মিলে গুলিবিদ্ধ ছাত্রকে ধরাধরি করে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নিয়ে যান। এর পরও ছাত্র-জনতার ওপর গ্যাসগান ফায়ার করেন এসি আরিফুজ্জামান স্যার। তিনি বলেন, বেলা ৪টার দিকে এসি আরিফুজ্জামান স্যারের কাছে আমরা জানতে পারলাম রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ছাত্র আবু সাঈদ মারা গেছেন।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এসআই আশরাফুলকে জেরা করেন পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত চার আইনজীবী ও উপস্থিত ছয়জনের আইনজীবী দল। এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মঈনুল করিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা। এ মামলার গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ আসামি। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় তাদের সবাইকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করা হয়। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যসহ ২৪ জন পলাতক রয়েছেন।

চানখাঁরপুলে ছয় হত্যায় তদন্ত কর্মকর্তার আংশিক সাক্ষ্য

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আংশিক সাক্ষ্য দিয়েছেন মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম। গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনাল-১-এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর একক বেঞ্চে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

২৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন কামরুল হাসান। তিনি জব্দ তালিকার সাক্ষী। এর পর ২৬তম সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুলের সাক্ষ্য শুরু হয়। এরই মধ্যে বিভিন্ন তথ্য ট্রাইব্যুনালের সামনে এনেছেন তিনি। সব মিলিয়ে এ মামলায় মোট ২৬ জনের জবানবন্দি নেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য-জেরা শেষ হলেই বাকি থাকবে যুক্তিতর্কের ধাপ। পরে রায়ের তারিখ নির্ধারণ হবে।

প্রসিকিউশন জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছাত্র-জনতার ওপর যে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, এর ফলে ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জন শহীদ হন। এ মামলার গ্রেপ্তার হয়েছেন চার আসামি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু আহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক শহীদ হন।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম