ঢাকা ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
যৌথবাহিনীর অভিযান: এখনও উদ্ধার হয়নি ১৮৮৫টি অস্ত্র ও ৩ লাখ গোলাবারুদ ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে যা বললেন রিজভী সীমান্ত সুরক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধ বিজিবির মূল দায়িত্ব এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সংশোধিত নির্দেশনা সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ গাজীপুর মহানগরীর স্বেচ্ছাসেবক দলকে সু-সংগঠিত করতে রাজপথে হালিম মোল্লা পরিবারের বয়স্কদের যত্ন নেবেন যেভাবে আহতদের খোঁজখবর নিতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা সীতাকুণ্ডে শিপ ইয়ার্ডে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৬ চাঁদাবাজ কমলে নিত্যপণ্যের দাম কমবে: অর্থ উপপদেষ্টা

“সহিংস আন্দোলন বিএনপির অস্তিত্বের জন্য হুমকি”

#

০৯ নভেম্বর, ২০২৩,  4:08 PM

news image

-অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া-


বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা মূলত ক্ষমতাকেন্দ্রিক, অর্থাৎ, ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় যেতে চাওয়াই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণ। বিএনপি সূচনালগ্ন থেকেই ক্ষতমাকে তাদের ধ্যান জ্ঞান মনে করে আসছে। তাদের ক্ষমতা হলে আর অন্য কিছুর প্রয়োজন হয়না। বর্তমানে বিএনপি আন্দলনের নামে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের আন্দোলনে জনগণের আবেগ নেই। জনগণ বিএনপি থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই তাদের আন্দোলনে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জনগনকে পুড়িয়ে মারলে জনগণ পাশে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। বিএনপির সহিংস রাজনীতিতে ফিরে আসা নিয়ে জনমনে নানামুখী প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে যে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছিল, সেই পথেই ফিরতে গিয়ে জামায়াতের সঙ্গে আবারও গাটছড়া বাধলো বিএনপি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পরিণত হলো রক্তাক্ত সহিংসতায়।

২৮ তারিখের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জামায়াতকে সাথে নিয়ে প্রথম থেকেই বিএনপি মারমুখী ছিল। বিএনপিকে যখন নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, ঠিক সেই সময় বিএনপির অনড় অবস্থান দেখে শঙ্কা তৈরি হয়েছিলে যে, বিএনপি এবার সহিংস রূপে আবার ফিরে আসবে। আর এই অপতৎপরতায় নেপথ্যে থেকে সহায়তা দেবে জামায়াত। নয়াপল্টনে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর অবরোধ কর্মসূচির নামে আবারো জ্বালাও পোড়াও ও আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায় আবার প্রমাণ হয়েছে বিএনপি মুখে যতোই না করুক না কেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিলো এবং আছে। ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার পর ও জামায়াত শাপলা চত্বরে সমাবেশের চেষ্টা করে এবং সেদিনের সংঘর্ষে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী দলটির কর্মীদেরও দেখা গেছে। বিএনপি শুধু সন্ত্রাস চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের মাধ্যমে তথ্য-সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। যার মধ্য দিয়ে তাদের চিরাচরিত মিথ্যাচার-অপপপ্রচার ও গুজবের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভুলণ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উগ্র-সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাস বিএনপির রাজনীতির মূল অস্ত্র। এখন তারা তথাকথিত নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের আড়ালে পুনরায় সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা, আর অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি-জামায়াত জোট কার্যত দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। বিএনপিজামায়াতের তথাকথিত আন্দোলনের ভয়ে কিংবা তাদের বিদেশি প্রভুদের ইচ্ছায় বাংলাদেশ চলবে না। বিএনপির আসল উদ্দেশ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন না, তাদের আসল উদ্দেশ্য আগুনসন্ত্রাস-সহিংসতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাতের পথে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে নির্বাচন বানচাল করা এবং অস্বাভাবিক-অসাংবিধানিক সরকার আনা। এবং বিএনপি জামায়াত সম্মিলিতভাবে যে ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ করতে চেষ্টা করছে সেটা জনগণ মেনে নেবে না বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর গত দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে ২৪টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে ১৬টি বাস, দুইটি ট্রাক, একটি করে লরি, সিএনজি, লেগুনা, প্রাইভেট কার ও মিনি ট্রাক রয়েছে। এর আগে ২৮শে অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১৫টি বাস, দুইটি অ্যাম্বুলেন্স ও ২০টি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ৩০শে অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ও পরবর্তী তিন দিনের অবরোধে সারা দেশে ৩৫টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলাও বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্য এক ঘটনা। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ওই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন, আহত হন তিন শতাধিক। ওই হামলাকে বিএনপি-জামায়াত সরকার তখন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। মামলার তদন্তও বিচারে দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াত সরকারের পরিকল্পনায়ই ওই হামলা হয়েছিল। ২০১৩-২০১৪ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিহত করার ডাক দেয়। তখন গানপাউডার, আগুন আর প্রেট্রোল বোমা দিয়ে বাসে হামলা এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

অনেক লোকের প্রাণ যায়। অনেক নিরীহ মানুষ সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। ওই আগুনসন্ত্রাসের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তখন বিএনপি জামায়াতকে দায়ী করে। বিএনপি তখন টানা হরতাল-অবরোধ দেয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৪৫ বছর পরেও বাংলাদেশকে পেছনে টেনে ধরেছে বিএনপি। বিএনপির শাসনামলে উন্নয়ন থেকে বিরত ছিল এবং অন্য সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্তকরাই যেন তাদের মূল কাজ। বিএনপি জ্বালাও পোড়াও নীতিতে বিশ্বাস করে। বিএনপি উন্নয়ন চায়নি কোনোকালেই। বাংলাদেশের অগ্রগতির একমাত্র ধারক ও বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার। বাংলাদেশ যতটুকু এগিয়েছে পুরোটাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কল্যাণে। বিএনপি বাংলাদেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধার নাম। বিএনপির এরকম মারমুখী আন্দোলন তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। কোনো দলের প্রাণ হলো জনগণ, জনগনের জন্যই রাজনৈতিক দল কিন্তু বিএনপি এসবে বিশ্বাস করেনা, এজন্য তাদের সাথে জনগণ নেই। তাদের আন্দোলন মানেই জ্বালাও পোড়াও নীতি। মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় আসাই তাদের আসল লক্ষ্য। এরকম ভাবে সহিংস আন্দোলনে তারা তাদের অস্তিত্ব হারাবেন।

লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
ট্রেজারার
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
সাবেক চেয়ারম্যান
ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম