‘হে আমার বান্দারা’ বলে আল্লাহর বিশেষ সম্বোধন
২৭ নভেম্বর, ২০২৪, 11:11 AM
NL24 News
২৭ নভেম্বর, ২০২৪, 11:11 AM
‘হে আমার বান্দারা’ বলে আল্লাহর বিশেষ সম্বোধন
মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহর সরাসরি সম্বোধন পরম সৌভাগ্য ও আনন্দের। এই আনন্দ যার নসিব হয়েছে সে উভয় জগতের কল্যাণ অর্জন করেছে। কারণ আল্লাহ যখন সম্বোধন করেন ‘ইয়া ইবাদি’ অর্থাৎ হে আমার বান্দারা বলে, তখন মুমিন বান্দার অন্য কিছুর প্রত্যাশা থাকে না। কাজি ইয়াজ (রহ.) কত চমৎকার বলেছেন, ‘আমার গর্ব ও গৌরব কে পরিমাণ করতে পারে? আমি তো ছুরাইয়া তারকাও ভেদ করে উঠে যেতে চাই। কারণ হে প্রভু, তুমি যে আমায় সম্বোধন করেছ ‘ইয়া ইবাদি’ বলে, আর আহমদ (সা.)-কে বানিয়েছ আমার নবী।’ (হিলয়াতুল বাশার : ১/২৩৫)
কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা প্রায় ১৭ জায়গায় বান্দাকে ‘ইয়া ইবাদি’ বলে সম্বোধন করেছেন। এমন সম্বোধনের উদ্দেশ্য হলো, বান্দাকে হয়তো তিনি কখনো কল্যাণের দিকে আহ্বান করেন অথবা অনিষ্টকর কোনো বিষয়ের নিষেধ করেন। যেমন—‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।
অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৫৩)
তা ছাড়া হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ১০ বার ‘ইয়া ইবাদি’ বলে সম্বোধন করে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো—
প্রথম সম্বোধন : ‘হে আমার বান্দারা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না।’ কারণ জুলুম করা আল্লাহর নিকট অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি কাজ।
দ্বিতীয় সম্বোধন : ‘হে আমার বান্দারা, তোমরা সকলেই (সঠিক) পথ ভোলা । আমি যাকে পথ দেখাই সেই শুধু পথ পায়। সুতরাং আমার কাছে পথের দিশা প্রার্থনা করো। আমি তোমাদের পথের দিশা দিব।’
তৃতীয় সম্বোধন : ‘হে আমার বান্দারা, তোমরা সকলেই অন্নহীন, শুধু সেই অন্ন পায় যাকে আমি অন্ন দান করি। সুতরাং আমার কাছে অন্ন চাও, আমি তোমাদের অন্ন দান করব।’
চতুর্থ সম্বোধন : ‘হে আমার বান্দারা, তোমরা সকলেই বস্ত্রহীন। আমি যাকে বস্ত্র দিই, শুধু সেই বস্ত্র পায়। সুতরাং আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদের বস্ত্র দান করব।’
পঞ্চম সম্বোধন : ‘হে আমার বান্দারা, তোমরা তো রাত-দিন ভুল করো। আর আমি সকল অপরাধ ক্ষমা করি। সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করব।’
তাইতো আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দাদেরকে বলে দিন যে আমি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু এবং আমার শাস্তি- সে অতি মর্মন্তুদ শাস্তি!
(সুরা : হিজর, আয়াত : ৪৯-৫০)
ষষ্ঠ সম্বোধন : ‘হে আমার বান্দারা, তোমরা না আমার অপকার সাধনের পর্যায়েই কখনো পৌঁছবে যে আমার কোনো অপকার করবে। আর না উপকার সাধনের পর্যায়ে পৌঁছবে যে কোনো উপকার করবে।’
সপ্তম সম্বোধন : ‘হে আমার বান্দারা, তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের মানুষ ও জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর আমাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়, তোমরা সবাই যদি তার মতো হয়ে যাও তাতে আমার রাজত্ব একটুও বৃদ্ধি পাবে না’।
অষ্টম সম্বোধন : ‘হে আমার বান্দারা, তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের সকল মানুষ ও জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর সবচেয়ে পাপিষ্ঠ তোমরা সবাই যদি তার মতো হয়ে যাও তাতে আমার রাজত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পাবে না।’
নবম সম্বোধন : ‘হে আমার বান্দারা, তোমাদের আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন যদি কোনো বিশাল মাঠে দাঁড়িয়ে সবাই আমার কাছে আবদার করে আর আমি প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা পূরণ করি, তাহলে আমার কাছে যা আছে তাতে এর চেয়ে বেশি হ্রাস পাবে না, যেমন কেউ সমুদ্রে একটি সূচ ডুবিয়ে দিলে যতটুকু তা থেকে হ্রাস পায়।’
দশম সম্বোধন : ‘হে আমার বান্দারা, আমি তোমাদের আমল তোমাদের জন্য সংরক্ষিত রাখি। এরপর পুরোপুরিভাবে তার বিনিময় প্রদান করে থাকি। সুতরাং যে ব্যক্তি কোনো কল্যাণ অর্জন করে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে তা ব্যতীত অন্য কিছু পায়, তবে সে যেন নিজেকেই দোষারোপ করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৬৬)
বিখ্যাত তাবেয়ি আবু ইদ্রিস আলখাওলানি (রহ.) তিনি যখন এই হাদিসটি বর্ণনা করতেন তখন হাঁটুর ওপর দাঁড়িয়ে প্রভুর এই ফরমান বর্ণনা করতেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সম্বোধনের মান রক্ষা করার তাওফিক দান করুন।