২৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো প্রধান শিক্ষক
১৭ নভেম্বর, ২০২১, 10:38 AM
NL24 News
১৭ নভেম্বর, ২০২১, 10:38 AM
২৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো প্রধান শিক্ষক
*মূল কারণ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের ফিডার পূর্ণ না হওয়া
সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয়, দেশের সরকারি হাই স্কুলগুলো ভালো মানের শিক্ষা দিয়ে থাকে। কারণ মানসম্পন্ন শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা তো সেখানেই থাকার কথা! কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে এই ভাবনার মিল পাওয়া কঠিন। এসব বিদ্যালয় এখন চলছে অনেকটাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। অবাক হলেও সত্যি, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২৫টিরই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। সিলেট ও বরিশাল বিভাগে নেই একজনও। পুরো খুলনা বিভাগে প্রধান শিক্ষক মাত্র একজন। তিনি হলেন খুলনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফারহানা নাজ। এ বিভাগের ১০টি জেলার সরকারি হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্যমতে, নতুন জাতীয়করণসহ সারাদেশে মোট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৮৩টি। এর মধ্যে সব স্কুলে এখনও সরকারি পদ সৃষ্টি হয়নি। আবার পদ থাকা বিদ্যালয়গুলোতেও অনেক পদ শূন্য। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে ৩৫১টি প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে। তার মধ্যে ২৬২টিই শূন্য। মাত্র ৮৯ জন প্রধান শিক্ষক নিয়ে চলছে সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বাধ্য হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক অথবা যেখানে সহকারী প্রধান শিক্ষকও নেই সেখানে জ্যেষ্ঠ কোনো শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কেবল প্রধান শিক্ষক নয়, সহকারী প্রধান শিক্ষকেরও বিপুল সংখ্যক পদ ফাঁকা রয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব স্কুলের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আরও কিছু শিক্ষক অবসরে চলে যাবেন। এতে শূন্যপদের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।
জানা গেছে, যে ২৫টি জেলায় কোনো প্রধান শিক্ষক নেই সেগুলো হলো- যশোর, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ী, শেরপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝালকাঠি, নওগাঁ, পিরোজপুর, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালী, মেহেরপুর, ভোলা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক না থাকা বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে প্রশাসনিকসহ নানা কাজকর্মে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় অনেক বিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়েছে নেতৃত্ব সংকট। শিক্ষকদের অনেকেই তাদের মানতে চান না। এ ছাড়া প্রশাসনিক জটিলতা তো রয়েছেই। কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, আগে সরাসরি প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিত মাউশি। ২০০৫ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এ নিয়োগ কার্যক্রম। দীর্ঘ ১৬ বছর এ পদে নিয়োগ না থাকায় ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি ও অন্যান্য কার্যক্রমেও বেড়েছে দুর্নীতি। এ বিষয়ে মাউশির খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক উপপরিচালক এএসএম আব্দুল খালেক বলেন, খুলনা জেলার একটি মাত্র স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকলেও অন্য স্কুলগুলো যে চলছে না এমন নয়। প্রতিটি স্কুলেই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করছেন সহকারী প্রধান শিক্ষকরা। তবে প্রধান শিক্ষক থাকলে প্রতিষ্ঠান অবশ্যই আরও ভালো চলত।
জানা গেছে, এত বেশি সংখ্যায় প্রধান শিক্ষক পদ ফাঁকা থাকার মূল কারণ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের ফিডার পূর্ণ না হওয়া। ফিডার পদ পূর্ণ হতে পাঁচ বছর লাগে। প্রধান শিক্ষক পদে সর্বশেষ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। ফলে সারাদেশে বর্তমানে ৪২১ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকলেও তাদের ফিডার পদ পূর্ণ না হওয়ায় পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। আবার কর্মরত প্রধান শিক্ষকদের কাউকে কাউকে প্রশাসনিক প্রয়োজনে সমমানের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদে পদায়ন করার কারণেও ওই পদ শূন্য হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. ইনছান আলী বলেন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক না থাকলে ওই এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। কারণ, প্রধান শিক্ষক ওই নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের জন্য শুধু নয়, পুরো এলাকারই শিক্ষার নানা কাজে সম্পৃক্ত থাকেন। তিনি ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন তদন্ত কাজ পরিচালনা করেন। বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগে তিনি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, প্রধান শিক্ষক পদের শূন্যতা আমাদের ভোগাচ্ছে। সহকারী প্রধান শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তবে আশার কথা, প্রধান শিক্ষক পদে ফিডার পদের প্রমার্জনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি শেষ হলে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। পদোন্নতি দেওয়া হলে পদ শূন্যতা হ্রাস পাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, সরকারি মাধ্যমিকে প্রধান শিক্ষকদের সংকট আমাদের নজরে এসেছে। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। খুব দ্রুত সময়েই প্রধান শিক্ষক পদ পূরণ করা হবে। তিনি জানান, সহকারী প্রধান শিক্ষকদেরই প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রমার্জনের মাধ্যমে বিশেষভাবে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আর এটা নতুন বছরের শুরুতেই হতে পারে।
২১ জেলায় নেই জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও :কেবল প্রধান শিক্ষক নয়, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও নেই দেশের ২১ জেলায়। জেলাগুলো হলো- ফরিদপুর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, হবিগঞ্জ, জয়পুরহাট, নাটোর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভোলা, জামালপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, বান্দরবান ও রাঙামাটি। জানা গেছে, সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব জেলায় ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। -সূত্র : দৈনিক সমকাল