১৯৭৩ সালের পর ডলারের সবচেয়ে বড় পতন
নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ জুলাই, ২০২৫, 10:46 AM

নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ জুলাই, ২০২৫, 10:46 AM

১৯৭৩ সালের পর ডলারের সবচেয়ে বড় পতন
বিশ্ববাজারে এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ডলারের মান ১০ শতাংশের বেশি কমেছে। এটাকে ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের মুদ্রার বিপরীতে এই পতন বিনিয়োগকারীদের গভীর উদ্বেগে ফেলেছে।
১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণমান থেকে বেরিয়ে আসার পর ডলারের বড় ধরনের দরপতন দেখা দিয়েছিল। তখনকার প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন, তবে সেটাও ছিল বৈশ্বিক অর্থনীতির মোড় ঘোরানো সময়। এবার পতনের নেপথ্যে আছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এককেন্দ্রিক ও আগ্রাসী বৈশ্বিক কৌশল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। বর্ধিত শুল্ক, ঋণের বোঝা ও মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা ডলারের উপর চাপ বাড়িয়েছে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ কমছে, আর সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণের খরচ বেড়েছে।
ডলার দুর্বল হওয়ায় রপ্তানিকারকরা সাময়িক সুবিধা পেলেও আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক বাণিজ্য পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি কিছুটা প্রশমিত হলেও বিনিয়োগকারীদের মনে সেই দুশ্চিন্তা রয়ে গেছে।
এই প্রেক্ষাপটে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্টিভ ইংল্যান্ডার বলেন, ডলার দুর্বল না শক্তিশালী—এটাই মূল প্রশ্ন নয়; আসল প্রশ্ন হলো, বিশ্ব এই অবস্থানকে কীভাবে দেখছে?
ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা তার প্রবৃদ্ধিমুখী অবস্থানের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর ডলারের সূচক শিখরে পৌঁছালেও পরে তা পড়তে শুরু করে। মূল্যস্ফীতির আতঙ্ক, সুদবৃদ্ধির প্রভাব এবং কোম্পানিগুলোর আয় নিয়ে শঙ্কা সেই আস্থাকে নড়বড়ে করে তোলে।
এরপর আসে ২ এপ্রিলের ‘স্বাধীনতা দিবস’ ঘোষণা—যেদিন ট্রাম্প একতরফাভাবে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজার, বন্ড এবং ডলারের ওপর একযোগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শুল্ক আরোপের ফলে আমদানি খরচ বাড়ে, ফলে বিদেশি ব্যবসায়ীরা ডলারের লেনদেন কমিয়ে দেয়। এতে ডলার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার সম্ভাবনা হ্রাস পায়, বিশেষ করে সরকারি বন্ডের বাজারে। এতে করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।
বিশ্বের অনেক বিনিয়োগকারী এখন ডলার এবং মার্কিন সম্পদের বিকল্প খুঁজছে। যেখানে একসময় যুক্তরাষ্ট্র ছিল নিরাপদ বিনিয়োগের গন্তব্য, এখন সেই বিশ্বাসে চিড় ধরেছে।
বছরের শুরুতে ডলারের মান ভালো থাকলেও, সময়ের সঙ্গে তা দুর্বল হয়ে পড়েছে। স্টিভ ইংল্যান্ডার বলেন, এক সময় ধারণা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ব্যতিক্রমী; এখন সেই বিশেষত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আচরণ বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আরও চিড় ধরিয়েছে।
শুল্ক বাড়লে আমদানি কমে, আর এতে ডলারের আন্তর্জাতিক লেনদেন হ্রাস পায়। একদিকে মুদ্রা রূপান্তরের ঝামেলা, অন্যদিকে মার্কিন অর্থনীতির প্রতি আস্থার ঘাটতি—দুটি বিষয় একসাথে ডলারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ডলারের এই দুর্বলতা শেয়ারবাজারের মুনাফার চিত্রকেও ধোঁয়াশায় ফেলেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২৪ শতাংশ বেড়ে নতুন উচ্চতায় গেলেও ইউরোতে হিসাব করলে মুনাফা দাঁড়ায় মাত্র ১৫ শতাংশ—অর্থাৎ সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে ১০ শতাংশ কম।
ফলে বহু মার্কিন বিনিয়োগকারী এখন দেশের বাইরে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ইউরোপের ইউরোস্টক্স ৬০০ সূচক এই সময়কালে ১৫ শতাংশ বাড়লেও ডলারে রূপান্তর করলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ শতাংশে। পেনশন তহবিল ও বিভিন্ন ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বাজারে নতুন সম্ভাবনা খুঁজছে।