১২৪ রানে থামলো বাংলাদেশের ইনিংস
ক্রীড়া প্রতিবেদক
২২ নভেম্বর, ২০২১, 3:54 PM
ক্রীড়া প্রতিবেদক
২২ নভেম্বর, ২০২১, 3:54 PM
১২৪ রানে থামলো বাংলাদেশের ইনিংস
দিন বদলায়, ম্যাচ বদলায়, বদলায় দুই দলের একাদশ; কিন্তু অপরিবর্তিতই থেকে যায় টসের ফল ও প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্র। পরপর তিন ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে অভিন্ন ব্যর্থতার গল্প রচিত হলো নাইম শেখ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যাটে। সিরিজের প্রথম ম্যাচে দলীয় সংগ্রহ গিয়ে ঠেকেছিল ১২৭ রানে। পরের দুই ম্যাচে সেটিও পার করা সম্ভব হয়নি। শনিবার ১০৮ রানের থামার পর আজ (সোমবার) সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১২৪ রান। স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করতে পাকিস্তানের লক্ষ্য ১২৫ রানের।
টানা তৃতীয় ম্যাচে টস জেতার পর আজ বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেছিলেন, অন্তত ১৪০ রান করতে চায় তার দল। কিন্তু তিন পরিবর্তন নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামার পর পরিকল্পনার ধারেকাছেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। নাইম শেখ সর্বোচ্চ ৪৭ রান করলেও খেলেছেন ৫০টি বল। আগের দুই ম্যাচ খেলা ডানহাতি ওপেনার সাইফ হাসানকে বাদ দেওয়ায় আজকের ম্যাচে ইনিংস সূচনা করতে নাইম শেখের সঙ্গে পাঠানো হয় নাজমুল হোসেন শান্তকে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে দারুণ এক স্কয়ার কাটে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
কিন্তু অভিষিক্ত শাহনাওয়াজ দাহানির করা ইয়র্কার লেন্থের পরের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে যান ৫ রান করা শান্ত। তিন নম্বরে পাঠানো হয় শামীমকে, যিনি এই ম্যাচ দিয়েই ফিরেছেন দলে। পাওয়ার প্লে'তে আর বিপদ ঘটতে দেননি শামীম ও নাইম। উইকেটে এসে প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান শামীম। পরে দাহানির করা চতুর্থ ওভারের শেষ দুই বলেও মারেন ব্যাক টু ব্যাক বাউন্ডারি। হারিস রউফের করা পাওয়ার প্লে'র শেষ ওভারেও চারের মার আসে শামীমের ব্যাট থেকে। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর আর উইকেটে টেকা হয়নি শামীমের। লেগস্পিনার উসমান কাদিরের করা অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ইফতিখার আহমেদের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন এ বাঁহাতি তরুণ। আউট হওয়ার তিনি চার চারের মারে করেন ২৩ বলে ২২ রান।
দলীয় ৩৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলায় আরও একবার চাপের মুখে ব্যাটিংয়ে নামতে হয় চার নম্বর ব্যাটার আফিফ হোসেন ধ্রুবকে। অন্যদিকে উইকেটে থাকা বাঁহাতি ওপেনার নাইম তখন খেলছেন ডটের পর ডট। আট ওভার শেষে নাইমের পাশে দেখা যায় ১৬ বলে ৮ রান। ইনিংসের দশম ওভারে প্রথমবারের মতো হাত খোলেন নাইম। উসমানের করা সেই ওভারের দ্বিতীয় বলে মিড উইকেট দিয়ে হাঁকান ছক্কা, এক বল পর কভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করেন তিনি। কিন্তু ইফতিখারের করা পরের ওভার থেকে আসে মাত্র ৩ রান।
তা পুষিয়ে নিতে ফের উসমানের ওপর চড়াও হন আফিফ ও নাইম। সেই ওভারের প্রথম বলটি ছিলো খাটো লেন্থের, সজোরে হাঁকানো সুইপ শটে ছয় রান নেন নাইম। আর ওভারের শেষ বলে হাঁটু গেড়ে করা স্লগ সুইপে নিজের প্রথম ছক্কা হাঁকান আফিফ হোসেন ধ্রুব। উসমানের ওভারে ভালো রান এলেও, দুই বাঁহাতির বিপক্ষে আরও একটি দারুণ ওভার করেন অফস্পিনার ইফতিখার। তার করা ১৩তম ওভারে হয় মাত্র ৫ রান। সবমিলিয়ে চার ওভারে মাত্র ১৩ রান করেন এ স্পিনিং অলরাউন্ডার। দাহানির করা পরের ওভারের প্রথম বলে থার্ডম্যান দিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত চার মারেন নাইম। কিন্তু পরের পাঁচ বলে আসে মাত্র দুই রান।
সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতেই হয়তো উসমান কাদিরের বিপক্ষে বড় শটের চেষ্টায় ছিলেন আফিফ। তবে ব্যাটে-বলে হয়নি। আফিফের ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় শর্ট থার্ড ম্যানে, সহজ ক্যাচ নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। আফিফের ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ২০ রান। আফিফ ফিরে গেলেও, নাইম সেই ওভার থেকে ফায়দা নিতে ভুল করেননি। তৃতীয় বলে দুই রান নেওয়ার পর চতুর্থ বলে কাউ কর্নার দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকান তিনি। উসমানের চার ওভার শেষ হয় ২ উইকেটে ৩৫ রানে। ইনিংসের ১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৮৯ রান।
সেখান শেষ পাঁচ ওভারে যেখানে দ্রুত খেলে রান তোলা ছিল অবশ্য কর্তব্য, সেখানে একের পর এক ডটের ধারাই ধরে রাখেন নাইম ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের ১৬ ও ১৭তম আসে মাত্র ১১ রান। ১৮তম ওভারে গিয়ে ফুরোয় বাউন্ডারির অপেক্ষা। কিন্তু আসে মাত্র ৯ রান। শুরু থেকে টুকটুক করতে থাকা নাইমের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে নয় বল বাকি থাকতে। মোহাম্মদ ওয়াসিমের ফুলটস সীমানা ছাড়া করার বদলে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন তিনি। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরেন ওয়াসিম। নাইমের ব্যাট থেকে দুইটি করে চার-ছয়ের মারে আসে ৫০ বলে ৪৭ রান।
একই ওভারের শেষ বলে আউট হন নুরুল হাসান সোহানও। মুখোমুখি প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর পর থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন তিনি। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর বিদায়ঘণ্টা বাজান হারিস রউফ। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে ১৩ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ বলে রানআউট হন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। তবে এর আগের বলে শেখ মেহেদি হাসানের সৌভাগ্যজনক চারে ১২০ রান পার হয় বাংলদেশের সংগ্রহ। পাকিস্তানের পক্ষে দুইটি করে উইকেট নেন উসমান ও ওয়াসিম। এছাড়া দাহানি ও হারিসের শিকার একটি করে উইকেট।