হাদি হত্যার বিচারে ‘দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের দাবি ইনকিলাব মঞ্চের
নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, 2:02 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, 2:02 PM
হাদি হত্যার বিচারে ‘দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের দাবি ইনকিলাব মঞ্চের
শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য একটি দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পেশাদার তদন্ত সংস্থার সহায়তা নিতে হবে। কোনো তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নয়—আমরা চাই প্রকাশ্য বিচার। আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, শহীদ ওসমান হাদি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাকে আড়াল করা যাবে না। তার হত্যার বিচার করতেই হবে। তিনি বলেন, শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশের জনগণ এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, গতকাল (২১ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে শহীদ ওসমান হাদির নাম বা তার হত্যার বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান আমরা পাইনি। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এই ঘটনাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারা মনে করেছে, এই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়া যাবে। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—বাংলাদেশের জনগণ চুপ করে থাকার জাতি নয়। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব জাবের আরও বলেন, গতকালের বিবৃতিতেই স্পষ্ট—এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আপনাদের (সরকার) কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। কখনো বলেন খুনি ভারতে পালিয়েছে, আবার কখনো বলেন খুনি দেশে রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে—বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাজ কী? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তারা কি শুধু সুবিধা ভোগের জন্য বসে আছে? আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, শহীদ ওসমান হাদি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তার হত্যাকে যদি এভাবে অবহেলা করা হয়, তাহলে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—আমাদের দেওয়া দুই দফা দাবির একটিরও বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো খুনির অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি, এমনকি খুনির ড্রাইভারকেও গ্রেফতার করা হয়নি। কখনো খুনির পরিবার, কখনো সহযোগীদের ধরে এনে বলা হচ্ছে তারা পর্যাপ্ত তথ্য দিতে পারেনি। তাহলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা কোথায়? বাস্তবতা হলো ইনকিলাব মঞ্চ বারবার তথ্য দিয়ে আপনাদের সহযোগিতা করেছে। আমরা না থাকলে আপনারা আজ পর্যন্ত খুনিকে শনাক্তই করতে পারতেন না। তাহলে প্রশ্ন আসে—এই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রাখার প্রয়োজন কী? সব কাজ যদি ইনকিলাব মঞ্চকেই করতে হয়, তাহলে দায়িত্ব আমাদের হাতেই দিয়ে দিন। তিনি বলেন, আমরা দ্বিতীয় যে দাবি জানিয়েছিলাম, সিভিল ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দোসরদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা—সে বিষয়ে আপনারা একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। কোটি কোটি মানুষের দাবিকে এভাবে উপেক্ষা করা চরম দায়িত্বহীনতা। জাবের বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এই সরকারকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নেয়নি। এই সরকার যদি বিচার নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। আইন উপদেষ্টার প্রতি আমরা প্রশ্ন রাখি, দায় এড়িয়ে যাওয়াই কি আপনার একমাত্র দায়িত্ব? জনগণ আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে দায়িত্ব পালনের জন্য, দায় অস্বীকার করার জন্য নয়। কে বাধা দিচ্ছে, কারা এই তদন্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে—সবকিছু স্পষ্ট করে জাতির সামনে বলুন, তারপর পদত্যাগ করুন। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ড. ইউনূসকেও আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—বাংলাদেশের জনগণ আপনাকে প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। জানাজার মাঠে আপনি শহীদ ওসমান হাদির প্রতি সম্মান জানিয়েছেন, কিন্তু একবারের জন্যও বলেননি, এই হত্যার বিচার কীভাবে হবে। আপনার এই নীরবতা আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার—নির্বাচনের আগে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচার ছাড়া কোনো নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আমরা আর রক্ত দিতে চাই না। কিন্তু যদি বিচারহীনতা চলতে থাকে, তাহলে পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে। অতিদ্রুত ওসমান হাদি হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করতে হবে। যদি তারা বিদেশে থাকে, তাহলে আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।