ঢাকা ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
ঈদ ও পূজার ছুটি বাড়ল আশুলিয়ায় পুলিশের অভিযানে ১ ট্রাক পলিথিনসহ ২ জন আটক আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের কর্মবিরতি ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি বিএনপির ৪৬ রানে অলআউট, দেশের মাঠে সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় ভারত মানুষের মাঝে কোনো বৈষম্য থাকবে না: জামায়াত আমির সিরাজগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ সেপ্টেম্বরে সড়কে ঝরেছে ৪৯৮ প্রাণ: যাত্রী কল্যাণ সমিতি শেখ হাসিনা-ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি বিমানবন্দর থেকে শমসের মবিনকে ফেরত

সেপ্টেম্বরে বাড়তে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ আগস্ট, ২০২৪,  10:56 AM

news image

সংকটময় একটি মুহূর্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। সারা দেশের সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়রসহ জনপ্রতিনিধিরা অনুপস্থিত। ফলে মশা নিধনে নেই কার্যকর উদ্যোগ। এদিকে স্বাস্থ্য খাতেও চলছে অস্থিরতা। ফলে রোগী ব্যবস্থাপনায় তৈরি হচ্ছে সংকট। এ ছাড়া ঘটনাবহুল নানা কারণে ডেঙ্গু সংক্রমণ এবং এর প্রভাবের বিষয়টি চাপা পড়ে যাচ্ছে। অথচ নিয়ম করে প্রতিদিন ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর আসছে। গত আট মাসে প্রায় ১২ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে শুধু আগস্টের গত ৩০ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রায় অর্ধেক। এ পর্যন্ত মৃত্যু ৭৯ জনের মধ্যে আগস্টেই হয় ২৩ জনের। আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর দুই মাস ডেঙ্গু পরিস্থিতির বড় ঝুঁকি রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনি উদ্যোগ না নিলে সামনের দুই মাসে আরও বেশি মানুষ মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারে। বাড়তে পারে মৃত্যুও। জনস্বাস্থ্যবিদের ভাষ্যমতে, ডেঙ্গু এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গত জুলাই থেকে দেশ উত্তাল। এরপর সরকার পতনের পর দেশের জনপ্রতিনিধি ও অনেক কর্মকর্তা অনুপস্থিত। এতে ডেঙ্গুর বংশবিস্তার রোধে প্রভাব পড়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও বড় প্রভাব তৈরি হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহজুড়ে সারা দেশে নিয়মিত মশক নিধন, জনসচেতনতা ও চিকিৎসায় জোর না দিলে যে কোনো সময় মশাবাহিত এই রোগটি ভয়াবহতা ছড়াতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ কালবেলাকে বলেন, দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর দুই মাসে সবসময় ডেঙ্গু উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। দেশের সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা সরকার পতনের পর থেকে অনুপস্থিত। গত জুলাই থেকে দেশ উত্তাল। ফলে মশক নিধনে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। এডিস মশার আবাসস্থল ধ্বংস হয়নি। ফলে মশার বিস্তার বেড়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাতও বেড়েছে। এসব বিবেচনায় বলা যাচ্ছে সেপ্টেম্বরে জনস্বাস্থ্যের বড় ঝুঁকি আছে। তিনি বলেন, সরকার পতনের পর স্বাস্থ্য খাতেও অস্থিরতা চলছে। অধিদপ্তরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কর্তারা কর্মস্থলে যাচ্ছেন না। অনেকে অপসারণের পর নতুন কর্মস্থলেও যাচ্ছেন না। এতে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায়ও সংকট তৈরি হচ্ছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয়েও গতি দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পরামর্শ দিয়ে ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, জনপ্রতিনিধিরা পালিয়ে গেলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেসব কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তাদের এই বিষয়ে দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশের জনবহুল এলাকায় ডেঙ্গুর আবাসস্থল ধ্বংস করতে হবে। জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। এসব বিষয়ে মনিটরিং বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরুরি কাজগুলো যেন বন্ধ না থাকে এ জন্য প্রয়োজনে অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের বদলি করে অন্যদের যুক্ত করতে হবে। ঢাকার প্রত্যেক হাসপাতালে পর্যাপ্ত শনাক্তকরণ কীট ও আইভি ফ্লুয়েড সরবরাহ করতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবেও মজুদ বাড়াতে হবে, যাতে কোথাও প্রয়োজন হলে দ্রুত সরবরাহ করা যায়। জনগণকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু দেশ একটি সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে, এখন জনগণকেও নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ছাদ কিংবা টবে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে, যেন মশা বংশবিস্তার করতে না পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, গতকাল শুক্রবার নতুন করে আরও ১৬৩ জনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৯৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ সময় মৃত্যু হয় ৭৯ জনের। মাসের হিসাবমতে, আগস্ট মাসের গত ৩০ দিনে ৬ হাজার ১৭৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। এ সময় মৃত্যু হয় ২৩ জনের। জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ২ হাজার ৬৬৯ জন। মৃত্যু হয় ১২ জনের। জুনে আক্রান্ত হন ৭৯৮ জন। মৃত্যু হয় ৮ জনের। মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬৪৪ জন। এ সময় মৃত্যু হয় ১২ জনের। এপ্রিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৫০৪ জন। মৃত্যু হয় দুজনের। মার্চে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৩১১ জন। এ সময় মৃত্যু হয় পাঁচজনের। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হন ৩৩৯ জন মানুষ। ভাইরাসটিতে এ সময় মৃত্যু হয় তিনজনের এবং জানুয়ারিতে এক হাজার ৫৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। তার মধ্যে মৃত্যু হয় ১৪ জনের। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভাষ্যমতে, সরকার পতন আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মধ্যেও বসে নেই তারা। বন্যা পরিস্থিতি ও সম্প্রতি আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার মধ্যেও ডেঙ্গু মোকাবিলায় জোর দিচ্ছেন তারা। আগামী ২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে মশাবাহিত এই রোগটি মোকাবিলায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন কালবেলাকে বলেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এ দুটি মাস ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির ঝুঁকি রয়েছে। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টিপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি যেহেতু নেই, তাই প্রতিরোধের (প্রিভেনশন) জায়গায় কিছুটা ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, রাজধানীর একটি হাসপাতালকে ডেঙ্গু রোগী ভর্তিতে ডেডিকেটেড করা হবে। সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালে কিছু শয্যাকে ডেডিকেটেড করে আলাদা ইউনিট প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ডেঙ্গু সচেতনতায় প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। সূত্র : কালবেলা 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম