ঢাকা ৩১ জুলাই, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
বিএনপি ক্ষমতার যাওয়ার জন্য অস্থির নয় : মির্জা ফখরুল ‎জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আগামী ৫-৬ দিন সরকারের জন্য খুবই ক্রুশিয়াল টাইম: প্রেস সচিব মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন আরও ৩ জন ফরিদপুরে ইজিবাইকচালককে হত্যা, ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড সরকারি চাকরিজীবীদের বাসা বরাদ্দ নিয়ে জরুরি নির্দেশনা মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, ডিসেম্বরে নির্বাচনের সম্ভাবনা শিবির নেতা সাদিক কায়েম সমন্বয়ক ছিলেন না : নাহিদ ইসলাম তাসকিনের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে নিলেন সেই বন্ধু ৫ কোটি টাকার চেকের সঙ্গে জমির দলিলও নেন রিয়াদ

রাজনগরে প্রবাসী কয়ছর হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচার দাবি করছে পরিবার

#

৩০ জুলাই, ২০২৫,  3:25 PM

news image

বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে

নিজস্ব প্রতিনিধি: "বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে" রাজনগর উপজেলার গয়ঘড় গ্রামে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ কতৃক চাঁদা দাবি করে চাঁদা না পেয়ে অত্র এলাকার একদ়ল সন্ত্রাসী কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে প্রবাসী রেমিটেন্সযোদ্ধা কয়ছর মিয়া (৫৫) কে। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজী-গুম-খুন-অপহরণ-ধর্ষণ আজকাল নিত্য-নৈমিত্রিক ব্যাপার। গোটা দেশে একেবারে রাম রাজত্বে কায়েম হয়ে গেছে। অতীতে যেমন ছিল বর্তমানেও এর ব্যত্রিক্রম নেই। সন্ত্রাস চাঁদাবাজদের কোনো দল থাকে না। যে দল যখন ক্ষমতায় তারা তখন সে দলের। এমনই  দেশের অবস্থা দীর্ঘ তিন যুগ থেকে। কোথায়ও কোনো পরিবর্তনের ছোঁয়া নেই।  কোনো মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই এ দেশে। এ যেন এক মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে দেশটি। আইন শৃঙ্খলার বালাই নেই।

সন্ত্রাস চাঁদাবাজি মাস্তানি, বাড়ি দখল ও বাজার দখলের রাজনীতি কায়েম হয়েছে সর্বত্র। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার উপজেলা সদরের গয়ঘড় নিবাসী মরহুম আব্দুল কুদ্দুস সাহেবের প্রথম পুত্র  কয়ছর মিয়া (৫৫) দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর সৌদি আরবের একটি নামকরা  কোম্পানিতে উচ্চ বেতনে চাকরি করতেন। সৌদি আরবের এলিবেটর কোম্পানি একটি  উন্নতমানের কোম্পানি। তিনি কোম্পানি থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা পেতেন। দেশের বাড়ি অনেক জাগা-জমি দোকান ভিটে করেছেন। তাঁর কাছে বেশ নগদ  টাকা পয়সা ছিল তাই  তিনি ভাবলেন মিডিল ইষ্ট তো আর সিটিজেনসিপ মিলে না।

তাছাড়া নিজের জন্মভূমি ছেড়ে প্রবাসে আর কতদিন থাকবেন তাই শেকড়ের  টানে দেশে চলে আসেন। তার চিন্তা দেশের বাড়িতে ছেলে মেয়েদের পাশে থাকবেন এবং বড় পূঁজি নিয়ে একটি ব্যবসা করবেন। এ চিন্তা মাথায় নিয়ে ব্যবসা করবেন বলে সৌদি আরবের কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দেশে চলে আসেন ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। কয়ছর মিয়ার  বাড়ি উপজেলা সদরের পাশে থাকায় উপজেলা সদরের মৌলভীবাজার কুলাউড়া রোডের গোবিন্দবাটি বাজার একটি নিজস্ব ভিটে ক্রয় করে সেখানেই একটি ভ্যারাইটিজ দোকান খুলেন। দোকানের নাম ছিল "কয়ছর ভ্যারাইটিজ স্টোর" দোকানে প্রায় ৩০/৪০ লক্ষ টাকার মালামাল তুলেছিলেন। এই  ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেই সন্ত্রাসীদের হাতে তার জীবনটাই দিতে হয়েছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে কয়ছর মিয়া সৌদি আরব থেকে পাকা ঘরবাড়ি দোকানকোটা অনেক জায়গাজমির মালিক হয়ে যান। তার কাছে অনেক নগদ টাকাও ছিল তাই সে প্রবাস থাকাকালেই অত্র এলাকার এক প্রভাবশালী তৎকালীন ক্ষমতাসীন সন্ত্রাসী চক্রের নজর পড়ে তার উপর। তিনি দেশে আসলেই তার কাছে গিয়ে ঐ সন্ত্রাসী চক্র নানা অজুহাতে চাঁদা দাবি করতো। তিনি তার সাধ্যমতো তাদেরকে চাঁদা দিতে বাধ্য থাকতেন। কারণ ঐ সন্ত্রাসী চক্র এতো শক্তিশালী যে স্হানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের হাতে পুতুলের মতো ছিল কারণ তারা একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের শীর্যস্থানে অবস্থান করছিল। সেই দলে জেলা এমনকি কেন্দ্রীয় সংসদের নেতারাও তাদের পরিচিত লোক। ঐ সন্ত্রাসী লোকগুলো তাদের ভোট ব্যাংক তাই তাদের কথা মানতেই হতো।

কয়ছর মিয়া যখন দেশে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে বসেন তখন ঐ সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ চক্র তার কাছে গিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে বসে। তিনি তাদেরকে বলেন এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই তার শেষ ভরসা। তার কাছে এতো টাকা নেই সে তাদেরকে ২ লক্ষ টাকা দেবে বলে জানায়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে ৩০ লক্ষ টাকা তাদেরকে না দিলে তাকে প্রাণে হত্যা করবে। তিনি এ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে বলে তবে তুমি মৃত্যুের জন্য প্রস্তুত থাকো।

তাদের প্রাণনাশের হুমকির এক সপ্তাহ পর ২০১০ সালে ২৬ মার্চ রাতে অনুমানিক ১২ টার দিকে তার দোকান গোবিন্দবাটীর কয়ছর ভ্যারাইটিজ স্টোর থেকে বের হয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভাঙ্গারহাট রাস্তার বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আছকান মিয়ার বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গায় গেলে পুর্ব থেকে উৎপেতে থাকা ঐ সন্ত্রাসী চক্র তার উপর রামদা হকিস্টিক চায়নিজ কুড়াল দিয়ে উপর্যোপরি কুপিয়ে ঘটনাস্হলেই তাকে খুন করে সাথে থাকা নগদ লক্ষাধিক টাকা হাতে থাকা গড়ি ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। পরের দিন সকাল কয়ছর মিয়ার মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন এলাকার লোকজন। চাঞ্চল্যকর কয়ছর মিয়া হত্যাকান্ডের পর ঐ চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তার ছেলে শামীম আহমেদ (২৫)।

তিনি থানায় মামলা করতে চাইলে প্রভাবশালী এই সন্ত্রাসী চক্রের চাপে মামলা নিতে থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অস্বীকার করেন। ক্ষমতাসীন দলের  অনেক নেতা নেত্রীর  কাছে ধরণা দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। তারপর সে কোর্টে গিয়ে মামলা টুকলে তদন্ত আসে থানায়, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটা মিথ্যা সাজানো মামলা বলে রিপোর্ট দেয়। ফলে কয়ছর মিয়ার খুনের বিচার পায়নি তার পরিবার। কয়ছর মিয়াকে যে রাতে খুন করা হয় সেই রাতে একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী গোবিন্দবাটী বাজারের চকিদারকে বেঁধে কয়ছর মিয়ার দোকানের সকল মালামাল একটি ট্রাক এনে নিয়ে যায়।

ধারণা করা হচ্ছে কয়ছর মিয়ার হত্যাকারীরাই এ লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। কয়ছর মিয়ার ছেলে শামীম বলেন, আমি  যখন আমার  পিতার হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে আদালত পাড়া ঘুরছিলাম তখন প্রতিনিয়তই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি আমাকে এ মামলা থেকে সরে না আসলে প্রাণ নাশের হুমকি দিতো তারপরও আমার  বাবার হত্যাকান্ডের বিচারের আশায় প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেও বিচারের বাণী নিভৃতে থেকে গেল। কয়ছর মিয়ার ছেলে শামীম বলেন, পাঁচ আগস্টের পর দেশের পটপরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান সরকার একটি অন্তরবর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের আমলে আইন শৃঙ্খলার যথেষ্ট  উন্নতি হয়েছে।

এখন আর সন্ত্রাসীদের কথায় পুলিশ তেমন একটা উটবস করে না। তাই এই সরকারের আইন উপদেষ্টা ও প্রশাসনের ঊর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে আমার বাবা কয়ছর মিয়া খুনের সঠিক তদন্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসেন। সন্ত্রাসীদের বিচার করে আমার বাবার প্রকৃত হত্যাকারীদের শাস্তি দিতে প্রশাসনের ঊর্ধতন কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি  কামনা করছি। শামীম আরও বলেন, এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও এ খুনিরা প্রশাসনের ডগার উপর দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন কিছুই করছে না। ওরা শুধু আমার বাবাকে হত্যা করেনি। আরো অনেক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কিন্তু প্রশাসন তাদের কিছুই করছে না। আসলে তাদের খুঁটির জোর কোথায় যে এই সন্ত্রাসী সকল সময় বহাল তবিয়তে থাকে? শামীম প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার বাবার হত্যাকান্ডের সুবিচার দাবি করছে।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম