ঢাকা ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
নওগাঁ সীমান্তে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল বিএসএফ ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান গ্রেফতার দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের আর্জেন্টিনা থেকে এলো ৫০ হাজার টন গম উপদেষ্টা পরিষদে শেখ হাসিনার দোসররা আছে, বলার পরও বাদ দেয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন আসামিদের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ফেরানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সড়ক বিভাজনে থাকা অসুস্থ বৃদ্ধের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইউএনও দিচ্ছেন চিকিৎসাসেবা বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হাতে পেলেন প্রধান উপদেষ্টা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিল শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া

যেভাবে কেনা হয়েছিল টিউলিপের লন্ডনের সেই ফ্ল্যাট

#

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৩ জানুয়ারি, ২০২৫,  11:23 AM

news image

দ্য সানডে টাইমসের প্রতিবেদন

লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যবহার করা বিতর্কিত সেই ফ্ল্যাট নিয়ে এবার প্রকাশ্যে এল আরও নতুন তথ্য। জানা গেছে, লন্ডন শহরের হ্যাম্পস্টিড এলাকার ওই ফ্ল্যাটটি কেনা হয়েছিল পেডরক ভেঞ্চারস নামে একটি কোম্পানির মাধ্যমে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের দু’জন ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এরপর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কোম্পানিটি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে নিবন্ধিত

২০০০ সালে ২ লাখ ৪৩ হাজার পাউন্ড দিয়ে পেডরক ভেঞ্চারস ফ্ল্যাটটি কেনে। ২০১৬ সালে ফাঁস হওয়া পানামা পেপারস এবং ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) সরবরাহ করা নথিতে দেখা যায়, হারবার্টন এস এ নামে একটি অফশোর কোম্পানি পেডরক ভেঞ্চারস কিনে নেয়। এরপর পেডরক ভেঞ্চারস বন্ধ হয়ে যায়।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পেডরক ভেঞ্চারস প্রতিষ্ঠানটির মালিক দু’জন। তারা হলেন- নাসিম আলী ও মাসুদ আলী নামের দুই বাংলাদেশি। ১৯৮৩ সালে ঢাকায় নিবন্ধিত শ্যামলিমা লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির যৌথ মালিক তারা। বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, এমন বিদেশি জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলোকে লোকবল সরবরাহ ছাড়া আরও বেশ কিছু সেবা দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠান। শ্যামলিমা লিমিটেডের পরিচয় দিতে গিয়ে একে ‘বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ‘দীর্ঘ অভিজ্ঞতা’। 

পাশাপাশি এও বলা হয়েছে যে তাদের ‘প্রকল্পে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মীর কাছ থেকে ঘনিষ্ঠ ও পূর্ণ সহযোগিতা’ সমর্থন পাওয়া যায়, যা এ কাজে ‘বড় ধরনের সাহায্য’ করে থাকে। তাদের গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে শেভরন, শেল ও চীনের রাষ্ট্রমালিকানাধীন একাধিক তেল কোম্পানি। এই দুই ব্যক্তির এলএনজি ও সৌরশক্তির পৃথক ব্যবসাও রয়েছে।

১৯৭০ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান নাসিম আলী (৭০)। সেখানে বিয়ে করেন তিনি। তার স্ত্রী একজন শিল্পী। তাদের সন্তানেরা উত্তর লন্ডনের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। তিনি মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা নথিতে বলা হয়, তার ভাই অর্থাৎ মাসুদ আলী যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ব্যবসায়ের অংশীদার শহীদ ইনাম চৌধুরীর সঙ্গে মিলে তারা শুধু পেডরক বা হারবার্টন এস এ নয়, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে আরও একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এর মধ্যে একটি শ্যামলিমা লিমিটেড।

২০০৫ সালের জানুয়ারিতে এসে নাসিম আলী ও মাসুদ আলী হারবার্টন এস এ বন্ধ করে দিতে বলেন। এর ২৪ ঘণ্টার কম সময় পরে হ্যাম্পস্টিডের সেই ফ্ল্যাটের মালিকানা মঈন গনি নামের এক ব্যক্তিকে উপহার হিসেবে হস্তান্তর করা হয়। মঈন গনি একজন বাংলাদেশি আইনজীবী (ব্যারিস্টার)। সেই সময় তার বয়স ছিল ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। পরে তিনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছবিও আছে। আন্তর্জাতিক একটি প্যানেলে ভূমিকা রাখতে শেখ হাসিনাই তাকে বলেছিলেন উল্লেখ করে মঈন গনি লিখেছিলেন, এটা তার জন্য অত্যন্ত সম্মানের বিষয়।

সূত্র জানিয়েছে, মঈন গনির বাবা–মায়ের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তারা একবার একটা রেস্তোরাঁ দিয়েছিলেন, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রায়ই যেতেন। এসব বিষয়ে বক্তব্যের জন্য নাসিম আলী ও মাসুদ আলী এবং মঈন গনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেননি।

২০০৯ সালের মার্চে সেই ফ্ল্যাট টিউলিপের বোন আজমিনাকে উপহার দেন মঈন গনি। আজমিনার বয়স তখন ১৮ বছর। সে সময় তার কোনও আয়রোজগার ছিল না। অনেক বছর এই ফ্ল্যাটের সঙ্গে নাসিম আলীর কোনও সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তবে আজমিনা সিদ্দিককে ফ্ল্যাটটি হস্তান্তরের সময় ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিতে নাসিম আলী যে স্বাক্ষর করেছিলেন, তার সঙ্গে পানামা পেপার্সে থাকা স্বাক্ষরের মিল রয়েছে।

টিউলিপ সিদ্দিক বেশ কয়েক বছর ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। ২০১২ ও ২০১৪ সালে নিজের ঠিকানা হিসেবে তিনি এই ফ্ল্যাটের উল্লেখ করেছিলেন। টিউলিপের স্বামী ক্রিশ্চিয়ান পারসিও ২০১৬ সালে তার ঠিকানা হিসেবে ওই ফ্ল্যাটের উল্লেখ করেন। এর এক বছর পর যুক্তরাজ্যের এমপি নির্বাচিত হন টিউলিপ। পরে এই ফ্ল্যাট ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি করেন তার বোন আজমিনা সিদ্দিক। সূত্র: দ্য সানডে টাইমস

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম