বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে টেলিটক, বিটিসিএল ও টেশিস
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, 12:25 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, 12:25 PM
বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে টেলিটক, বিটিসিএল ও টেশিস
বছরের পর পর লোকসান গোনার কারণে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে টেলিটক, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এবং টেলিফোন শিল্প সংস্থাকে (টেশিস)। এ তিন প্রতিষ্ঠানকে অবশ্য আগামী ৩০ জুনের মধ্যে লাভে ফিরতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তবে, লোকসান চক্রে পড়ে যাওয়া শিল্পগুলোকে বাঁচানোর জন্য বেসরকারিকরণই এই মূহুর্তে সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় বলে মনে করছে সরকার। সাশ্রয়ী প্যাকেজ দিয়ে গ্রাহকদের মাঝে সাড়া ফেলে ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা টেলিটক। অপারেটর হিসেবে সরকারি এ কোম্পানিই প্রথম দেশে থ্রিজি ও ফাইভ-জি সেবা চালু করে। টেলিটক ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র বলছে, সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা টেলিটক গত ২০ বছরে লোকসান গুনেছে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। তরঙ্গ ও লাইসেন্স ফি বাবদ প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১ হাজার ৮৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা পাওনা বিটিআরসির।
এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে টেলিটকের মোট ব্যয় ছিল ৭৪৯ কোটি টাকা এবং তারা লোকসান গুনেছে ২৪৭ কোটি টাকা। বিটিসিএলের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরের আগে টানা ১৫ বছর লোকসান গুনেছে বিটিসিএল। লোকসানের ধারা এখনো অব্যাহত আছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের মোট ব্যয় প্রায় ৮৮৮ কোটি টাকা এবং তাদের লোকসান হয় ১৪৬ কোটি টাকা। বর্তমানে গ্রাহকদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির মোট পাওনার পরিমাণ ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এগুলো আদায় নাও হতে পারে। বর্তমানে বিটিসিএলের কাছে আয়ের অংশ ও বিভিন্ন ফি বাবদ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা পায় বিটিআরসিও। এ ব্যাপারে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎসে কোনো লাভ নেই; শুধু লোকসান রয়েছে। সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ১৯৭৩ সালে গাজীপুরের টঙ্গীতে ১৪ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠে টেলিফোন শিল্প সংস্থা। এখানে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যৌথভাবে প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন করে সিমেন্স। এর মধ্যে ২০০৪ সালে বড় অংকের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসে স্যামসাং। তবে টেশিসের অব্যবস্থাপনা ও কমিশন বাণিজ্যের কারণে দুটি ব্র্যান্ডই চলে গেছে। এমনকি সম্প্রতি টেশিস পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তাদের প্রতারণার শিকার হোন খোদ প্রতিমন্ত্রী। টেশিসের অব্যবস্থাপনা নিয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, টেশিসে নজরদারি ও জবাবদিহিতা ছিল না। তারপরেই ধীরে ধীরে টেশিসের লাভ কমতে থাকে এবং তারা এফডিআর ভেঙে ভেঙে বেতন খাওয়া শুরু করে। অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে লোকসানে পড়া কোনও প্রতিষ্ঠানে আর বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না সরকার। সেজন্য টেলিটক, বিটিসিএল ও টেশিসকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানালেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, টেলিটক, বিটিসিএল ও টেশিস- এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের ভ্যালুয়েশন করতে হবে। এ বিষয়টি আগামী বোর্ড মিটিংয়ে উত্থাপনের জন্য আমি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছি। এই কোম্পানিগুলোকে লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত করার জন্য আমরা একদিকে দেশীয় বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাই; পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও।