বুয়েটের সেই শিক্ষকের ব্যাংক হিসাবে ১০ কোটি টাকা লেনদেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ নভেম্বর, ২০২১, 10:54 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ নভেম্বর, ২০২১, 10:54 AM
বুয়েটের সেই শিক্ষকের ব্যাংক হিসাবে ১০ কোটি টাকা লেনদেন
রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের তদন্তে নাম আসা বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. নিখিল রঞ্জন ধরের ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য মিলেছে। ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত গত ৮ বছরে তার একাধিক ব্যাংক হিসাবে অন্তত ১০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যা সন্দেহজনক মনে করছেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে এসব হিসাব খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া তার ঘনিষ্ঠ স্বজনদেরও ব্যাংক হিসাবের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বড় অঙ্কের লেনদেনের পাশাপাশি গত তিন বছরে ওই শিক্ষক প্রায় দুই কোটি টাকার সঞ্চয়পত্রও কিনেছেন বলে তথ্য রয়েছে। সব বিষয়েই তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ আসার পর ওই শিক্ষককে গত রোববার আইপিই বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ঘটনা তদন্তে বুয়েট কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে। পাশাপাশি তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে নজরদারি করছে। গত ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বে ছিল আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এইউএসটি)। তবে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর ডিবি পুলিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর সত্যতা মিললে ওই পরীক্ষা বাতিল করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের একজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে জানান, আশুলিয়ায় তাদের ছাপাখানায় প্রশ্নপত্র ছাপার পর দুই সেটের দুটি প্রশ্ন নিয়ে নিতেন অধ্যাপক নিখিল। এরপরই তার নামটি সামনে আসে। এখন তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য বের হওয়ায় প্রশ্ন ফাঁসে তার সম্পৃক্ততার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হলো। বুয়েটের পাশাপাশি এইউএসটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর। এই সূত্রেই তিনি প্রশ্নপত্র ছাপার প্রেসে ছিলেন। যদিও কাগজপত্রে পরীক্ষা কমিটির তিনি কেউ নন। ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সোমবার অধ্যাপক ড. নিখিল রঞ্জন ধর বলেন, 'আমার ১০ কোটি টাকা তো নেই। আমি ১৯৮৬ সাল থেকে বুয়েটে শিক্ষকতা করি। স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশ গিয়েছি। বুয়েটের পাশাপাশি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করি, নানা পরীক্ষা কমিটিতে দায়িত্ব পালন করি। এসব কারণে হয়তো এত টাকার লেনদেন হয়ে থাকতে পারে। আমার সবকিছু পরিষ্কার।'
সঞ্চয়পত্র কেনার বিষয়ে বলেন, নানা বৈধ পথেই তার আয় হয়। সেই আয় দিয়েই সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। পাশাপাশি পারিবারিকভাবে মাছের ঘেরসহ কিছু ব্যবসাও আছে। এসব খাত থেকেও টাকা আসে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃকক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে দায়িত্ব দেওয়ায় তিনি প্রেসে যান এবং কাজগুলো তদারকি করেন। তার সঙ্গে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক, শিক্ষকসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা ছিলেন। ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর নিয়োগ পরীক্ষা কমিটিতে ছিলেন না। তবে তিনি প্রশ্ন ছাপার দিন সকাল থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত আশুলিয়াতে প্রেসে অবস্থান করতেন। প্রশ্ন ছাপা শেষ হলে ফেরার সময় দুই কপি প্রশ্ন তিনি ব্যাগে ভরে নিয়ে আসতেন। আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন দেলোয়ার তার ব্যাগে সেই প্রশ্ন ঢুকিয়ে দিতেন। সূত্র : দৈনিক সমকাল