ঢাকা ১১ জুলাই, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
ডেঙ্গুতে আরও দুজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৩৭ তিন খাতে বরাদ্দ বন্ধ করে দিল সরকার বন্যাদুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, বন্ধ মোবাইল নেটওয়ার্ক মাদরাসা বোর্ডে কমেছে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাসের হারে শীর্ষে রাজশাহী, পিছিয়ে বরিশাল এসএসসিতে এবার প্রকৃত পাসের হার পাওয়া গেছে: এহসানুল কবীর এসএসসির ফল প্রকাশ: ১৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাস করেনি কেউ এসএসসি ও সমমানে পাসের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ স্ত্রীকে খুন করে ১১ টুকরো করে গ্রিল কেটে পালালেন স্বামী ১৫ বছরের লুটপাট তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সাবেক গভর্নরের নথি তলব

বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে এলো যাত্রাবাড়ীতে পুলিশি হত্যাকাণ্ডের চিত্র

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৯ জুলাই, ২০২৫,  11:47 AM

news image

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হন। বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশি হত্যাকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বুধবার (৯ জুলাই) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। বিবিসি আই জানিয়েছে, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন। এটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতার একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পরে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে টানা ৩৬ দিন ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। বিবিসি জানিয়েছে, গত বছর সরকারবিরোধী বিক্ষোভের শেষ দিনের ভয়াবহ এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে তখনকার শত শত ভিডিও, ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এরপর সেগুলো বিশ্লেষণের পাশাপাশি ঘটনাস্থলগুলো কয়েকবার পরিদর্শন করেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে এর আগে নানা খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে নির্বিচারে হত্যার ঘটনাটি কীভাবে শুরু ও শেষ হয়েছিল এবং এতে হতাহতের বিষয়ে নতুন তথ্য দিয়েছে বিবিসি।

এ অনুসন্ধানে এমন কিছু তথ্য ও বিবরণ উঠে এসেছে, যা আগে সেভাবে সামনে আসেনি। বাংলাদেশ পুলিশের একজন মুখপাত্র ঘটনা স্বীকার করে বিবিসিকে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তৎকালীন পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে অপেশাদার আচরণ করেছিলেন। যেভাবে শুরু হয় হত্যাকাণ্ড বিবিসির হাতে আসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিওতে দেখা যায়, ৫ আগস্ট দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে যাত্রাবাড়ী থানার মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভকারীদের অবস্থানের সময় হঠাৎ সেনা সদস্যরা সরে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই থানার ভেতর থেকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দিকে নির্বিচারে গুলি চালানো শুরু করে। মোবাইলে ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন আন্দোলনকারী মিরাজ হোসেন, যিনি গুলিতে নিহত হন। পরে তার পরিবার ফোনটি থেকে ভিডিওটি উদ্ধার করে সাংবাদিকদের দেন। ভিডিওতে মিরাজের মৃত্যুর মর্মস্পর্শী মুহূর্তও ধরা পড়ে। একাধিক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, গুলি শুরু হওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা প্রাণ বাঁচাতে গলির ভেতরে পালিয়ে যাচ্ছেন, আর আহতদের পিটাচ্ছে ও লাথি দিচ্ছে পুলিশ। ভাইরাল ভিডিও নিয়ে বিভ্রান্তি গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভাইরাল ভিডিও আগে ৫ আগস্টের বলে দাবি করা হলেও বিবিসির অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, সেটি ৪ আগস্টের। ওইদিনও পুলিশের হামলা হয়েছিল; কিন্তু মূল হত্যাযজ্ঞ ঘটে ৫ আগস্ট। ভিডিওর গাড়ির রং, অবস্থান ও সেই সময়ের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি।

কতক্ষণ চলেছিল গুলি?

বিবিসির অনুসন্ধানে জানা যায়, বিকেল ৩টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত থানা প্রাঙ্গণ ও সড়কে গুলি চলছিল। প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিক্ষোভকারীদের ওপর চলে গুলি। ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে নিহত ও আহতদের দেহ, আন্দোলনকারীরা রিকশা-ভ্যানে আহতদের সরিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগ অভিমুখে চলে যান। বিক্ষুব্ধদের আরেক অংশ যাত্রাবাড়ী থানায় আগুন ধরিয়ে দেন, যাতে ছয় পুলিশ নিহত হন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা ৫ আগস্টের ঘটনায় তৎকালীন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসানসহ পুলিশের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, পুলিশ এরই মধ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করেছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় সেনা সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে জানতে চেয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি। মোট নিহত কতজন? প্রাথমিকভাবে নিহতের সংখ্যা ৩০ জন বলা হলেও বিবিসি নিহতের পরিবার, হাসপাতালের নথি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে নিশ্চিত হয়েছে যে, অন্তত ৫২ জন বিক্ষোভকারী সেদিন নিহত হয়েছেন। আহতদের অনেকেই এখনো হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম