ঢাকা ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
ফাঁড়ির বাথরুমে মিলল নিখোঁজ কনস্টেবলের ঝুলন্ত মরদেহ টঙ্গীতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সরকারি চাকরিজীবী নিহত খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রার তারিখ আরও পেছাচ্ছে শীতে কাঁপছে উত্তরের জেলা রাজধানীতে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, এক পরিবারের দগ্ধ ৬ বাজারে বাড়তি চাহিদার মধ্যেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জবির প্রথমবর্ষের ভর্তি আবেদন শেষ, আসনপ্রতি লড়াই করবেন ৭১ শিক্ষার্থী সুদানে আরএসএফের ড্রোন হামলায় ৭৯ বেসামরিক নিহত, শিশু ৪৩ ভারতে সবচেয়ে বড় পরমাণু স্থাপনা বানাচ্ছে রাশিয়া ইসরায়েলকে সতর্ক করল জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী

বাজারে বাড়তি চাহিদার মধ্যেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫,  10:52 AM

news image

আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে দেশে আমদানি চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। রমজানকেন্দ্রিক ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের অগ্রিম আমদানির চাপ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের জোর চাহিদা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে আবার ডলার কেনা শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, মাত্র এক সপ্তাহে দুটি অকশনে ১৮৬ মিলিয়ন (১৮.৬০ কোটি) ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তঃব্যাংক গড় দামের চেয়েও বেশি দামে এই ডলার কেনা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দাম ধরে রাখতে ডলার কেনা হচ্ছে। তবে দেশের আমদানিকারকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত ডলার কেনা বাজারে ভিন্ন ধরনের বার্তা দিচ্ছে। তাদের দাবি, বাজারে ডলারের চাহিদা এমনিতেই বাড়তি; তার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনে নিলে বাজারে সরবরাহ কমে যায় এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়ে ডলারের দামে। ফলে আমদানি খরচ বাড়ে, যা শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি চাপে প্রভাব ফেলে।

আইএমএফের ঋণচুক্তির শর্তপূরণের অংশ হিসেবে গত মে মাসে ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হার পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকে ব্যাংকগুলো চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দাম বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হলো আমদানি ঋণপত্র বা এলসি খোলার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া। দীর্ঘ সময় ধরে ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে যে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল, তা কিছুটা শিথিল হওয়ায় এবং আসন্ন রমজান সামনে রেখে অত্যাবশ্যকীয় বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এর মধ্যেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কেনা অব্যাহত রেখেছে। আমদানিকারকদের অভিযোগ, বাজার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ডলার কেনায় তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। কারণ এতে ডলারের দাম না কমে উল্টো ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।

চট্টগ্রামভিত্তিক শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, রমজানের আগে ডলারের চাহিদা বাড়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি একই সময়ে বাজার থেকে ডলার কেনে, তা হলে আমাদের ওপর চাপ আরও বাড়ে। কারণ তখন ব্যাংকগুলো ডলারের দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। এমনিতেই বছরের শেষ দিকে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত মুনাফা করতে ডলারের দাম বাড়ানো শুরু করে। এতে আমদানির খরচ বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আমদানিকারকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই নীতিনির্ধারক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও সতর্ক ও সমন্বিত ভূমিকা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান আমাদের সময়কে বলেন, আমরা ডলারের দামে কৃত্রিম হস্তক্ষেপ করছি না। বরং বাজারে যাদের কাছে অতিরিক্ত ডলার আছে, নিলামের মাধ্যমে কেবল তাদের থেকেই ডলার কেনা হচ্ছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয় উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। এতে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। তাই বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ডলার কেনা হচ্ছে।

নিয়মিত ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক : রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় দাম ধরে রাখতে গত জুলাই থেকে নিয়মিত ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের এখন পর্যন্ত মোট ২২৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে আরও ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার কেনা হয়। প্রতি ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ১২২ টাকা ২৯ পয়সা। এদিন আন্তঃব্যাংকে ডলারের গড় দাম ছিল ১২২ টাকা ২৭ পয়সা। অন্যদিকে গত রবিবার কেনা হয় ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ওই দিন প্রতি ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ১২২ টাকা ২৫ পয়সা। এর আগে গত ৯ অক্টোবর ১০ কোটি ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ দুই মাসেরও কম সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রয়মূল্যের ব্যবধান বেড়েছে প্রায় ৪৯ পয়সা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বাড়তি দাম বাজারে ডলারের দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী করেছে বলে জানান আমদানিকারকরা।

রোজা সামনে রেখে বাড়ছে আমদানি এলসি : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নভেম্বর মাসে বিভিন্ন পণ্যের ৫৫৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। একই মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৮৬ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। সব মিলে চলতি অর্থছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এলসি খোলা হয় ২ হাজার ৯৪১ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তবে প্রথম পাঁচ মাসের হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ৭৪ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ কম। এ সময়ে বিভিন্ন পণ্যের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ৭১৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। সূত্র : আমাদের সময় 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম