
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৯ জুলাই, ২০২৫, 10:44 AM

ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: শীর্ষ দুই ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা
ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েলভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় দুই মানবাধিকার সংস্থা—বতসেলেম ও ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস। সোমবার প্রকাশিত এক যৌথ প্রতিবেদনে সংস্থা দুটি উল্লেখ করেছে, দেশটির পশ্চিমা মিত্রদের ইসরায়েলকে থামানো নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় বেসামরিক লোকজনের পরিচয় ফিলিস্তিনি হওয়ার কারণেই কেবল তাদের নিশানা করছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনি সমাজে মারাত্মক—কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতিও হচ্ছে ইসরায়েলি হামলার কারণে। গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে নৃশংসতা চালাচ্ছে ইসরাইল। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি সংস্থা একে গণহত্যা বলে বর্ণনা করেছে।
এবার ইসরাইলের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুটি মানবাধিকার সংস্থা এ প্রতিবেদন দেওয়ার পর দেশটির ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বিস্তারিত বর্ণনাও তুলে ধরা হয়েছে- গাজায় ইসরাইলের অপরাধের। এর মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার নারী, শিশু ও বৃদ্ধ ফিলিস্তিনিকে হত্যা; গণহারে বাস্তুচ্যুত করা এবং মানুষকে অনাহারে রাখা। এ ছাড়া ইসরাইলের হামলায় ঘরবাড়িসহ বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংসের ফলে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। বতসেলেমের পরিচালক ইউলি নোভাক বলেন, ‘আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা স্পষ্ট—একটি গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।’ জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সবাইকে নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে হবে—
গণহত্যার মুখে আপনি কী করবেন?’ ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক গায় শালেভ বলেন, গণহত্যাবিষয়ক কনভেনশনের ২(সি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুধু স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চালানো ধ্বংসযজ্ঞই এই ‘যুদ্ধকে’ গণহত্যায় পরিণত করেছে। কোনো কিছুকে গণহত্যা বলার জন্য সনদের পাঁচটি অনুচ্ছেদের—সবকটি পূরণ করার প্রয়োজন নেই। দুটি মানবাধিকার সংস্থাই নিজেদের প্রতিবেদনে বলেছে, ইসরাইলের পশ্চিমা মিত্ররা সহায়তা করেছে দেশটির গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে। তারাও যৌথভাবে দায়ী গাজায় মানুষের দুর্ভোগের জন্য। এদিকে, ইসরায়েলের টানা অবরোধের ফলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে বলে সোমবার (২৮ জুলাই) জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে নতুন করে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে দুজন শিশু ক্ষুধায় মারা গেছে। এ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অনাহারে মারা যাওয়াদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৭ জনে, যার মধ্যে ৮৮ জনই শিশু।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, আল জাজিরা।