ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তা চায় বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ আগস্ট, ২০২৩, 11:36 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ আগস্ট, ২০২৩, 11:36 AM
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তা চায় বাংলাদেশ
দেশে ক্রমেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। দেখা দিয়েছে মহামারির শঙ্কা। এমতাবস্থায় ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ এবং এডিস মশার বিস্তার রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সভাকক্ষে এক জরুরি বৈঠকে এ সহযোগিতা চাওয়া হয়।বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণের শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, “ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি পর্যায়ে যাওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ করে, ডেঙ্গুর টিকার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। টেকনিক্যাল ও লজিস্টিকস সাপোর্ট, র্যাপিড টেস্টের কিট সরবরাহসহ বেশ কিছু বিষয় এক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি ড. বর্ধন জং রানা সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। রোগ নিয়ন্ত্রণের শাখার এই পরিচালক বলেন, বিশ্বের শতাধিক দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সঙ্গেও বৈঠকে বসেছে। বৈঠকে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রতিবেশী দেশের অভিজ্ঞতা ভাগ করা হয়। তিনি আরও বলেন, এর আগে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ এবং এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কাজ করার আগ্রহের কথা জানায়। মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, যেখানে সেখানে ভবন নির্মাণের কারণে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, ইমাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গুতে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে ঢাকার বাইরে। চট্টগ্রাম ও বরিশালে আক্রান্তের হার বেশি। বরিশালসহ আরও কয়েকটি জেলায় সরেজমিন গিয়ে এডিসের ঘনত্ব দেখা গেছে। প্রতিটি জেলা ঝুঁকিপূর্ণের কাতারে আছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক, সামনে আরও খারাপ হবে। জনসম্পৃক্ততা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে বৈঠকে ডব্লিউএইচওর আবাসিক প্রতিনিধি ড. বর্ধন জং রানাসহ চার সদস্যের প্রতিনিধি, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহমেদুল কবীর উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ঢাকায় ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণে সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে দেশটির প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছেন। তারা স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতার আলোকে ডেঙ্গু চিকিৎসা নিয়ে গাইডলাইনে কিছু সংশোধন আনতে পারে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এছাড়া ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বুধবার এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ২৭ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। উল্লেখ্য, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৪ হাজার ৪১৬ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৪ হাজার ৮৯১ জন। মারা গেছেন ২৬১ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটির ২০৫ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরের ৫৬ জন। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ২৮১ জন।