ডেঙ্গুর মৌসুম এবার দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ অক্টোবর, ২০২৩, 11:16 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ অক্টোবর, ২০২৩, 11:16 AM
ডেঙ্গুর মৌসুম এবার দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা
দেশে সাধারণত ডেঙ্গুর মৌসুম জুন মাসে শুরু হলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর প্রকোপ থাকে। কিন্তু গত বছর ডেঙ্গু ছিল অক্টোবর পর্যন্ত। চলতি বছর অক্টোবরের প্রথম ছয় দিনে ঢাকার বাইরে রোগী উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এখনও অনেক বৃষ্টি হচ্ছে, মাঝে মাঝে ভ্যাপসা গরম পড়ছে। সঙ্গে থাকছে ব্যাপক আর্দ্রতা। এমন আবহাওয়া এডিস মশা বৃদ্ধির অনুকূল। তাই এবার দীর্ঘ হতে পারে ডেঙ্গুর মৌসুম। কীটতত্ত্ববিদ এবং জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বৃষ্টি, মাঝে মাঝে ভ্যাপসা গরম এবং ব্যাপক আর্দ্রতা এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ হতে পারে। গেল বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ অক্টোবর পর্যন্ত থাকলেও এ বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বরেও ডেঙ্গু থাকতে পারে। শুক্রবার ( ৭ অক্টোবর ) আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৯২ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে। পরের ২৪ ঘণ্টা তা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এ ছাড়া জানা গেছে, আক্টোবরের মাঝামাঝিতে এমন বৃষ্টি হতে পারে। কীটতত্ত্ববিদ এবং জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এমন গরম আবহাওয়ায় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলেও মশা বাড়বে। তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও আর্দ্রতা ৭০ শতাংশের বেশি হলো এডিস মশা প্রজননের জন্য উপযোগী আবহাওয়া। এমন আবহাওয়ায় এডিসের লার্ভা থেকে মশা সৃষ্টি হতে তিন দিনের মতো সময় লাগে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়; ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন ৭০টির বেশি দেশে। গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, বিদ্যমান গরম আবহাওয়ার কারণে ডেঙ্গু মহামারিতে রূপ নিতে পারে। চলতি দশকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল, দক্ষিণ ইউরোপ ও আফ্রিকার বেশ কিছু নতুন অঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়বে। এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার অনেক অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ডেঙ্গু একটি আতঙ্কের নাম। এসব অঞ্চলে প্রতি বছর অক্রান্ত হয়ে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। ২০০০ সালের তুলনায় আক্রান্তের হার বিশ্বব্যাপী বেড়েছে প্রায় আট গুণ। জলবায়ুর পরিবর্তন ও ক্রমান্বয়ে নগরায়ণ বৃদ্ধির কারণেই বিশ্বব্যাপী এটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪২ লাখ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। চলতি বছর ৯ মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩৮ লাখের বেশি মানুষ। বাংলাদেশে ৯ মাসে এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। গবেষকরা যা বলছেন, মশার উপদ্রব বাড়বে না কমবে সেটা নির্ভর করে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ওপর। রোগতত্ত্ববিদ মুশতাক হোসেন বলেন, এমন বৃষ্টিতে ডেঙ্গু কমবে না, বরং এডিস মশা বাড়বে। বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তা কমতে থাকবে। ডেঙ্গু বিস্তার বা মৃত্যু কমার জন্য যা যা করা প্রয়োজন ছিল, তার কোনো কিছুই করা হয়নি। অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, এবার ডেঙ্গুর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এর ধরন পরিবর্তন। এ কারণে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সময় মতো সতর্ক না হওয়ায় দেরিতে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তাই রোগীর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।