ঢাকা ২০ নভেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় নিয়ে যা বললেন আমির খসরু পুলিশের ওপর হামলা নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের হুঁশিয়ারি ১৪ নেতাকে আবার দলে ফেরাল বিএনপি জমি নিয়ে হয়রানি থামাতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ জন্মদিনে স্ত্রী-কন্যার ছবি শেয়ার করে নারীদের ৫ প্রতিশ্রুতি দিলেন তারেক রহমান আধিপত্যের দ্বন্দ্ব ও বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেনে খুন আদালতের রায়ে ফিরলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে কার্যকর তেঁতুলিয়ায় বেড়েছে শীতের আমেজ, তাপমাত্রা ১৩.৯ ডিগ্রি আজ থেকে রাঙামাটিতে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল শুরু তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাকরিচ্যুত

জমি নিয়ে হয়রানি থামাতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ নভেম্বর, ২০২৫,  11:32 AM

news image

দেশে জমি-সংক্রান্ত অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলনামূলকভাবে বেশি। নানা গবেষণায় এ তথ্য ওঠে এসেছে। জনসংখ্যা বেশি। মাথাপিছু জমি কম। ফলে ভূমি নিয়ে বিরোধও সবচেয়ে বেশি। জমির নিবন্ধন, নামজারি, খাজনা- প্রায় সব জায়গাতেই হয়রানির অভিযোগ পুরনো। এ পরিস্থিতি বদলাতে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ভূমি ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে ১৬টি পদক্ষেপ এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। কৃষিজমি রক্ষায় প্রণয়ন করা হয়েছে ‘ভূমি ব্যবহার ও কৃষিভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’। এতে কৃষিজমি নষ্ট বা দখল ঠেকানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভূমির সব সেবা এক প্ল্যাটফর্মে আনতে চালু হচ্ছে ‘ভূমি’ নামের বিশেষ অ্যাপ। এটি ২৪ নভেম্বর উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ভূমি নিবন্ধনের প্রতিটি ধাপেই অনিয়ম-দুর্নীতি চলে আসছে। এতে প্রতিষ্ঠানগত দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়ছে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ দলিল নিবন্ধনে ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অবৈধ লেনদেন হয়। তারা নিবন্ধন ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করার সুপারিশও দিয়েছিল।

নিবন্ধন কাজ করে থাকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়। তবে অনেকেই এটিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অংশ মনে করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে নামজারি, জমির উন্নয়ন কর, জরিপসহ অন্যান্য সেবা। এখানেও অনিয়ম কম নয়। একটি নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। ফলে দালাল-কর্মচারী সিন্ডিকেটের কাছে মানুষ প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হন।

এ অবস্থার পরিবর্তনেই জোর দেওয়া হয়েছে ডিজিটাইজেশনে। যেখানে ঝুঁকি রয়েছে, সেসব ধাপে নতুন পদক্ষেপ নিতে চাইছে মন্ত্রণালয়। কারা কারা এসব অনিয়মে জড়িত, তা খুঁজতেও চলছে অভ্যন্তরীণ তদন্ত। ভূমি-সেবার ব্যাপকতা বোঝা যায় হটলাইনের তথ্য থেকে। প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার মানুষ ফোন করে বিভিন্ন তথ্য নেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেন, এখন সব সেবা অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। হয়রানিমুক্ত জনবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে পাঁচটি সফটওয়্যার চালু হয়েছে। অনলাইন সেবাকে আরও সহজ করতে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জমির মালিকানায় শতভাগ নির্ভুল হোল্ডিং অ্যান্ট্রি করার কাজ চলছে। জয়পুরহাটে ইউএনডিপির সহায়তায় পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছে। সারা দেশে এটি চালু হবে। ‘ভূমি’ অ্যাপের মাধ্যমে সেবাকে আরও সহজ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারী বা দালালের মাধ্যমে যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন, সেই লক্ষ্যেই এসব উদ্যোগ। হিউম্যান টাচ কমিয়ে সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যেন কাউকে আর কারও কাছে ধরনা দিতে না হয়।

ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনায় দ্বিতীয় প্রজন্মের অটোমেটেড নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেম এবং খতিয়ান-মৌজা ম্যাপ সরবরাহ সিস্টেম চালু হয়েছে। ওয়েব পোর্টালে সব সেবা এখন এক প্ল্যাটফর্মে। আবেদন, ফি পরিশোধ, ডকুমেন্ট পাওয়াÑ সবই অনলাইনে। ডাকযোগে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় খতিয়ান ও ম্যাপ।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জরিপ ডিজিটাইজেশন, ক্যাশলেস ভূমি অধিগ্রহণ, জলমহাল ব্যবস্থাপনা, ভূমি তথ্য ব্যাংক, মর্টগেজ ডেটা ব্যাংক, কেস-ম্যানেজমেন্টÑ এসব ব্যবস্থাও চালু হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, ভূমি অফিসে না গিয়ে ঘরে বসেই হয়রানিমুক্ত সেবা পাওয়া।

এখন নামজারির ক্ষেত্রে মানুষের ওপর নির্ভরতা কমানো হচ্ছে। একবার শুধু দলিল যাচাই ও শুনানির জন্য অফিসে যেতে হয়। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্ব মালিকের খতিয়ান থেকে জমি কর্তন হয়ে নতুন মালিকের খতিয়ানে যুক্ত হয়ে যায়। এতে একই জমি বারবার বিক্রির সুযোগ বন্ধ হবে।

নামজারি হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে হোল্ডিং তৈরি হয়ে যাবে। মালিক অনলাইনে উন্নয়ন কর দিতে পারবেন। এতে আর অফিসে গিয়ে ধরনা দিতে হবে না। দুর্নীতি ও হয়রানিও কমবে। এ জন্য ৬ হাজার কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার ২০টি সার্কেলে পাইলট প্রকল্প শেষ হয়েছে। সারা দেশে এটি চালু হবে।

হটলাইন ছাড়াও রাজধানীর তেজগাঁও ভূমি ভবনে চলছে নাগরিক ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র (এলএসএফসি)। প্রতিদিন সেখানে প্রায় ২০০ মানুষ বিনামূল্যে সেবা নিচ্ছেন। সারা দেশে ৬১ জেলায় ৮৪০টি এলএসএফসি চালু রয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ই-মিউটেশনের আবেদন ছিল ৪০ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি। নিষ্পত্তি হয়েছে ৪২ লাখেরও বেশি। নামজারি থেকে রাজস্ব এসেছে ৩৩৫ কোটি টাকার বেশি। ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে ১ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। ই-পর্চা ও নকশা থেকে আয় হয়েছে ৫৩ কোটি টাকার বেশি।

সরকারের আরেকটি বড় পদক্ষেপ ল্যান্ড জোনিং। কৃষিজমি, খাল, পাহাড়, বনভূমি, নদী- সব ধরনের ভূমি সংরক্ষণে এটি কার্যকর হবে। নতুন অধ্যাদেশে ১৪ ধরনের জোন নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পকারখানা, সড়ক নির্মাণসহ নানা কারণে কৃষিজ ও পরিবেশগত জমি দ্রুত কমছে। অধ্যাদেশে কৃষিজমি রক্ষায় কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। অকৃষি কাজে কৃষিজমি ব্যবহার করলে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড হতে পারে। চারজন উপদেষ্টার সম্মতিতে খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই অধ্যাদেশটি অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র : আমাদের সময় 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম