ঘেরের ভেড়ীবাঁধে চার স্তরের সবজি চাষে অর্থনৈতিক ভাবে চাষিরা এখন স্বাবলম্বী
নিজস্ব প্রতিনিধি
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, 11:04 AM
নিজস্ব প্রতিনিধি
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, 11:04 AM
ঘেরের ভেড়ীবাঁধে চার স্তরের সবজি চাষে অর্থনৈতিক ভাবে চাষিরা এখন স্বাবলম্বী
বেতাগা ইউনিয়নের ধনপোতা গ্রামের আনন্দ পাল, শ্যামল পাল, জীবন পাল, রব্বান শেখ ও সিহাব উদ্দিন সহ একাধিক চাষিরা বাগেরহাটের মুক্তখবর প্রতিনীধিকে জানান, তারা তাদের ঘেরের ভেড়ীবাঁধে চার স্থরের সবজি চাষ করেছেন। একই ঘেরের ভেড়ীবাঁধের উপর যে চার প্রকার সবজি চাষ করা যায় তা তাঁরা কোন দিন কল্পনাও করতে পারেননী। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে তারা এ পদ্ধতিতে চাষ করা শিখেছেন। তারা বলেন, ঘেরের ভিতরে মাছ আর ডাঙ্গায় অর্থাৎ ঘেরের ভেড়ীতে বরবটি সিম, করলা, তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, চাল কুমড়া ও লাউ এবং দুই গাছের মাঝখানে বেগুন মরিচ টমেটোসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করেছেন। শুধু তারা নয়,এঅঞ্চলের শতশত ঘের মালিক ও বিভিন্ন ব্যক্তি জমি হারি বা বরগা নিয়ে সবজির চাষ করেছেন। বাম্ফার ফলনও হয়েছে। ধনপোতা গ্রামের বিলে হাজার হাজার একর জমিতে মনোমুগ্ধকর সবজির চাষ করা হয়েছে। যা দেখলে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এ যেন ভিন্ন এক অঞ্চল। সকল সবজি একটি স্থানে এনে জড়ো করার জন্য বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ১৫লক্ষ টাকার ব্যায়ে বৃহৎ আকারের একটি (কালেকশন সেন্টার) পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যে ভবনটি নির্মাণ করা হলে সবজি বিক্রয় করতে চাষিদের কোন বেগ পেতে হবে না বলেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুস আলী শেখ জানিয়েছেন। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর হতে দুপুর পর্যন্ত শতশত কৃষক তাদের ঘেরের পাড়ে গিয়ে বিভিন্ন সবজি তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন। সেই সবজি বস্তায় ভরে ভ্যান যোগে কুরোলতলার মোড় বা বাজারে নিয়ে আসছেন। সেখানে কয়েকজন ক্রেতা তা ক্রয় করে বড়-বড় তুম্বু করে তা বস্থায় ভরে ট্রাক বা পিকাপে করে ঢাকা চট্টগ্রাম রাহশাহী ও খুলনার বিভিন্ন বড়বড় বাজরে নিয়ে যাচ্ছেন। চোখ জুড়ানো এ সমস্ত কার্যক্রম দেখে মন আরো মুগ্ধ হয়ে উঠে। এ যেন এক সবজির স্বর্গরাজ্য। সবজি ব্যবসায়ী সিহাব উদ্দিন শেখ, আল আমীন শেখ, নাদিম হোসেন, সুভাস দেবনাথ ও রবিউল ইসলাম সহ একাধিক ব্যবসায়রা জানান, তাদের এই মোড় হতে প্রতিদিন ২৮/৩০টি ট্রাকে করে বিভিন্ন প্রকার সবজি ঢাকা চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সবজির মোটা-মুটি মূল্য এখানে একটু কম হলেও চাষিরা খুশি। কারণ তাঁরা ঘেরের পাড়ে বসেই তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করতে পারছেন। আনন্দ পাল, শ্যামল পাল, জীবন পাল, রব্বান শেখ ও সিহাব উদ্দিন সহ একাধিক চাষিরা বাগেরহাটের মুক্তখবর প্রতিনীধিকে বলেন, মাত্র দেড় দু’মাসে তারা ৫০হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লক্ষ টাকার সবজি বিক্রয় করেছেন। শুধু সবজিই নয়, নিচেই রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এবং অন্য মৌসুমে ঘেরের ভিতর ধানের চাষও করেন তাঁরা। শুধু বেতাগা ইউনিয়ন-ই নয়, মানসা-বাহিরদিয়া, শুভদিয়া, নলধা-মৌভোগ, পিলজংগ ও লখপুর ইউনিয়নের প্রতিটি ওর্য়াডের ঘেরের পাড়ে সবজির চাষ হয়েছে বিপুল পারিমানে। এ উপজেলায় প্রায় ৫শত হেক্টর জমিতে শুধুমাত্র ঘেরের ভেড়ীতে সবজি চাষ হয়েছে। প্রতিদিন এই উপজেলা হতে প্রায় ২৫ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী হচ্ছে। সবজি চাষে বাম্ফার ফলন হওয়ায় শতশত কৃষকের ভাগ্য বদলের পাশা-পাশি তারা অর্থনৈতিক ভাবে আগের চেয়ে অনেক স্বাবলম্বী হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চল অর্থনৈতিক ভাবে সম্মৃদ্ধ হতে সক্ষম হয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মন্ডল, মোঃ সোলায়মান মন্ডল ও বিপুল কুমার পাল বাগেরহাটের মুক্তখবর প্রতিনীধিকে জানান, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়েছে বেতাগা ও পিলজংগ ইউনিয়নে। এই দুইটি ইউনিয়নে ২শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন,এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ৫শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। আমরা চাষিদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য সার্বক্ষনিক মনিটরিং ব্যবস্থা এবং স্মল হোল্ডার কম্পিটিটিনেভস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর মাধ্যমে চাষিদের প্রশিক্ষন সহ নানা ধরনের সহযোগীতা করে আসচ্ছি। যে কারনে তারা অর্থনৈতিক ভাবে আরো স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এধারা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি সকল পতিত জমিতে চাষাবাদ করার জন্য স্থানীয় চাষিদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান। এ ব্যাপারে