গোয়েন্দা নজরদারিতে এমটিএফই’র ৪০০ সিইও
নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ আগস্ট, ২০২৩, 11:00 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ আগস্ট, ২০২৩, 11:00 AM
গোয়েন্দা নজরদারিতে এমটিএফই’র ৪০০ সিইও
পরিশ্রম ছাড়া ঘরে বসে বিনিয়োগ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে গ্রাহকের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (এমটিএফই) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ভয়াবহ এই ডিজিটাল প্রতারণা নিয়ে দেশব্যাপী চলছে নানান আলোচনা। এরইমধ্যে বায়বীয় এই প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা ৪০০ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের আটক করার জন্য গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, এমটিএফই বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ২০২১ সালে। তিন বছরে এমটিএফইতে শুধু বাংলাদেশ থেকেই ৪২ লাখ মানুষ যুক্ত হয়েছেন। প্রাথমিক অবস্থায় এমটিএফই অ্যাপে যুক্ত প্রত্যেকেই ৬১, ২০১, ৫০১, ৯০১ ও ২ হাজার ডলার ডিপোজিট করেন। বেশি টাকা আয় করতে কেউ কেউ ৫ হাজার ডলারের বেশিও বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে কেউ জমানো টাকা, কেউবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আবার কেউ জমি বন্ধক রেখে বিনিয়োগ করেছিলেন। প্রথমে গত ৭ আগস্ট সিস্টেম আপগ্রেডের কথা বলে গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন সেবা বন্ধ করে এমটিএফই। এরপর গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) রাতে হুট করে প্রায় সব গ্রাহকের ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট ঋণাত্মক দেখানো শুরু করে অ্যাপটি। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাদের ব্যবসায় লোকসান হয়েছে। এজন্য উল্টো গ্রাহকদের কাছ থেকেই তারা টাকা পাবে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করা গ্রাহকরা লাভের গুড় তো পায়নি বরং তাদের ঘাড়ে আরও ঋণের বোঝা চেপেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এমটিএফই’র প্রতারণা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা ও তথ্য পেলেও এখনও লিখিত কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা হয়নি। তবে মামলা না পেলেও এ বিষয়ে ছায়াতদন্ত চলছে। এমটিএফই’র কার্যক্রম সম্পূর্ণ বায়বীয় হলেও বাংলাদেশে তাদের অনেক রিপ্রেজেনটেটিভ এবং ৪০০’র মতো সিইও’র সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ বাড়িয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা। এসব সিইওদের আটক করতে একাধিক সংস্থা কাজ করছে।
পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এমটিএফই’র গ্রাহকদের অধিকাংশই অ্যাপটির বিষয়ে জানতো না। তারা স্থানীয় সিইওদের সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ করে অ্যাপটির বিষয়ে জানতে পারেন। এরপর প্রলোভিত হয়ে বিনিয়োগ করেন। এই দায় সিইওরা এড়াতে পারে না। তাই তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদিও এমটিএফই’র প্রতারণার বিষয়ে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে আমরা আমাদের কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ৪০০ জন্য সিইও’র বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, বাংলাদেশে এমটিএফই’র যারা পরিবেশক বা প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া কেউ যদি অভিযোগ দেয় সে তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। এ ছাড়া কেউ যদি অভিযোগ দেন, সে বিষয়েও আমরা ব্যবস্থা নেব। এমটিএফই একটি ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম চক্র। তাদের কার্যক্রম ছিল সম্পূর্ণ বায়বীয়।