ঢাকা ১০ জুন, ২০২৩
সংবাদ শিরোনাম
সাভারে ডিবির অভিযোনে ৫০০ পিস ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ১০ দিন আগেই বাজারে আসছে ‘হাঁড়িভাঙা আম’ ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ২ জনের মৃত্যু সোনার মানুষ গড়ার কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক : খাদ্যমন্ত্রী টেকনাফে কোস্ট গার্ডের অভিযানে ১ হাজার ১৮২ ক্যান বিয়ার জব্দ নকলায় বৃষ্টির প্রত্যাশায় ব্যাঙের বিয়ে! দেখতে মানুষের ঢল বাগদান সারলেন টাইগার পেসার হাসান মাহমুদ বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান ১৫-২০ দিনের মধ্যে : তথ্যমন্ত্রী চট্টগ্রাম-১০ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এইচএসসি পরীক্ষা শুরু ১৭ আগস্ট

গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েছে পাঁচ গুণ

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ মে, ২০২৩,  2:14 PM

news image

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে ডেঙ্গু রোগী ও এতে মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। গত পাঁচ মাসে সারা দেশে এক হাজার ৪১৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন মারা গেছে। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত উপাত্ত থেকে এ তথ্য জানা গেছে। অধিদপ্তর ২০১৯ সাল থেকে ডেঙ্গুর তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে। প্রতিবেদনে ওই সময় থেকে গতকাল পর্যন্ত তথ্য তুলে ধরা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৫২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ সময়ে কারো মৃত্যু ডেঙ্গুহয়নি।

বর্তমানে সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৬২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি ১৪২ জন, ঢাকার বাইরে ২০ জন। ২০২২ সালের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিল ৩৫২ জন। কেউ মারা যায়নি। ২০২১ সালের একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিল ১০০ জন। মৃত্যু ছিল শূন্য। তবে ওই বছর হাসপাতালে মোট এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ভর্তি হয়েছিল। মারা গিয়েছিল ১৭৯ জন। এখন পর্যন্ত ২০২১ সালেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা গত বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সঙ্গে চলতি বছরের পাঁচ মাসের পরিস্থিতি তুলনা করে বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে জুন থেকে অক্টোবরে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম  বলেন, ডেঙ্গুর চারটি সেরুটাইপ ডেন-১ থেকে ডেন-৪ সব কটি গত বছরে পাওয়া গেছে। এই ভাইরাস বহনকারী মশা কিন্তু রয়ে গেছে। ডেন-৩ দ্বারা যে ব্যক্তি গত বছর আক্রান্ত হয়েছে, এ বছর সেই ব্যক্তি অন্য কোনো সেরুটাইপে আক্রান্ত হলে তার অবস্থা ভয়াবহ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

’ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু পাঁচ গুণ বেড়েছে : ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রগ্রাম ম্যানেজার ডা. একরামুল হক বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। এতে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে। এর কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে, এটা ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজননের জন্য বেশ উপযোগী। সব মিলিয়ে আমাদের আসলে রিল্যাক্স মুডে থাকার কোনো উপায় নেই।’

যাত্রাবাড়ীতে ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে বেশি : চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের ৬১.৮ শতাংশই ঢাকা দক্ষিণের। উত্তরের ১৬.৩ শতাংশ। ঢাকার বাইরে রয়েছে ২১.৯ শতাংশ। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাত্রাবাড়ী এলাকায়। এরপর কেরানীগঞ্জ ও কাজলা এলাকায়। ঢাকার সরকারি চার হাসপাতাল, পাঁচটি বেসরকারি ও একটি স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ভর্তি ৭২২ রোগীর তথ্য-বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এ তথ্য দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে ডেঙ্গুর জন্য ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য এলাকার মধ্যে রয়েছে উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মুগদা ও জুরাইন।

৬০ শতাংশের বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ : হাসপাতালে ভর্তি ৭২২ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৬১.৫ শতাংশ পুরুষ ও  ৩৮.৫ শতাংশ নারী। বয়স ভিত্তিতে  এক থেকে চার বছরের ৫৫ জন, পাঁচ থেকে ৯ বছরের ৫৬ জন,  ১০ থেকে ১৮ বছরের ১৩৪ জন, ১৯ থেকে ২৯ বছরের ১৮৮ জন, ৩০ থেকে ৩৯ বছরের ১১৬ জন, ৪০ থেকে ৪৯ বছরের ৭৩ জন, ৫০ থেকে ৬০ বছরে ৬১ জন ও ষাটোর্ধ্ব রোগী ৩৩ জন। 

ঘরে ঢুকে এডিস লার্ভা নির্মূল সম্ভব নয় : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘এখানে এডিস মশা জন্মায় মানুষের ঘরের ভেতরে। আমরা সব সময় মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু কেউ সচেতন না হলে সিটি করপোরেশনের পক্ষে প্রতিটি ঘরে ঢুকে এডিস লার্ভা নির্মূল সম্ভব নয়। আমাদের মশক নিধন স্প্রে কার্যক্রম চলছে। কিছু দিনের মধ্যে মোবাইল কোর্ট শুরু করব। যেখানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাবে, সেখানে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা নেই : ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কোনো ব্যর্থতা নেই। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। সিঙ্গাপুরে রোগী এখন ২৯ হাজার, ভিয়েতনামে ৩৩ হাজার। এর কারণ হলো এখন ডেঙ্গু মৌসুম।’ তিনি বলেন, ‘লার্ভি সাইডে সময়টা আমরা পরিবর্তন করেছি। আগে আমরা করতাম সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। এখন ভোর ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত করছি। কারণ লার্ভি সাইড কার্যক্রমের সবচেয়ে উত্তম সময় হলো সূর্য ওঠার আগে। এ জন্য কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ নিয়ে আমরা এ কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

ডেঙ্গু সারা বছর থেকে যাচ্ছে : কীটতত্ত্ববিদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ফ্যাকাল্টি জি এম সাইফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এডিস মশা নিধনে আমাদের কোনো অ্যাকটিভ কন্ট্রোল প্রগ্রাম নেই। কারণ আমরা ওষুধ ছিটাই বা যা কিছু করি, কিউলেক্স মশার জন্য। এই সময়ে আমাদের করণীয় হলো ‘আরবো ভাইরাস চেক’।-সূত্র :কালের কণ্ঠ

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম