
NL24 News
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, 4:01 PM

কলারোয়ায় মাছ চুরি করতে নিষেধ করায় যুবককে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিল প্রতিপক্ষরা
মনিরুজ্জামান মনি : পুকুর থেকে মাছ চুরি করতে নিষেধ করা ও পুকুরের ঢাল কেটে পানি অপসারণের ড্রেন কাটতে বাধা দেওয়ায় এক যুবককে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। গত ০৫ সেপ্টেম্বর সকালে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার যুগিখালী ইউনিয়নের রামভাদ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত ভুক্তভোগী যুবক মো. ইলিয়াস হোসেন বর্তমানে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পর এ ঘটনার আইনি সহায়তা পেতে গত ০৯ সেপ্টেম্বর তিনজনকে আসামি করে কলারোয়া থানায় এজাহার দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী যুবকের পিতা মো. ইব্রাহিম ঢালী। ওই মামলায় নেদু সিরাজ গাজীর ছেলে মো. খলিল গাজী, মো. আলিম গাজী ও আলিম গাজীর ছেলে মো. হাফিজুল ইসলামকে আসামি করেছেন ইব্রাহিম ঢালী। মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ‘মো. ইব্রাহিম ঢালীর পুকুর থেকে প্রতিবেশী মো. খলিল গাজী ও তার ভাই মো. আলিম গাজী প্রায় সময় মাছ চুরি করে আসছিল। মাছ চুরির ঘটনা লোক মুখে শুনে সম্প্রতি মো. ইব্রাহিম ঢালী ওত পেতে থেকে তাদের দুই ভাইকে চুরির মাছসহ হাতেনাতে ধরে ফেলে। তখন তাদেরকে এমন-ধরনের অনৈতিক কাজ করতে নিষেধ করে ইব্রাহিম ঢালী সেখান থেকে চলে আসে। পরে মাছ চুরির বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে হাফিজুল, তার বাবা আলিম গাজী, চাচা খলিল গাজী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য ইব্রাহিম ঢালীর পুকুরের পাড় কেটে পানি অপসারণের বাহানা বানায়। পুকুর রক্ষার্থে পুকুরের পাড় কাটতে নিষেধ করায় তারা ইব্রাহিম ঢালীকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারপিট করে। ইব্রাহিম ঢালীর আত্মচিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে আসলে মো. হাফিজুল ইসলাম সেখান থেকে চলে যায়। যাওয়ার সময় ইব্রাহিম ঢালী ও তার ছেলে ইলিয়াস হোসেনকে সময়-মত সুযোগ বুঝে হাত-পা ভেঙে দেওয়াসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যায় হাফিজুল ইসলাম।’ এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, ‘এ ঘটনার তিন দিন পরে গত ০৫ সেপ্টেম্বর সকালে ইলিয়াস হোসেনকে মাঠে একা পেয়ে মো. হাফিজুল ইসলাম, তার পিতা মো. আলীম গাজী, চাচা মো. খলিল গাজী দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাথাড়ি মারপিট করে। ইলিয়াস হোসেন মারা গেছে ভেবে তাকে ধান ক্ষেতের মধ্যে ফেলে রেখে চলে যায় আসামিরা। পরে লোকমুখে সংবাদ পেয়ে ইলিয়াস হোসেনের পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী গিয়ে তাকে উদ্ধার করে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা বেগতিক দেখে তারা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পর জানা যায় ইলিয়াসের দুটি পা এবং একটি হাত ভেঙে গেছে। সেখানে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল থেকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে নিবিড় পরীক্ষা নীরিক্ষার পর জানা যায় বুকে প্রচন্ড আঘাতের ফলে ইলিয়াসের প্লিহা নষ্ট হয়ে গেছে। অপারেশনের মাধ্যমে সেটা কেটে ফেলতে হবে। নাহলে রোগী মারাও যেতে পারে। পরে ইলিয়াসের প্লিহা কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে।’ ভুক্তভোগী ইলিয়াস হোসেনের পিতা মো. ইব্রাহিম ঢালী জানান, ‘সন্ত্রাসী হাফিজুল, তার বাবা আলীম ও চাচা খলিল আমার ছেলেকে মেরে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। তাদের মারধরের কারণে আমার ছেলের বুকে প্রচন্ড আঘাত পাওয়ার কারণে তার প্লিহা নষ্ট হয়ে গেছে। অপারেশন করে প্লিহা বাদ দেওয়া লেগেছে’। তিনি আরো জানান, ‘আমার ছেলে মারা গেছে ভেবে ওই সন্ত্রাসীরা ধান ক্ষেতের মধ্যে ফেলে রেখে চলে যায়। আমি ওই সন্ত্রসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’ অভিযুক্ত হাফিজুল ইসলাম জেলখানায় থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে কথা বলতে অপর আসামি খলিল গাজী ও আলীম গাজীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে মূল আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর আছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভুক্তভোগীর গুরুতর জখম হওয়ার বিষয়টিও আমারা নিশ্চিত হয়েছি। তিনি বর্তমানে খুলনায় চিকিৎসাধীন আছেন’।