এক সপ্তাহে দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ জানুয়ারি, ২০২২, 10:28 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ জানুয়ারি, ২০২২, 10:28 AM
এক সপ্তাহে দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ
দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। দৈনিক শনাক্তের হার ১২ শতাংশের কাছাকাছি। এক সপ্তাহে দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৬৯ শতাংশের বেশি রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। দেশে এখন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করোনা রোগীই ওমিক্রনে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হাসপাতালে রোগী বাড়বে। উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা ও রাঙ্গামাটি জেলা। নতুন শনাক্তের ৮১ শতাংশই ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশে পৌঁছেছে। যা আগের দিন ছিল ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮ হাজার ১১১ জনে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯১৬ জন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৫৮ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১৬ লাখ ১ হাজার ৩০৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬৬ জন এবং এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৫৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দেশে ৮৫২টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ৭০৫টি নমুনা সংগ্রহ এবং ২৪ হাজার ৯৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ৩০১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী। দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৭ হাজার ৯৭৭ জন এবং নারী ১০ হাজার ১৩৪ জন। তাদের মধ্যে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের ১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ৪ জনের মধ্যে ঢাকায় ৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ৪ জনের মধ্যে ৩ জন সরকারি হাসপাতালে এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১ জন মারা গেছেন। নতুন শনাক্তের মধ্যে ঢাকা মহানগরের রয়েছেন ২ হাজার ৩৭৬ জন। যা একদিনে মোট শনাক্তের ৮১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ২ হাজার ৪৩৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৬৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫৬ জন, রংপুর বিভাগে ১২ জন, খুলনা বিভাগে ৬০ জন, বরিশাল বিভাগে ১১ জন এবং সিলেট বিভাগে ৫১ জন শনাক্ত হয়েছেন।
১৫ থেকে ২০ শতাংশ করোনা রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত: গতকাল মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জন (বিসিপিএস) ভবনে এম্বুলেন্স ও ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, দেশে ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিক সংক্রমণ) শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, যে হারে রোগী বাড়ছে, তাতে ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কিছুটা হয়েছে। দেশে এখন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করোনা রোগীই ওমিক্রনে আক্রান্ত। মন্ত্রী বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১১ নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বজুড়েই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন উদ্বেগ ছড়িয়েছে। আমাদের দেশেও এটা পাওয়া গেছে। সংক্রমণ বাড়লেও টিকা গ্রহণের কারণে মৃত্যুর হার কম। তবু আরও ২০ হাজার শয্যা প্রস্তুতের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে সংক্রমণের হার বাড়লে মৃত্যু হারও বাড়বে। আর সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে ইতিমধ্যেই ১১ দফা নির্দেশনা জারি করে প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সভা- সমাবেশ বন্ধ থাকবে। সেই সঙ্গে সবাইকে সব জায়গায় মাস্ক পরতে হবে। যদি কেউ না পরেন, তাহলে তাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে এবং জেল পর্যন্ত হতে পারে। তিনি বলেন, মাস্ক পরা জরুরি এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। মাস্ক না পরে যেন কেউ যানবাহনে না ওঠেন, সেদিকেও নজর রাখা হবে। আগামী কয়েকদিন হাসপাতালে রোগী বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এক সপ্তাহে করোনায় দ্বিগুণ রোগী: বুধবার দুপুরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চ্যুয়াল বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন জানিয়েছেন, গত সাত দিনে দেশে করোনার সংক্রমণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় পরের সপ্তাহে ১৬৯ দশমিক ১২ শতাংশ রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। গত ১১ই জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি ৮৪ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সব মহাদেশে দেখা যাচ্ছে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হচ্ছে। ওমিক্রনের পাশাপাশি ডেল্টা ভাইরাস দুটোই কিন্তু অবস্থান করছে। সংক্রমণ হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে ধরে নিতে হবে নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট তারই সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ১ সপ্তাহে বাংলাদেশে ১০ শতাংশের বেশি পরীক্ষা বেড়েছে। ৭ দিনে দেড় লাখ টেস্ট হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৪৭৪ জন। এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭ দিনে ৬ হাজার রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় পরের সপ্তাহে ১৬৯ দশমিক ১২ শতাংশ রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮৯ জন। গত ৭ দিনে ২০ জনের মৃত্যু দেখেছি করোনায়। যদিও আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে মৃত্যু ২০ শতাংশ কম। গত ৫ই থেকে ১১ই জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা শতাংশের হিসাবে প্রায় দ্বিগুণ রোগী পেয়েছি। ৫ই জানুয়ারি ছিল ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, ১১ই জানুয়ারি এসে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে। গত ৭ দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত সংক্রমণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারপর থেকে এটা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা শুধু একই ধারায় বৃদ্ধি হচ্ছে তা না, প্রোগ্রেসিভলি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য অ্যালার্মিং। পুরো ডিসেম্বরে ৪ হাজার ৫৮৮ জন রোগী আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি, সেখানে জানুয়ারির মাত্র ১১ দিনে ১২ হাজার ৮৫০টি রোগী ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। সূত্র: মানবজমিন