আদাবরে ৩ বোনের পালানোর রহস্য উৎঘাটন
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ নভেম্বর, ২০২১, 11:39 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ নভেম্বর, ২০২১, 11:39 AM
আদাবরে ৩ বোনের পালানোর রহস্য উৎঘাটন
রাজধানীর আদাবর থেকে হঠাৎ পালিয়ে কোথায় গিয়েছিলো জানা গেলো সেই রহস্য। তিন বোনের মধ্যে দু’জনের এসএসসি চলছে। অন্যজন একাদশ শ্রেনীতে পড়াশোনা করছে। বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে তারা ঢাকা থেকে কাউকে কিছু না বলেই যশোর চলে গিয়েছিরো বলে জানায়। এসএসপি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ের মধ্যেও নিজেদের আবেগ ধরে রাখতে না পের তারা যশোরের উদ্দেশে যাত্রা করে। র্যাবের কাছে এমনটাই জানিয়েছে তারা। ওই তিন বোন হলেন, বড় বোন রুকাইয়া আরা চৌধুরী (২১), জয়নব আরা চৌধুরী (১৯) ও খাদিজা আরা চৌধুরী (১৭)। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তিন বোনের ধারণা, যদি বাবাকে দেখতে যাওয়ার বিষয়টি খালাকে জানানো হতো তাহলে তাদের তিনি যেতে দিতেন না। এ কারণে কাউকে না বলেই বেরিয়ে যায় তারা।
র্যাব বলছে, তিন কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেহেতু দু’জনের পরীক্ষা রয়েছে তাই আগামী রোববার তারা ঢাকায় চলে আসতো। তবে তার আগেই আদাবর থানায় তাদের খালা সাজিয়া নওশীনের করা নিখোঁজের জিডির বিষয়টি গণমাধ্যমে আলোচিত হয়। যে কারণে তদন্তে নামে র্যাব। যশোরে তাদের বাবার বাড়িতে অবস্থানও শনাক্ত করে। এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তিন বোনকে যশোর কোতোয়ালি থানায় পুলিশি হেফাজত থেকে রাজধানীর আদাবর থানা পুলিশের একটি টিম ঢাকায় নিয়ে এসেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, অসুস্থ বাবাকে দেখতে তারা বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। মোবাইলও ছিল না তাদের সঙ্গে। তাদের খালা সাজিয়ার ধারণা ছিল টিকটকের সম্পৃক্ততার কারণে তারা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। তবে এ ধরনের কোনও তথ্য-প্রমাণ পাইনি। তাদেরকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানা যাবে।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে আদাবরের খালার বাসা থেকে কাউকে না বলে বেরিয়ে যায় তিন কিশোরী। এ সময় তারা এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড সঙ্গে নিয়ে যায়। ১৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আদাবর থানায় জিডি করলেও সাজিয়া নওশীন তার পরিবারের অন্য কাউকে বিষয়টি জানাননি। শুক্রবার ১৯ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাজিয়া নওশীনের খিলগাঁওয়ের বোনের বাসায় গেলে পরিবারের সদস্যরা অবহিত হন বলে র্যাব সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে সাজিয়ার বড় বোনের স্বামী রিপন জানান, ‘এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, থানায় জিডিও হয়েছে, অথচ বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের বাসায় আসে, তখন জানতে পারি। তবে তিন বোনের সন্ধানের খবর পেয়ে আশ্বস্ত হয়েছি। পরে এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সাজিয়ার সঙ্গে আমরা কথা বলবো।’
ঢাকা থেকে তাদেরকে টিকটকে আসক্ত বলা হলেও যশোর পুলিশের দাবি, তারা টিকটকে আসক্ত নয়, তাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনও নেই। যশোর পুলিশের মুখপাত্র ডিবি ওসি রুপণ কুমার সরকার জানান, শুক্রবার যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই আনসারুল হক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে যশোর সদর উপজেলার চাঁদপাড়া পশ্চিমপাড়া হতে ভিকটিম রুকাইয়া, জয়নব ও খাদিজাকে উদ্ধার করেছে। তাদের পিতা রফিকুজ্জামান ও মাতা মৃত তাসনিম আরা চৌধুরী। তিনি জানান, উদ্ধারকৃত ভিকটিমরা তাদের বাবা মায়ের সঙ্গে উত্তরা লেকসিটি কনকর্ডে ভাড়া বাসায় থাকত। ২০১২ সালের দিকে তাদের বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া হলে তাদের বাবা যশোর চলে আসেন এবং ভিকটিমরা মায়ের সঙ্গে ঢাকায় থেকে যায়।
ডিবি ওসি রুপণ কুমার সরকার আরও জানান, ভিকটিমদের বাবা রফিকুজ্জামান স্কুল শিক্ষক ছিলেন। ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট ভিকটিমদের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ভিকটিম রুকাইয়া আরা চৌধুরীকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন তার খালা সাজিয়া নওরিন চৌধুরী এবং ভিকটিম জয়নব আরা চৌধুরী ও খাদিজা আরা চৌধুরীর লালন-পালনের দায়িত্ব নেন আরেক খালা সামিয়ারা চৌধুরী। তিনি জানান, ভিকটিমদের লালন-পালনের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মুহাম্মদপুর বাসা থেকে তিনজন ভিকটিম নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় সাজিয়া নওরিন আদাবর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। ডিবি ওসি জানান, ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে জানা যায়, তাদের বাবা-মা আলাদাভাবে বসবাসের পর হতে ২০১২ সালের পর তাদের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া তাদের ওপর অত্যাচার করা হতো। তাই ভিকটিম তিনবোন পরামর্শ করে মুহাম্মদপুর হতে পালিয়ে যশোরে বাবার বাড়ি চলে আসে। তিনি আরও জানান, ভিকটিমদের বাবা এখন প্যারালাইজড ও শয্যাশায়ী। তার বাসায় এই তিন বসে এসে অবস্থান করছিলেন। তারা টিকটক আসক্ত; এই তথ্য সঠিক নয়। কারণ তাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনও নেই।