অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ার আসক্তিতে বিপর্যস্ত যুবসমাজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ নভেম্বর, ২০২৫, 1:14 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ নভেম্বর, ২০২৫, 1:14 PM
অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ার আসক্তিতে বিপর্যস্ত যুবসমাজ
নুর আলম প্রিন্সঃ দেশের কিশোর ও তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ার ক্রমেই পরিণত হচ্ছে এক ধরনের সামাজিক সংকটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরনের গেমে আসক্তি শিক্ষার্থী সমাজের মনোযোগ ভেঙে দিচ্ছে, ধ্বংস করছে পড়াশোনা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন।রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল–কলেজে জরিপ করে জানা গেছে, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ প্রতিদিন ৩ থেকে ৭ ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্রি ফায়ার খেলছে। অনেক পরিবারের অভিযোগ সন্তানরা পড়াশোনা ছেড়ে সারারাত গেম খেলছে,পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত অবনতি হচ্ছে,আচরণে খিটখিটে স্বভাব ও মনোযোগহীনতা দেখা দিচ্ছে। একজন অভিভাবক জানান, “আগে আমার ছেলে প্রতিদিন স্কুলের পর পড়ত, এখন মোবাইল নামালেই গেম চালু করে। বোঝানো যায় না, থামতেও চায় না।বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্রি ফায়ারের মতো দ্রুতগতির শুটিং গেমে বারবার জয়-পরাজয়, উত্তেজনা ও শব্দ-প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা বাড়ায়। এতে সাময়িক আনন্দ মিললেও ধৈর্য কমে যায়,বাস্তব জীবনে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়,শিক্ষার্থীরা বইয়ের প্রতি অনীহা অনুভব করে।মনোবিজ্ঞানী বলেন, এটি শুধু সময় নষ্ট নয়, বরং এক ধরনের মানসিক নির্ভরশীলতা তৈরি করে। এটি দীর্ঘমেয়াদে ছাত্রজীবনকে বিপন্ন করে। ফ্রি ফায়ারে স্কিন, ডায়মন্ড, ব্যাটেল-পাস কিনতে অনেক শিক্ষার্থী গোপনে টাকা খরচ করছে। মোবাইল লোন অ্যাপ থেকে ঋণ নেওয়া, অভিভাবকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ তুলে ফেলা—এমন ঘটনাও সামনে আসছে। একজন কলেজছাত্র জানান, টিমের সবাই স্কিন ব্যবহার করে; না হলে খেলার মজা থাকে না। তাই মাসে কয়েক হাজার টাকা খরচ করে ফেলি।বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন ক্লাসে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা, অনলাইন আসক্তি নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষাজীবন বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়বে।ভোক্তা অধিকার সংস্থা ও অভিভাবক মহল অনলাইন গেমসের ওপর কঠোর নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। তারা বলছেন, শিশু-কিশোরদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ গেমগুলোর অ্যাক্সেস সীমিত করা ও ডিজিটাল ওয়েলবিয়িং নিয়ে প্রচারণা চালানো জরুরি।ফ্রি ফায়ার শুধু একটি অনলাইন গেম নয়,এটি এখন যুবসমাজের মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষাজীবন ও সামাজিক আচরণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করতে হলে সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রণই হতে পারে একমাত্র সমাধান।