‘দেশের আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি অবদান কবি-সাহিত্যিকদের’: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৭ জানুয়ারি, ২০২২, 1:14 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৭ জানুয়ারি, ২০২২, 1:14 PM
‘দেশের আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি অবদান কবি-সাহিত্যিকদের’: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দেশের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অবদান রয়েছে কবি-সাহিত্যিকদের। কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও আবৃত্তিকাররা যা কিছু দিয়ে গেছেন সেটা আমাদের সম্পদ। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব ২০২০-২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, আবৃত্তিকার যা কিছু দিয়ে গেছেন সেটা আমাদের সম্পদ। নীল দর্পন নাটকের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন যেভাবে এগিয়ে গিয়েছিল বা একটি কবিতার শক্তি যে কত বেশি সেটা তো আমরা নিজেরাই জানি। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যখন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করা যাচ্ছিল না, তখন কবিতার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদের ভাষা বেরিয়ে আসে। মানুষ সেখানে উদ্বুদ্ধ হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দেশের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অবদান রয়েছে কবি ও আবৃত্তিকারদের। তিনি বলেন, আমি একজন রাজনীতিবিদ, বক্তৃতা দিয়ে বেড়াই কিন্তু আমার মনে হয়, আমি যে কথা বলে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি, তার চেয়ে অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হয় মানুষ একটা কবিতার মধ্য দিয়ে, গানের মধ্য দিয়ে, নাটকের মধ্য দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল সেই সংগ্রামের পুরোধা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন ছাত্র। তিনি এর প্রতিবাদ শুরু করেন। ছাত্রলীগ নামে সংগঠন গড়ে তোলেন এবং তখনকার অন্যান্য ছাত্র সংগঠনসহ সবাইকে নিয়ে তিনি ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন। আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ প্রথম ধর্মঘট। সেই ধর্মঘটে শেখ মুজিব তখনকার ছাত্র নেতাসহ অনেকে গ্রেফতার হন। সেই থেকে আমাদের সংগ্রাম শুরু। তিনি বলেন, আমাদের আজকের যে স্বাধীনতা অর্জন এবং জাতির পিতার যে ঐতিহাসিক ভাষণ, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' সে এক অমর কবিতা। এ কবিতা অর্জন হয়েছে সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে। এর মধ্যে অনেক চড়াই-উতড়াই পার হতে হয়। আমরা তখন স্কুলের ছাত্রী। তখন রবীন্দ্র সাহিত্য বাতিল করা হলো, রবীন্দ্র সংগীত বাতিল করা হলো। বাংলা ভাষাকে বাংলা অক্ষরে লেখা না, কখনো আরবি শব্দে লেখার, কখনো ল্যাটিন শব্দে লেখা—এ রকম আঘাত আমাদের ওপর বারবার এসেছে। বাঙালি থেমে থাকেনি, এর প্রতিবাদ করেছে। তিনি আরও বলেন, আমি নাম নিতে চাই না, ওই সময় অনেকে যে যেভাবে পেরেছেন লিখেছেন। নাটক করেছেন, বই ছাপিয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন। যার জন্য গ্রেফতারও হতে হয়েছে কাউকে কাউকে কিন্তু থেমে থাকেনি কেউ। আমরা যখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন শুরু করলাম তখনো পথনাটক, কবিতা, আবৃত্তির মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে আমাদের। সেখানে অনেক বাধা-বিপত্তিও এসেছে। তখন যে কবিতা উৎসব হতো অনেক বাধার মধ্য দিয়েই করতে হতো। আমার অভ্যাস ছিল, আমি প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে যেতাম। হয়তো কখনো দূরে বসে থাকতাম বা গাড়িতে বসে থেকে শুনতাম। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব ২০২০, ২০২১ ও ২০২২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্টশালা মিলনায়তনে। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষ্যে এবারই প্রথমবারের মতো প্রদান করা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক। ২০২০-এর জন্য আবৃত্তিকার মৃত: গোলাম মোস্তফা, ২০২১-এ সৈয়দ হাসান ইমাম ও আশরাফুল আলম এবং ২০২২-এর জন্য পদক পান আবৃত্তিকার কাজী মদিনা, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি।