
নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ জুলাই, ২০২৫, 12:40 PM

৫ কোটি টাকার চেকের সঙ্গে জমির দলিলও নেন রিয়াদ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদের চাঁদাবাজির আরও কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এবার আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুল কালাম আজাদের কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার চেক ও একটি জমির দলিল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৬ জুন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুল কালাম আজাদের গ্রিন রোডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান রিয়াদ ও তার কয়েকজন সহযোগী।ওই সময় ‘মব’ তৈরির হুমকি দিয়ে তার গলায় জুতার মালা পরানোর ভয় দেখানো হয়। এরপর আজাদের কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার চেক ও একটি জমির দলিল নেন রিয়াদ। নবম জাতীয় সংসদের রংপুর-৬ আসনের এমপি ছিলেন আজাদ। এদিকে রিয়াদের ঢাকার ভাড়া বাসা থেকে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চারটি চেক উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
জানা গেছে, রিয়াদের বাসা থেকে উদ্ধার চারটি চেক সাবেক এমপির কাছ থেকে নেওয়া। বাকি আড়াই কোটি টাকার চেক রিয়াদের সহযোগীদের কাছে রয়েছে। তাদের নাম-পরিচয় পুলিশ পেয়েছে। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। চেক উদ্ধারের ঘটনায় রিয়াদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্রে জানা যায়, চেকগুলো আগস্টে ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া ‘নিট জোন প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের প্রতিষ্ঠান থেকে চেক ইস্যু করা হয়। তবে চেক কারও নামে দেওয়া হয়নি। শুধু সই ও টাকার অঙ্ক লেখা ছিল। উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে রিয়াদসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। রিয়াদসহ চারজন এখন সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছে।
রিমান্ডে থাকা অন্য তিনজন হলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না (২৪), সদস্য সাকাদাউন সিয়াম (২২) ও সাদাব (২১)। ডিএমপির ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নাখালপাড়ায় রিয়াদের ভাড়া বাসা থেকে চারটি চেক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় আলাদা একটি মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগী আগেই যদি পুলিশকে জানাতেন, তাহলে এ অপরাধ ঠেকানো যেত। পুলিশ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে, কী কারণে তারা চাঁদা দিয়েছিলেন। তাদের কোনো দুর্বলতা ছিল কিনা।
চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত কারও দলীয় পরিচয় মুখ্য বিষয় নয়। তদন্ত চলছে। আর কেউ জড়িত আছে কিনা, তা তদন্তে জানা যাবে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৬ জুন রিয়াদের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জনের একটি গ্রুপ আজাদের অফিসে ঢুকে টাকা দাবি করেন। টাকা না নিলে বাইরে অপেক্ষমাণ ২০০ লোক অফিসে ঢুকে মারধর করবে বলে শাসায়। তারা সাবেক এমপির ফোন কেড়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের দোসর বলে নানা হুমকি দিতে থাকে। এরপর তারা পাঁচ কোটি টাকার চেক ও জমির দলিল নিয়ে যায়। গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, আর কোন কোন জায়গা থেকে রিয়াদ ও তার সহযোগীরা চাঁদা দাবি করেছিল কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে।