সাবেক মন্ত্রী ও শিল্পপতি হারুনার রশিদ খান মুন্নুর ৭ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ
নিজস্ব প্রতিনিধি
০১ আগস্ট, ২০২৪, 4:06 PM
নিজস্ব প্রতিনিধি
০১ আগস্ট, ২০২৪, 4:06 PM
সাবেক মন্ত্রী ও শিল্পপতি হারুনার রশিদ খান মুন্নুর ৭ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ
আজ দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা ও সাবেক মন্ত্রী হারুনার রশিদ খান মুন্নুর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। হারুনার রশিদ খান মুন্নু একাধারে বিশিষ্ট শিল্পপতি,ব্যাবসায়ী,সামাজসেবক,সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী। শূন্য থেকে শীর্ষ শিল্পপতি হারুনার রশিদ খান মুন্নুর পৈতৃক বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামে।হারুনার রশিদ খান মুন্নু তার গ্রামের ইব্রাহিমপুর ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে বাণিজ্য শাখায় প্রথম বিভাগ পেয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন। তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৫৪ সালে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ৬০ টাকা বেতন আর ৩০ টাকা ভাতায় একটি চাকরি করেন সেসময়। বেতনের সেই টাকা থেকে মাসে ২০-৩০ টাকা করে বাড়িতে পাঠাতেন।
১৯৫৫ সালের ৩ আগস্ট হুরুন নাহার এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ১৯৫৬ সালে বি.কম পাস করে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি কোর্স শেষ করেন তিনি। আদমজীতে অডিট করার সময় সেখানকার এক কর্মকর্তা তাকে চাকুরির প্রস্তাব দিলেও তিনি ব্যবসার প্রতি তার আগ্রহের কথা জানান। প্রথম ব্যবসায় ২০ টাকার খাতা ২৩ টাকায় সরবরাহ করে তিনি ৭৫ টাকা মুনাফা করেন। সেই শুরু। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। খাতা সরবরাহ করে দুই বছরের মধ্যে নিজের প্রেস তৈরির টাকা হয়ে যায়। ঢাকার ওয়ারীতে প্রতিষ্ঠা করেন তার প্রথম শিল্প প্রতিষ্ঠান মুন্নু আর্টপ্রেস অ্যান্ড প্যাকেজিং। যার পূর্ণতা পায় মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। তিনি মুন্নু সিরামিক, মুন্নু জুটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু ফেব্রিকস,মুন্নু ট্রেনিং কমপ্লেক্স, মুন্নু অ্যাটায়ার লিমিটেডসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান করেছেন।
হারুনার রশিদ খান মুন্নু বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে এবং ২০০১ সালে মানিকগঞ্জ-২ ও মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তৃতীয়বারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে দুটি আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পর তিনি মন্ত্রী (দপ্তরবিহীন) হন।
কৃষিপ্রধান মানিকগঞ্জকে শিল্পাঞ্চলে রূপান্তর করার পেছনে তার অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে। মানিকগঞ্জে স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা, কবরস্থান সহ এমন কোন প্রতিষ্ঠান নাই তিনি সহযোগিতা করেননি। এরজন্য মানিকগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে ‘দানবীর’ হিসেবে স্মরণ করে। বর্তমানে তার স্ত্রী হুরুন নাহার মুন্নু এবং দুই কন্যা আফরোজা খানম রিতা ও ফিরোজা মাহমুদ এবং কন্যাদের স্বামী-সন্তান সহ অনেক গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার বড় মেয়ে আফরোজা খানম রিতা মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি।
আজ তিনি নেই। ২০১৭ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুন্নু সিটির ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দন হুরুন নাহার জামে মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। এদিকে মৃত্যুর তিন বছরেও প্রিয় বাবাকে একটি মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারেনি পরিবারের বড় মেয়ে মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আফরোজা খান রিতাসহ পরিবারের সদস্যরা। বাবার আদর্শ, কর্ম উদ্দীপনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিজের ভেতর ধারণ ও লালন করে পথ চলছেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই বাবার সততা আর আদর্শে মুগ্ধ ছিলেন রিতা। বাবার আদর্শের দীক্ষাতেই রিতা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাবার প্রতিষ্ঠিত মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মুন্নু ফেব্রিক্স, মুন্নু অ্যাটেয়ার, মুন্নু জুটেক্স, মুন্নু জুট স্টাফলার্স, মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মুন্নু নার্সিং কলেজসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানকে। বাবার মতো তিনিও হয়ে উঠেছেন একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তা। এই বরেণ্য ব্যাক্তি ১৭ আগস্ট ১৯৩৩ জন্মগ্রহণ করেন এবং ০১ আগস্ট ২০১৭ মৃত্যুবরণ করেন।