মদ বেচে রেকর্ড আয় কেরুর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২১ জানুয়ারি, ২০২২, 9:57 AM
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২১ জানুয়ারি, ২০২২, 9:57 AM
মদ বেচে রেকর্ড আয় কেরুর
যে কোনো সময়ের চেয়ে গত ৬ মাসে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় করেছে কেরু অ্যান্ড কোং লিমিটেডের ডিস্টিলারি বিভাগ। বিলেতি মদ ৯৪ হাজার ৭০ বক্স ও বাংলা মদ ৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৬৫ প্রুফলিটার বিক্রি হয়। বিলেতি মদ, বাংলা মদসহ ডিস্টিলারির ৬টি পণ্য বিক্রি করে গত ৬ মাসে আয় হয়েছে ১৭০ কোটি ২২ লাখ টাকারও বেশি। ৪২ কোটি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে ১২৭ কোটি ৭০ লাখ ৫১ হাজার টাকা মুনাফা হয়েছে ডিস্টিলারি থেকে মিলটির। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ৮৪ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভ্যাট বাদে ২৯ কোটি ৫৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা লাভ হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ডিস্টিলারি থেকে মোট আয় হয় ১৭৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সরকারকে ৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়েও লাভ হয় ১০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ৫ ইউনিটের মধ্যে ডিস্টিলারি ও জৈব সার কারখানা থেকে লাভ হয়।
ডিস্টিলারির মুনাফার টাকা দিয়ে অন্য ইউনিটের লোকসান মিটিয়েও এ অর্থবছরে প্রায় ৬০-৭০ কোটি টাকা মুনাফা হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। কেরু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চিনি, বাণিজ্যিক খামার ও পরীক্ষামূলক চালু খামারে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে চিনি কল ৪০ দিনের মাড়ায় কার্যক্রমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চিনিকলের প্রধান উপকরণ আখের সংকট থাকায় মিলটি গত বছরের তুলনায় এ বছর কম সময় মাড়াই করবে। আখ দীর্ঘমেয়াদি ফসল ও দাম অন্য ফসলের তুলনায় কম হওয়ায় কৃষকরা আখচাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। মিলটিকে বাঁচিয়ে রাখতে আখচাষ আধুনিকায়ন ও ফলন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বছর শেষে ডিস্টিলারি বিভাগের টাকায় লাভ-লোকসানের হিসাব কষেই মুনাফাতে রক্ষা পায় কেরুর অ্যান্ড কোম্পানির জীবন। নয়তো অন্য মিলের মতোই ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতো। ১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড গড়ে উঠে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন মিলটি পরিচালনা করছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সমস্যা আর সম্ভাবনার মধ্যে দিয়ে মিলের কার্যক্রম চলছে। ৮৪ বছরে মিল থেকে তিন অর্থ বছরে লাভের মুখ দেখেছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরের জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ ডিস্টিলারি বিভাগ থেকে পণ্য বিক্রি হয়েছে ৮৪ বছরের মধ্যে। কেরু অ্যান্ড কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এ অর্থ বছরের ৬ মাসে ডিস্টিলারি বিভাগ কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছে। ডিস্টিলারি বিভাগে রয়েছে ৯টি প্রকারের বিলেতি মদ। বিলেতি মদ ওল্ড রাম, জারিনা ভদকা, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, রোসা রাম, চেরি ব্র্যান্ডি অরেঞ্জ করাকাও, ফাইন ব্যান্ডি, গোল্ড রিবন জিন ও মল্টেড হুইস্কি। নতুন করে এখানে বিয়ার তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট দফতর। এ ছাড়াও নতুন দুটি বিক্রয় কেন্দ্র চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ২০২১ সালের জুলাই মাসে বিলেতি মদ বিক্রি হয় ৯২৩৩ বক্স, বাংলা মদ ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৫৫ লিটার, ডিনেচার স্পিরিট ২০ হাজার ৬৭৭ লিটার, রেক্টি ফাইট স্পিরিট ৫ হাজার ৩৩২ লিটার ও রেক্টি ফাইট স্পিরিট (হোমিও) ৩২০ লিটার বিক্রি হয়। ১৭ কোটি ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ টাকা বিক্রি হয়েছে। ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭৮ হাজার ২৫১ টাকা ভ্যাট বাদে ১২ কোটি ৭৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪১ টাকা মুনাফা হয়। আগস্ট মাসে বিলেতি মদ বিক্রি হয় ১০ হাজার ৬৯৭ বক্স, ডিনেচার স্পিরিট ৪৬ হাজার ৮৭৮ লিটার, বাংলা মদ ২ লাখ ২২ হাজার ৫৯৯ লিটার, রেক্টি ফাইট স্পিরিট ৫ হাজার ২৯১ লিটার, রেক্টি ফাইট স্পিরিট (হোমিও) ৪৮ লিটার ও অ্যালকোহল ১৯৭ লিটার বিক্রি হয়। ২১ কোটি ২ লাখ ৭১ হাজার ৮৪৩ টাকা বিক্রি হয়েছে। ৫ কোটি ৪১ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৮ টাকা ভ্যাট বাদে ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮ হাজার ৯৪৬ টাকা মুনাফা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে বিলেতি মদ বিক্রি হয় ১৪ হাজার ২৭৩ বক্স, বাংলা মদ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৬ লিটার, ডিনেচার স্পিরিট ৩৫ হাজার ২৯৭ লিটার, রেক্টি ফাইট স্পিরিট ২ হাজার ৬৭৬ লিটার, রেক্টি ফাইট স্পিরিট (হোমিও) ১৭৭ লিটার বিক্রি হয়। ২৬ কোটি ৫৪ লাখ ৬৬৬৬ টাকা বিক্রি হয়েছে। ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৩১ হাজার ৬৯৮ টাকা ভ্যাট বাদে ১৯ কোটি ৭৭ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৮ টাকা মুনাফা হয়। অক্টোবর মাসে বিলেতি মদ ১৭ হাজার ৭৯৯ বক্স, দেশি মদ ২ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৯ লিটার, ডিনেচার স্পিরিট ৪৭ হাজার ৪শ লিটার, রেক্টি ফাইট স্পিরিট ৬৬৮০ লিটার ও রেক্টি ফাইট স্পিরিট(হোমিও) ১৬শ লিটার বিক্রি হয়। ৩২ কোটি ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪৩ টাকার বিক্রি হয়েছে। ৭ কোটি ৯৫ লাখ ৭১ হাজার ২৯৮ টাকার ভ্যাট বাদে ২৪ কোটি ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৪ টাকা মুনাফা হয়। নভেম্বর মাসে বিলেতি মদ ১৯ হাজার ৩১৯ বক্স, দেশি মদ ২ লাখ ৬২ হাজার ৪৭১ লিটার, ডিনেচার স্পিরিট ৯৬ হাজার ৮৮৮ লিটার, রেক্টি ফাইট স্পিরিট ১০০ লিটার, রেক্টি ফাইট স্পিরিট(হোমিও) ২০২৭ লিটার ও এ্যালকোহল ৭০ লিটার বিক্রি হয়। যা ৩৪ কোটি ২৪ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৬ টাকা বিক্রি হয়েছে। ৮ কোটি ৪২ লাখ ২৫ হাজার ৫২৫ টাকা ভ্যাট বাদে ২৫ কোটি ৮২ লাখ ২৩ হাজার ৭০৯ টাকা মুনাফা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ বিলেতি মদ ২২ হাজার ৭৪৯ বক্স, বাংলা মদ ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৮ লিটার, ডিনেচার স্পিরিট ৮৪ হাজার ৫৩০ লিটার, রেক্টি ফাইট স্পিরিট ৬০৩০ লিটার, রেক্টি ফাইট স্পিরিট (হোমিও) ১৭৯৫ লিটার বিক্রি হয়। যা ৩৯ কোটি ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩৬ টাকা বিক্রি হয়। ৯ কোটি ৫৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৪ টাকা ভ্যাট বাদে ২৯ কোটি ৫৫ লাখ ৮৩ হাজার ১৯১ টাকা মুনাফা হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬০ হাজার ৮৩৪ কেস বিলেতি মদ বিক্রি করেছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দর্শনা তিনটি বিক্রয় কেন্দ্র থেকে বিলেতি মদ বিক্রি করা হয়। জুলাই মাসে বিলেতি মদ বিক্রি হয় ৯ হাজার ২২০ কেস। ঢাকায় ৫৯৮৩ কেস, চট্টগ্রামে ১২৪৩ কেস ও দর্শনায় ১৯৯৪ কেস। আগস্ট মাসে বিলেতি মদ বিক্রি হয় ১০৪৮৫ কেস। ঢাকায় ৫৬৮৫ কেস, চট্টগ্রামে ১৬৪৮ কেস ও দর্শনায় ৩১৫২ কেস। সেপ্টেম্বর মাসে বিলেতি মদ বিক্রি হয় ১১ হাজার ১৬১ কেস। ঢাকায় বিক্রি হয় ৬২২৪ কেস, চট্টগ্রামে ১৩৮৮ কেস ও দর্শনায় ৩৫৪৯ কেস। অক্টোবর মাসে বিলেতি মদ বিক্রি হয় ১২৩১৫ কেস। ঢাকায় ৭১১৩ কেস, চট্টগ্রামে ২১০৬ কেস ও দর্শনায় ৩০৯৬ কেস। নভেম্বর মাসে বিলেতি মদ বিক্রি হয় ১৩১১১ কেস। ঢাকায় বিক্রি হয় ৬৫০৮ কেস, চট্টগ্রামে ১৬৫০ কেস ও দর্শনায় ৪৯৫৩ কেস। ডিসেম্বর মাসে বিলেতি মদ বিক্রি হয় ১৫৮২৭ কেস। ঢাকায় বিক্রি হয় ১০ হাজার ৮৪ কেস, চট্টগ্রামে ২৫৯৬ কেস ও দর্শনায় ৩১৪৭ কেস। নতুন অর্থ বছরের প্রতি মাসেই নতুন নতুন রেকর্ড হয় মদ উৎপাদনে। করোনাকালে দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন ধরনের মদ আমদানি কম হওয়ায় দেশীয় মদের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় ডিস্টিলারি থেকে উৎপাদিত পণ্যর চাহিদা বাড়তে থাকে ক্রেতাদের কাছে। বিলেতি মদ কাচের বোতল ও প্লাস্টিক বোতলে করে বাজারজাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাচের বোতলে মদ বিক্রি সম্ভব হলে চাহিদা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানান, মিলটি আধুনিকায়নে কাজ শুরু হয়েছে। ডিস্টিলারি বিভাগটি ঢেলে সাজানো হবে। ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়েছে। পণ্য বিক্রি হয়েছে কয়েকগুণ বেশি। চিনি কলসহ যে ইউনিটে লোকসান আছে তা কাটিয়ে উঠতে নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ চলছে। গত অর্থবছরের চেয়ে এ অর্থবছরে প্রায় ৬০-৭০ কোটি টাকা লাভ হবে ভ্যাট ও সব খরচ বাদে। চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন মিলটি নিয়ে আশাবাদী।