বিচারকের সঙ্গে পিপির বেয়াদবি মেনে নেওয়া যায় না : হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ অক্টোবর, ২০২২, 3:13 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ অক্টোবর, ২০২২, 3:13 PM
বিচারকের সঙ্গে পিপির বেয়াদবি মেনে নেওয়া যায় না : হাইকোর্ট
পিরোজপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর মো. নোমানকে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খান মো. আলাউদ্দিনের হুমকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ‘একজন পিপির দায়িত্ব আদালতের পরিবেশ সুন্দর রাখতে বিচারককে সহযোগিতা করা। কিন্তু তিনি বিচারকের সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ আজ সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘পিরোজপুরের পিপি বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে একদিকে যেমন আইনজীবী হিসেবে অপরাধ করেছেন। আবার পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবেও অপরাধ করেছেন। তিনি বার কাউন্সিলের যে আইনজীবীর আচরণবিধি আছে সে আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন।
এখন তার বিরুদ্ধে যদি কনটেম্পট হয়, তাহলে জেল হবে।’ পরে আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য দুপুর ২টায় সময় নির্ধারণ করেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে এসময় আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর মো. নোমান পিপির বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পিরোজপুর জেলায় কর্মরত আছি। আমি প্রতিদিনের ন্যায় বিগত ২৫ জুলাই কার্যদিবসে যথারীতি এজলাস সময়ে এজলাসে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করছিলাম। আমার এজলাসে বিচার কার্য চলাবস্থায় আসামি মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান ছিদ্দীক, উপদেষ্টা, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিডিটেডের হাইকোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল মিস মামলায় ৬ সপ্তাহের অন্তবর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষ হলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক নিয়মিত জামিনের দরখাস্ত শুনানি চলছিল।’ ‘শুনানিকালে দুপুর আড়াইটার দিকে অভিযোগকারী (বাদী) ও আসামি উভয়পক্ষের ২৫/৩০ জন বিজ্ঞ আইনজীবী নিজেদের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে হট্টগোল সৃষ্টি করে স্বাভাবিক বিচারকার্য, জামিনের দরখাস্ত শুনানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করলে আমি এজলাসের পরিবেশ স্বাভাবিক করে শুনানি গ্রহণের স্বার্থে ১৫ (পনের) মিনিট মুলতবি দিয়ে এজলাস থেকে নেমে খাস কামরায় অবস্থান করি। তারপর যথারীতি আমি এজলাসে আসন গ্রহণ করে পুনরায় উল্লেখিত মামলাগুলোর ৩ নম্বর আসামি মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান ছিদ্দীকের নিয়মিত জামিন শুনানি শুরু করলে পুনরায় অভিযোগকারী (বাদী) ও আসামি উভয়পক্ষের ২৫/৩০ জন আইনজীবী নিজেদের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে এবং হট্টগোল সৃষ্টি করে। স্বাভাবিক বিচারকার্য জামিনের দরখাস্ত শুনানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করলে আমি বাধ্য হয়ে পুনরায় এজলাসের পরিবেশ স্বাভাবিক করে শুনানি গ্রহণের স্বার্থে ১০ (দশ) মিনিট মুলতবি দিয়ে এজলাস হতে নেমে খাস কামরায় অবস্থান করি।’ ‘তারপর যথারীতি আমি এজলাসে আসন গ্রহণ করে স্বাভাবিক বিচারকার্য (জামিন দরখাস্ত শুনানি) পরিচালনার স্বার্থে উল্লেখিত মামলা সমূহের অভিযোগকারী বাদীপক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী সাইদুর রহমান টিটো এবং আসামিপক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন ও শ ম হায়দার আলীদের তাদের পক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী ব্যতীত অন্যান্য আইনজীবীদের কিছু সময়ের জন্য (উল্লেখিত মামলা সমূহের জামিনের দরখাস্ত শুনানির সময়ের জন্য) এজলাসের বাইরে অবস্থান করার অনুরোধ করলে উভয়পক্ষের প্রয়োজনীয় কিছু সংখ্যক আইনজীবী ব্যতীত অন্যান্য আইনজীবীরা কিছু সময়ের জন্য আমার এজলাস কক্ষ ত্যাগ করে বাইরে অবস্থান করেন। কিন্তু তখন পাবলিক প্রসিকিউটর খান মো. আলাউদ্দিন ও তার সহযোগী কিছু বিজ্ঞ আইনজীবীকে নিয়ে এজলাসে অবস্থান করলে উল্লেখিত মামলার নিযুক্ত আইনজীবীরা তাতে আপত্তি করেন।’ ‘তখন আমি এজলাসের প্রিজাইডিং বিচারক হিসেবে স্বাভাবিক বিচারকার্য পরিচালনার প্রয়োজনে বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর, পিরোজপুর খান মো. আলাউদ্দিনকে অনুরোধ করে বলি আপনি উল্লেখিত মামলার বাদী বা আসামি কোনো পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী না এবং উল্লেখিত মামলা ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা ও তাতে রাষ্ট্রের কোনো স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতা নেই বিধায় আপনি স্বাভাবিক বিচারকার্য পরিচালনায় সহযোগিতার স্বার্থে কিছু সময়ের জন্য এজলাসের বাইরে অবস্থান করেন। কিন্তু পাবলিক প্রসিকিউটর আমার অনুরোধ উপেক্ষা করে হঠাৎ আমার এজলাসে উচ্চ স্বরে বিভিন্ন মন্দ ভাষায় (ব্যবহৃত ভাষা লেখার অযোগ্য) হুমকি-ধমকি প্রদান করে তার পিপিশিপের কর্তৃত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে আমার বিচারকার্যে (জামিন শুনানিতে) বাধা প্রদান করেন। তখন পাবলিক প্রসিকিউটর আমাকে এজলাস হতে নেমে যাওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করেন এবং একপর্যায়ে আমাকে গালমন্দ করে জোরপূর্বক আমার বিচারকার্য সাময়িক বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে হট্টগোল করে এজলাসে কর্মরত কর্মচারীদের ও বিচারপ্রার্থী জনসাধারণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে আমার এজলাসে উপস্থিত কয়েকজন বিজ্ঞ আইনজীবীর হস্তক্ষেপে পাবলিক প্রসিকিউটর খান মো. আলাউদ্দিন আমার এজলাস ত্যাগ করলে আমি উল্লেখিত মামলার আসামি মাওলানা হাফিজুর রহমান ছিদ্দীকের নিয়মিত জামিন শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করি এবং আমার স্বাভাবিক বিচারকার্য সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়ে এজলাস ত্যাগ করি।’ উল্লেখ্য যে, পাবলিক প্রসিকিউটর খান মো. আলাউদ্দিন সম্প্রতি তার পিপিশিপের কর্তৃত্ব প্রদর্শনের চেষ্টায় পিরোজপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে কর্মরত অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গেও প্রকাশ্য এজলাসে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন বলে আমার সহকর্মীরা আমাকে মৌখিকভাবে অবগত করেছেন।