বামনায় বিষখালীর তীরের মাটি ইটভাটায়, বেড়েছে ভাঙন
নিজস্ব প্রতিনিধি
০৯ নভেম্বর, ২০২১, 11:34 AM
নিজস্ব প্রতিনিধি
০৯ নভেম্বর, ২০২১, 11:34 AM
বামনায় বিষখালীর তীরের মাটি ইটভাটায়, বেড়েছে ভাঙন
বামনা উপজেলার বিষখালী নদী তীরের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে কৃষিজমি ও চরের মাটি কাটা হচ্ছে। এতে বিষখালীর ভাঙন বেড়েছে। বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করা হলেও মাটিকাটা বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বামনা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে মোট ১১ টি ইটের ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি ভাটা চলমান রয়েছে। এসব ভাটার জন্য মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে ফসলি জমি ও বিষখালী নদীর জেগে ওঠা চর থেকে। ভাটার মালিকরা গভীর রাত থেকে পাল্লা দিয়ে নদী তীরের মাটি নিজস্ব স্কেভেটর দিয়ে কেটে ট্রলারে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন ইটভাটায়। রামনা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি নুরে আলম হাওলাদার বলেন, মোস্তফা ফকিরের ভাটায় প্রতিবছর খোলপটুয়ার আশপাশে নদীর তীর ও কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়া হয়। এ বছর তারা খালের মোহনায় চরের মাটি কাটছে। জমি শাহ-আলম নামে এক ব্যক্তির। তিনি ভাটার মালিকের কাছে মাটি বিক্রি করেছেন। তবে নদী তীরের মাটি যার হোক, সেটা এভাবে ১৫-২০ ফুট গভীর করে কেটে নিলে ভাঙনের হুমকিতে পড়বে খোলপটুয়া বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বসতবাড়ি। এভাবে অবৈধ মাটিকাটা বন্ধে এখনই প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুড়া গ্রামের দুটি ইটভাটা। একটির নাম পিওর ব্রিক্স অন্যটি ইরা ব্রিক্স। এ দুটি ভাটাতেই পার্শ্ববর্তী খাল ও ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। ভাটা দুটি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে একটি বাজার, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আবাসন প্রকল্পের ঘর রয়েছে। ফলে প্রতিবছর ইট পোড়ার ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।
বামনা সদর ইউনিয়নেও চলমান রয়েছে ৩টি ইটভাটা। এর মধ্যে দুটি গাজী ব্রিক্স এবং অন্যটি এমকেএস ব্রিক্স। তিনটি ভাটাই নদীতীরে অবস্থিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার দূরে একটি ভাটার অবস্থান। পাশেই রয়েছে ফসলি জমি ও আবাসন প্রকল্প। তীরের মাটি কেটে নেওয়ায় নদীর পানি বেড়িবাঁধের সঙ্গে এসে ঠেকেছে। ফলে বাঁধগুলো রয়েছে হুমকির মুখে। সদর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য কাজল রেখা বলেন, আমার জমির চার পাশ থেকে ইটের ভাটায় মাটি কেটে নিয়েছে। জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। আমার আত্মীয় জমির মাটি বাবদ আমাকে মাত্র তিনশ টাকা ধরিয়ে দিয়েছেন। বামনা উপজেলা সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ওবায়দুল কবির আকন্দ দুলাল বলেন, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসব ভাটামালিক মোটা অঙ্কের অনুদান দেয়। শুধু তাই নয়, ভাটা মালিকরা মাটিকাটার শুরুতে প্রশাসন ও অসাধু সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে নদী তীরের মাটি কাটেন। এ জন্যই প্রশাসনকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। এমএমবি ব্রিক্সের মালিক মোস্তফা ফকির বলেন, ইট তৈরির মাটি কই পাব? আপনারা ও আমরা সমঝোতায় না আসলে চলব কেমনে। বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সরকার বলেন, বামনাকে রক্ষা করার জন্য এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ থাকলে অবশ্যই তা করা হবে। পাশাপাশি যদি কোনো ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থার সুযোগ না থাকে, সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে ভাটা কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট জমির মালিকদের বামনা উপজেলা রক্ষার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হবে।