ফুলবাড়ী কয়লাখনি ইস্যুতে নিজের অবস্থান জানালেন প্রেস সচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, 2:27 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, 2:27 PM
ফুলবাড়ী কয়লাখনি ইস্যুতে নিজের অবস্থান জানালেন প্রেস সচিব
ফুলবাড়ী, দিঘীপাড়া ও জামালগঞ্জের মতো বড় কয়লা মজুত উত্তোলন না করার সিদ্ধান্তকে ‘বড় ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতির জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা অপরিহার্য, এবং সাম্প্রতিক বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই ভুল আরও স্পষ্ট হয়েছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে তার এই মতামত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং এটি অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো নীতি নয়। রবিবার(৭ ডিসেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এই বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। শফিকুল আলম তার মন্তব্যের পেছনে জ্বালানি নিরাপত্তাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সরকারে যোগ দেওয়ার পর বিষয়টি তার কাছে আরো পরিষ্কার হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর বৈশ্বিক বাজারে এলএনজি ও তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আমাদের স্বাভাবিক দামের পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি দামে এলএনজি কিনতে হয়েছে। ওই দামে এলএনজি কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তখন আমাদের সামনে একমাত্র পথ থাকে—রিজার্ভ শেষ করে এলএনজি কেনা, না হয় মাসের পর মাস কারখানা বন্ধ রাখা। এই প্রেক্ষাপটেই তিনি বিশ্বাস করেন, ফুলবাড়ীর মতো বড় কয়লা মজুত থেকে কয়লা না তোলায় বাংলাদেশ বড় ভুল করেছে। তার মতে, যদি এশিয়ান এনার্জির চুক্তি ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকে, তবে সরকারের উচিত ছিল সেসব ত্রুটি সংশোধন করে বিহেপি বিলিটন বা রিও টিন্টোর মতো নতুন অংশীদার খোঁজা। তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬০০ থেকে ৭০০ ডলার। প্রেসসচিব স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, তার এই পোস্ট সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ক্ষমতায় লেখা। তিনি বলেন, আমার মতামত কোনো সরকারি নীতির প্রতিফলন নয়। আমার জানামতে, এই সরকারের ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমার পোস্টটি ছিল কেবল একটি ব্যক্তিগত ভাবনা। তিনি গত দুদিন ধরে তার লেখার বিষয়ে আসা গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানান এবং সমালোচকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ২০০৬ সালের ফুলবাড়ীর ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তখন এএফপির সংবাদদাতা হিসেবে সম্ভবত তিনিই প্রথম বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, তখন আমি এসব হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছিলাম, আজও করছি। তিনি স্বীকার করেন, বহু বছর ধরে পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীরা আন্দোলন দমনে ‘ট্রিগার হ্যাপি’ হয়ে উঠেছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার এই সহিংসতার চক্র ভাঙতে কঠোর পরিশ্রম করছে। বামপন্থীদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, মানবাধিকার, সংখ্যালঘু অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে তাদের দৃঢ় অবস্থানকে তিনি সবসময় প্রশংসা করেছেন। তবে অর্থনৈতিক বিষয়ে বামপন্থীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের আন্দোলন সবসময় বাস্তবসম্মত ফল বয়ে আনেনি। তিনি মনে করেন, পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা, শিশুশ্রম বন্ধ, এবং নিরাপত্তা মান উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এসেছে মূলত পশ্চিমা ক্রেতা ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর চাপ থেকে, বামপন্থী আন্দোলন থেকে নয়।