নাগরিকত্ব আইন সহজ করছে কানাডা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৫ নভেম্বর, ২০২৫, 11:10 AM
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৫ নভেম্বর, ২০২৫, 11:10 AM
নাগরিকত্ব আইন সহজ করছে কানাডা
বংশানুক্রমিক নাগরিকত্ব আইনে বড় ধরনের সংস্কার করছে উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা। ‘সেকেন্ড-জেনারেশন কাট-অফ’ নিয়ম বাতিল করতে নতুন একটি আইন আনছে দেশটির সরকার। অর্থাৎ কানাডীয় নাগরিকের বিদেশে জন্ম নেওয়া সন্তানদের নাগরিকত্ব প্রদানের প্রক্রিয়াকে সহজ করতে এই উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত বিল সি-৩ — সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট (২০২৫) সংশোধন আইন গত সপ্তাহে রয়্যাল অ্যাসেন্ট পেয়েছে। কানাডা সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, এই পদক্ষেপ সিটিজেনশিপ অ্যাক্টকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, একই সঙ্গে কানাডীয় নাগরিকত্বের মান অক্ষুণ্ণ রাখছে। এখন থেকে পুরোনো নিয়মে বাদ পড়া কানাডীয়রা তাদের বিদেশে জন্ম নেওয়া বা দত্তক নেওয়া সন্তানদের কাছে নাগরিকত্ব পৌঁছে দেওয়ার ন্যায্য ও সুস্পষ্ট উপায় পাবে।
এই আইনে সুবিধা পাবেন যারা
নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর, যারা আইনের প্রবর্তনের আগের জন্ম — এবং যাদের পুরোনো প্রথম-প্রজন্ম সীমা বা অতীতের অন্য পুরোনো বিধান না থাকলে নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব ছিল — তারা কানাডীয় নাগরিকত্ব পাবেন।
এছাড়া বিদেশে জন্মানো বা দত্তক নেওয়া কোনও কানাডীয় অভিভাবক তার বিদেশে জন্মানো বা দত্তক নেওয়া সন্তানকে নাগরিকত্ব দিতে পারবেন, যদি তিনি কানাডার সঙ্গে যথেষ্ট দৃশ্যমান সম্পর্ক দেখাতে পারেন এবং এই সন্তান আইন কার্যকর হওয়ার তারিখে বা এরপর জন্মায় বা দত্তক হয়।
সরকার বলেছে, এই পদ্ধতি পরিবারগুলোর জন্য ন্যায্যতা নিশ্চিত করে এবং একই সঙ্গে এই নীতি জোরালো করে যে বংশানুক্রমিক নাগরিকত্বের ভিত্তি হওয়া উচিত কানাডার সঙ্গে প্রকৃত ও প্রমাণযোগ্য সম্পর্ক।
কবে কার্যকর হবে আইন
সরকার জানিয়েছে, বিলটি কার্যকর হবে অর্ডার-ইন-কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্ধারিত একটি তারিখে, যা পরে প্রকাশ্যভাবে জানানো হবে। ততদিন পর্যন্ত প্রথম-প্রজন্ম সীমার প্রভাবে থাকা ব্যক্তিদের জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
কানাডার ইমিগ্রেশন, রিফিউজি ও সিটিজেনশিপ–মন্ত্রী লিনা মেটলেজ ডিয়াব বলেন, বিল সি-৩ আমাদের নাগরিকত্ব আইনে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো সমাধান করবে এবং বিদেশে জন্মানো বা দত্তক নেওয়া সন্তানসহ পরিবারগুলোর জন্য ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনবে। এটি আগের আইনে বাদ পড়া মানুষদের নাগরিকত্ব দেবে এবং ভবিষ্যতের জন্য আধুনিক পরিবার কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সুস্পষ্ট নিয়ম স্থাপন করবে। এসব পরিবর্তন কানাডীয় নাগরিকত্বকে আরও শক্তিশালী ও সুরক্ষিত করবে।
পুরোনো আইনটি কী ছিল
বংশানুক্রমিক কানাডীয় নাগরিকত্বের প্রথম-প্রজন্ম সীমা ২০০৯ সালে চালু হয়। এই সীমা অনুযায়ী, কোনও শিশু যদি কানাডার বাইরে জন্মায় বা দত্তক হয়, তবে সে নাগরিকত্ব পাবে না যদি তার কানাডীয় অভিভাবকও কানাডার বাইরে জন্মে বা দত্তক নেওয়া হয়ে থাকেন। এই সীমাবদ্ধতা বহু ভিন্নদেশের বংশদ্ভুত কানাডীয়দের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করেছিল, যাদের সন্তান বিদেশে জন্মেছিল।
২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর অন্টারিও সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিস রায় দেয়, বংশানুক্রমিক নাগরিকত্বের প্রথম-প্রজন্ম সীমা সংশ্লিষ্ট সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো অসাংবিধানিক।
কানাডা সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেনি, কারণ তাদের মতে এই আইন বিদেশে জন্মানো কানাডীয়দের সন্তানের জন্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ ফলাফল তৈরি করেছিল।
এক সাক্ষাৎকারে ‘লস্ট কানাডিয়ানস’-এর প্রতিষ্ঠাতা ডন চ্যাপম্যান বলেন, আধুনিক কানাডীয় পরিবারের বৈশ্বিক গতিশীলতাকে প্রতিফলিত করতে সিটিজেনশিপ অ্যাক্টকে হালনাগাদ করার মাধ্যমে সরকার নাগরিকত্ব প্রাপ্তিকে আরও ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত করেছে। সূত্র: এনডিটিভি