নদীতে ইলিশের দেখা নেই, আকাশছোঁয়া দাম বাজারে
নিজস্ব প্রতিনিধি
২২ জুন, ২০২৫, 11:16 AM

নিজস্ব প্রতিনিধি
২২ জুন, ২০২৫, 11:16 AM

নদীতে ইলিশের দেখা নেই, আকাশছোঁয়া দাম বাজারে
বরগুনার সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ডালভাঙ্গা গ্রামের নারী জেলে লাইলী গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ছোট ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে বিষখালী নদীতে সারা দিনে মাত্র ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ এবং দুটি জাটকা পেয়েছেন। শেষ সময়ে জালে আটকে কয়েকটি ছোট পোয়া মাছও। মাছ বিক্রি করে আয় হয়েছে এক হাজার টাকা, কিন্তু খরচ হয়েছে ৬০০ টাকা। হাতে থাকল মাত্র ৪০০ টাকা। তিনি বলেন, 'বঙ্গোপসাগরের মোহনায় যেতে পারিনি দুর্যোগের কারণে। বিষখালীর ভেতরে মাছ আসছে না ডুবোচরের জন্য। তাই মাছ মিলছে কম।' একই চিত্র দেশের অন্যান্য নদীতেও। দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ মে থেকে মেঘনা, ইলিশা ও কালাবদর নদীতে ইলিশ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ইলিশ এখনও মিলছে না। ফলে দেশের বিভিন্ন ইলিশ আড়তে সরবরাহ কমেছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় বেড়েছে ইলিশের দাম। বরিশাল মৎস্যবন্দরের ব্যবসায়ী জহির শিকদার বলেন, 'মেঘনা, কালাবদর, কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ নদীর মাছ বরিশালে আসে। শুক্রবার ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। ১ কেজির ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়।' তবে সাগরের ইলিশের দাম কিছুটা কম হলেও নদীর ইলিশের দাম বাড়তি। ভোলা, চাঁদপুর, বরিশালের আড়তগুলোতে চলতি বছরের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে। ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার টাকার ওপরে। রাজধানীতে মোকামের দামের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ১৮ জুন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ইলিশের মূল্য নির্ধারণের অনুরোধ করেছেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, 'ইলিশের দাম দুই হাজার টাকা কেজির বেশি হওয়া ঠিক নয়। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন উদাহরণ সৃষ্টি করতে বিশেষ দামে ইলিশ বিক্রি করতে পারে।' বিশেষজ্ঞরা জানান, ইলিশ গভীর জলের মাছ হওয়ায় নদীর গভীরতা কমলে জালে সহজে ধরা পড়ে না। তাছাড়া বৃষ্টি ও পানিপ্রবাহ বাড়লে ইলিশ বেশি পাওয়া যায়। জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর নিরাপত্তা সংকট, ডুবোচর, গবেষণার ঘাটতি এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাবে ইলিশ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় ৩৮ কোটি জাটকা ধরা পড়ে—যদি এসব ইলিশ অসময়ে না ধরে স্বাভাবিক বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়া যায়, তবে ইলিশ উৎপাদন বেড়ে যাবে। বর্তমানে ইলিশ ডিম পাড়ার জন্য হাতিয়া ও সন্দ্বীপ এলাকায় বেশি যাচ্ছে। নদীর ওপরের দিকগুলো অনিরাপদ হয়ে ওঠায় তারা আগের মতো পদ্মা-মেঘনায় যাচ্ছে না। জেলেরা অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় আধুনিক ট্রলারের দাপটে গভীর সাগরে বাংলাদেশের ইলিশ কমে যাচ্ছে, ফলে নদীতেও কম ধরা পড়ছে। সূত্র: কালের কণ্ঠ