ঢাকা ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ীই শেখ হাসিনাকে ফেরানো যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন স্ত্রী, কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চিরনিদ্রায় শায়িত উপদেষ্টা হাসান আরিফ দুর্নীতির অভিযোগে যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: পরিবেশ উপদেষ্টা হিলিতে কমেছে আলু-পেঁয়াজের দাম চপস্টিক দিয়ে মিনিটে ৩৭টি ভাত খেয়ে গিনেস রেকর্ডে সুমাইয়া ইনস্টাগ্রামের নতুন এআই ফিচারে থাকছে যেসব সুবিধা বায়ুদূষণে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা, শীর্ষে দিল্লি

দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উত্তরাঞ্চলে

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ জানুয়ারি, ২০২২,  10:55 AM

news image

মৌসুমের শুরুতে শীতের তেমন প্রকোপ না থাকলেও মাঘের মধ্যভাগে এসে হঠাৎ শীতের দাপট শুরু হয়েছে। গতকাল পারদ নেমে গেছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। সারাদেশে মাত্র একদিনের ব্যবধানেই ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেয়েছে তাপমাত্রা। দুই-তিন দিন বৃষ্টির পর দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ এবং গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, যশোর,কুষ্টিয়াসহ ২৩ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। এসব জনপদে তাপমাত্রা ৭-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল গতকাল। করুন অবস্থা উত্তরবঙ্গের জনপদে। হাড় কাঁপানো শীতে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কুয়াশার সঙ্গে তীব্র শীতের কামড় মানুষকে কাবু করে ফেলেছে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চলছে। আগামী কয়েকদিন শীতের প্রকোপ আরও বাড়বে। কমবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা। হঠাৎ শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে জ্বর-সর্দি, কাশি, অ্যাজমা, সাইনোসাইটিস, ইসনোফিলসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শীতে করোনার প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা থাকায় চিকিৎসকরা রোগীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিচ্ছেন। সেচনির্ভর বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে কৃষকেরা অনেক কষ্টে ক্ষেতে কাজ করছেন। শীতের তীব্রতায় গ্রামের হাটবাজার ও শহরে লোকসমাগম কমে গেছে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কারণে আবহাওয়ার এমন রূপ দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন,জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে শীত পৌষের শুরুতে অনুভূত হওয়ার কথা ছিল সেটি মাঘের মধ্যবর্তী সময়ে অনুভূত হচ্ছে। কয়েক দিন শীতের তীব্রতা থাকতে পারে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একইসঙ্গে বেড়েছে বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগ। ফলে বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু ও মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ৪-৫ ফেব্রুয়ারি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তখন তাপমাত্রা আবার কমবে। তবে তা শুধু রাতে কমবে। সে সময় আরেকটা শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। তিনি জানান,গতকাল শুক্রবার দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই মৌসুমে তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা । কোথাও কোথাও বৃহস্পতিবার থেকে এক দিনের ব্যবধানে গতকাল শুক্রবার তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৭ ডিগ্রি, যে কারণে মানুষের মধ্যে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের শিকার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের প্রধান নিদর্শন হচ্ছে- শীত বা উষ্ণতা যেটাই ধরি না কেন, সেটা সর্বোচ্চ মাত্রায় ঘটবে এবং ঘন ঘন আবির্ভূত হবে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন,শীত মৌসুমে সাধারণত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমদিক থেকে বাংলাদেশমুখী বাতাসের গতি থাকে। সেটাও শীতল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বষার্র পর মেঘমুক্ত আকাশ। সাধারণত আকাশ মেঘলা থাকলে বিকিরণ প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠ শীতল হতে সময় লাগে। তাপমাত্রা ভূপৃষ্ঠে বেশিক্ষণ থাকতে পারে। ফলে ধরণী শীতল হতে না হতেই নতুন দিনে সূর্যের আগমন ঘটে। ফলে মেঘমুক্ত আকাশ ধরণীকে দ্রুত শীতল করে। পাশাপাশি দীর্ঘ-রজনী সূর্যের আগমন বিলম্বিত করে। এসব কারণ উপস্থিত থাকায় ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাসের গতির জেট এক্সট্রিম (শীতল বাতাসের লাইন বা যেখানে তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রি) নিচে (ভূপৃষ্ঠের দিকে) নেমে এসেছে। ফলে দ্রুত তাপমাত্রা কমে আসে। এসব কারণ মিলিয়েই বাংলাদেশে শীতের প্রকোপ বেড়েছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, হিমালয় পাদদেশীয় এই জেলায় মাঝারী শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা সারাদেশের রেকর্ডকৃত তাপমাত্রার মধ্যে সর্বনিম্ন। রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই শৈত্যপ্রবাহ আরও দুই/তিনদিন অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালের পর থেকে শৈত্যপ্রবাহের সাথে উত্তরীয় হিমেল হাওয়ায় তাপমাত্রা নিম্নগামী হতে শুরু করে। গতকাল সকাল পর্যন্ত প্রকৃতি কুয়াশাচ্ছন্ন থাকার পর দুপুরে আকাশে কিছু সময়ের জন্য সূর্য দেখা গেলেও তাতে উষ্ণতা ছিলো না। তার সাথে উত্তরীয় হিমেল হাওয়ার প্রকোপে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতি আরও দুই থেকে তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি ও তেঁতুলিয়া সংবাদদাতা জানান,জেলার তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় মৌসুমের সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করছে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। গত বৃহস্পতিবার ৯.৬ ও বুধবার ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তীব্র শীত ও ভারি শৈত্য প্রবাহের কারণে তেঁতুলিয়া দেশের শীতপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিণত হয়েছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি এই দুই মাসে ৪৫ দিনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। রাত থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত ভারি শৈত্যপ্রবাহের ঠাণ্ডার প্রকোপে বিপাকে পড়েছে সর্বসাধারণ মানুষ। খড়-কুটো আগুনে জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায় প্রান্তিক জনপদের মানুষগুলোকে।

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, আট ডিগ্রী তাপমাত্রায় মাঘের হার কাঁপানো শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ঈশ্বরদীর জনজীবন। বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সাথে উত্তরের হিমেল বাতাসে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছে পড়েছে বৃদ্ধ, শিশু ও নিম্নআয়ের মানুষ। গতকাল শুক্রবার ঈশ্বরদীতে এবারের মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগিÌ সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। শীতের কারণে ঈশ্বরদী শহরে মানুষের সমাগম কমে গেছে। জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ী টিলা ও হাওর বেষ্টিত জনপদ মৌলভীবাজারে গেল কয়েক দিন থেমে থাকার পর আবার হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গতকাল সকাল ৯ টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হাড় কাঁপানো শীতে মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছে। হাওর ও নদী তীরবর্তী গ্রাম এলাকায় দিনে ও রাতে খড়খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন অনেকেই। রাতে শীতের তীব্রতা বেড়ে তা সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। কন কনে শীত ও হিমেল হাওয়ায় কারণে সবচেয়ে বেশী হাওরপাড় ও চা বাগান এলাকার শ্রমজীবী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। গরম কাপড়ের দোকানে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ভীড় প্রতিদিনই বাড়ছে।-সূত্র: ইত্তেফাক 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম