তালিকা হালনাগাদ, চাপে আত্মহত্যা করছে ভারতের ভোটকর্মীরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, 11:09 AM
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, 11:09 AM
তালিকা হালনাগাদ, চাপে আত্মহত্যা করছে ভারতের ভোটকর্মীরা
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে এখন চলছে এক অভাবনীয় কর্মযজ্ঞ। প্রায় একশ কোটি ভোটারের বিশাল তথ্যভাণ্ডার যাচাই-বাছাই ও সংশোধনের কাজে নেমেছেন কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারী। উত্তরপ্রদেশসহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বর্তমানে এই কার্যক্রম চলছে যেখানে প্রায় ৫০ কোটি ভোটারের নথিপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ২০০৩ সালের পুরনো তালিকাটি নতুন করে ঢেলে সাজানোর এই প্রক্রিয়ায় একদিকে যেমন সময়ের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে, তেমনি অন্যদিকে রয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক আর প্রশাসনিক জটিলতা। নয়ডার একটি স্কুলে কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষক প্রেম লতা গত দেড় মাস ধরে প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে রাত অবধি ভোটার তালিকার কাজ করছেন। তার মতো ৫ লক্ষাধিক কর্মীকে এই কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে যাদের মাসিক অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১ হাজার রুপি। লতা জানান, ৯৪৫ জন ভোটারের মধ্যে তিনি এখন পর্যন্ত ৬০০ জনের তথ্য যাচাই করতে পেরেছেন। বাকিদের অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন, কেউ মারা গেছেন আবার কেউ কেউ একেবারেই ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্রের ঘাটতি এই প্রক্রিয়াকে আরও কঠিন করে তুলেছে। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিক এবং বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে তথ্য মেলানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই বিশাল কর্মকাণ্ড নিয়ে ভারতের রাজনীতিতেও উত্তাপ ছড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা এই তালিকার মাধ্যমে বিরোধীদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে লক্ষ লক্ষ নাম তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়েছে যার মধ্যে অনেক জীবিত ব্যক্তির নামও রয়েছে বলে দাবি করছে বিরোধী দলগুলো। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে এই প্রক্রিয়ার পক্ষ নিয়ে বলেছেন, এটি কেবল বৈধ ভোটার নিশ্চিত করার একটি পদক্ষেপ মাত্র। তবে রাজনৈতিক চাপ আর কাজের পাহাড়সম বোঝায় বিপর্যস্ত অনেক মাঠ পর্যায়ের কর্মী আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছেন বলে সংসদে পেশ করা তথ্যে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত ২০২৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগেই পুরো দেশের তালিকা চূড়ান্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে এই ক্লান্তিকর ও বিতর্কিত মহোৎসব।
সূত্র: সিএনএন