জাপানি মায়ের কাছে আরও দুই সপ্তাহ থাকবে দুই শিশু
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ জানুয়ারি, ২০২২, 12:03 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ জানুয়ারি, ২০২২, 12:03 PM
জাপানি মায়ের কাছে আরও দুই সপ্তাহ থাকবে দুই শিশু
জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছেই আরও দুই সপ্তাহ থাকবে তার দুই সন্তান। জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা রাজধানীর বারিধারার হোটেল ইসকর্ট প্যালেসে থাকবে। তবে রোজ সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় শিশুদের সঙ্গে তাদের বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ দেখা করতে পারবেন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী আদেশ দেবেন আপিল বিভাগ। রোববার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির।
আর ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মারুফুল ইসলাম। আপিল বিভাগ শুনানিতে বলেন, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে আমরা এই মামলা শুনব। পরে আদালত শুনানির জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। আদালত বলেন, ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের আদেশ বহাল থাকবে। এর আগে ৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এই মামলার শুনানি ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেন। এরও আগে, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর দুই শিশু ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মা জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানোর কাছে থাকবে বলে আপিল বিভাগ আদেশ দেন। এরিকোর আইনজীবী শিশির মনিরের তথ্যমতে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো (৪৬) ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন সন্তান জন্ম নেয়। তারা হলো-জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) ও সানিয়া হেনা (৭)। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে ডিভোর্স আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে। পরে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। চার দিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। এরিকো বাংলাদেশে এসে এ নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আদালত গুলশানে একটি ভাড়া বাসায় সবাইকে আলাদা কক্ষে বসবাসের অনুমতি দেন। পাশাপাশি সমঝোতা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। কিন্তু উভয়পক্ষের আইনজীবী কয়েকবার বৈঠকেও সমঝোতায় আসতে পারেননি। সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মেয়েদের এরিকোর সঙ্গে গুলশানের বাসায় থাকার আদেশ দেন। আর বাবা ইমরান শরীফকে দিনের বেলা তাদের সঙ্গে দেখা ও সময় কাটাতে পারবেন বলে সুযোগ দেন। পরে ৩১ অক্টোবর ২ রিটের শুনানি শেষে ২১ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।