বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দেখা দিয়েছে ব্যতিক্রমী উৎসাহ–উদ্দীপনা। কয়েক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে করে লাখো নেতা–কর্মী ও সমর্থক ঢাকায় আসছেন। বিশেষ করে পূর্বাচলের ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফিট) এলাকায় নির্মিত গণসংবর্ধনা মঞ্চের আশপাশে জমায়েত ক্রমেই বেড়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) থেকেই মঞ্চের সামনে অবস্থান নিতে শুরু করেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। জাতীয় ও দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, স্লোগান ও প্ল্যাকার্ডে পুরো এলাকা পরিণত হয় উৎসবমুখর জনসমুদ্রে। এই ভিড়ের মধ্যেই নজর কেড়েছে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। শেরপুর থেকে আসা অটোচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন কাঁধে করে নিয়ে এসেছেন প্রায় ৫০ কেজি ধান। শীতের রাতেও খোলা গায়ে রাস্তাতেই কাটিয়েছেন পুরো রাত। মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘শেরপুর থেকে এসেছি শুধু প্রিয় নেতাকে দেখব বলে। কাঁধে প্রায় ৫০ কেজি ধান নিয়ে সারারাত খালি গায়ে রাস্তায় ছিলাম। আমার কোনো শীত লাগেনি, উল্টো গরম লাগছে। আমার নেতা আসছেন—শীত আবার কীসের? নেতাকে খুব ভালোবাসি। তাকে না দেখে এখান থেকে যাব না। ধানগুলো তাকেই দিতে চাই।’ বুধবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তারেক রহমান। শিডিউল অনুযায়ী, ফ্লাইটটি সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে সিলেটে প্রথম অবতরণ করবে। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে এবং সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফিট) এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। কুড়িল মোড়সংলগ্ন সড়কের উত্তর পাশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৪৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৬ ফুট প্রস্থের একটি বিশাল মঞ্চ। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ফুল দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি জুলাই এক্সপ্রেসওয়ের গণসংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখানে উপস্থিত নেতা–কর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেবেন তিনি। পরে চিকিৎসাধীন মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখান থেকে তিনি গুলশান-২ নম্বরের বাসভবনে ফিরবেন। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ১৮ মাস কারাবন্দী ছিলেন তারেক রহমান। মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। এরপর দীর্ঘ সময় একের পর এক মামলার কারণে দেশে ফেরা সম্ভব হয়নি। অবশেষে দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরছেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।