ঢাকা ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
রংপুরে পদ্মরাগ ট্রেনের ৬ বগি লাইনচ্যুত পুলিশের ৯ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর লিবিয়ায় মানবপাচার চক্রের ঘাঁটিতে অভিযান, ২৫ বাংলাদেশি আটক দেশের প্রয়োজনেই মার্কিন কোম্পানি থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদের নাম তালিকা থেকে বাদ : মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় মন্ত্রী-এমপিদের প্লট দিতে বন কেটেছে রাজউক: উপদেষ্টা রিজওয়ানা রাষ্ট্র সব ধর্মের সমান মর্যাদা দিতে বাধ্য : প্রধান উপদেষ্টা ছেলের বন্ধুরা আমাকে ‘দিদি’ বলে ডাকে: শ্রাবন্তী ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরুরি নির্দেশনা জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র চলছে

আয়ানের মৃত্যু নিয়ে রিপোর্ট লোক দেখানো ও হাস্যকর : হাইকোর্ট

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ জানুয়ারি, ২০২৪,  4:22 PM

news image

সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট লোক দেখানো (আইওয়াশ) ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালত বলেন, দায় এড়ানোর জন্যই তারা (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) এ ধরনের রিপোর্ট দাখিল করেছে। শিশু আয়ানের অ্যাজমা সমস্যা থাকার কথা জানার পরও কেন চিকিৎসকরা অপারেশনের জন্য এতো তাড়াহুড়া করলেন?

শিশু আয়ানের সুন্নতে খৎনা করার সময় যে পরিমাণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে, হার্টের বাইপাসেও এতো ওষুধ লাগে না বলে মন্তব্য করেন আদালত। আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন। প্রতিবেদনটি আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। এর আগে রোববার (২৮ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।  প্রতিবেদনে দেখা যায়, সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের মতামত অংশে বলেছে, ৫ বছর ৮ মাস বয়সী আয়ানের ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা (হাঁপানি) ছিল। এই বয়সে অটো পিক বা অ্যালার্জিক অ্যাজমা হয়ে থাকে। ব্রঙ্কিায়াল অ্যাজমা অ্যালার্জেন (অতি সংবেদনশীলকারক) দিয়ে হয়। অস্ত্রোপচারের আগে আয়ানকে অ্যানেস্থেসিয়া বা সংবেদনহীন করতে প্রয়োগ করা ইনজেকশন প্রোফোফল মারাত্মক অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া (অ্যানাফিল্যাকটয়েড রিয়্যাকশন) সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে শ্বাসতন্ত্র সংকুচিত হয়ে (ল্যারিঙ্গো স্পাজম) বা (ব্রঙ্কোস্পাজম) শ্বাসনালীর আশপাশের পেশি শক্ত হয়ে খিঁচুনি হয়ে থাকতে পারে। যা অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ম্যানেজ করেছেন।  চার নম্বর মতামতে বলা হয়েছে, সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) ও ওষুধ (মেডিকেশন) দিয়ে আয়ানের হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনতে ১০ মিনিটের মতো সময় লেগেছিল। যার কারণে হাইপক্সিক ব্রেন ইনজুরি (মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়ে মৃত্যু) হয়ে আয়ানের মৃত্যু হতে পারে। তখন সিটি স্ক্যান বা ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম-ইসিজি করলে হাইপক্সিক ব্রেন ইনজুরি হয়েছিল কি না, তা জানা যেত। তাছাড়া সিপিআরের কারণে (রিব ফ্র্যাকচার) পাঁজরের হাড়ও ভেঙে যেতে পারে বলেও মতামতে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, সিপিআর একটি জীবনদায়ী পদ্ধতি। মানুষের হৃদযন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে দুই হাতে বুকে চাপ দিয়ে শরীরে রক্ত ও অক্সিজেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়ান ‌চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য আয়ানকে মাঝে মাঝে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া লাগতো। সুন্নতে খৎনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়ান ‌চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য আয়ানকে মাঝে মাঝে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া লাগত। সুন্নতে খৎনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।

প্রতিবেদনের মতামত অংশে আরও বলা হয়, শিশু আয়ানের অপারেশনের সময় স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টে দাখিল করা ১৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে উপ-পরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

চার দফা সুপারিশ

সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মতো আর কারো যেন মৃত্যু না হয়, এজন্য চার দফা সুপারিশ করেছে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি।

১. হাসপাতালে একাধিক অ্যানেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া।

২. রোগী ও রোগীর আত্মীয়-স্বজনকে অ্যানেসথেসিয়া ও অপারেশনের ঝুঁকিগুলো ভালোভাবে অবহিত করা।

৩. হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা রাখা।

৪. সরকারের অনুমোদনের পর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা।

গত ২২ জানুয়ারি শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন ২৫ জানুয়ারি দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। সেদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। পরে সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়।

গত ১৫ জানুয়ারি শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি দেশের সব সরকার অনুমোদিত ও অননুমোদিত হাসপাতাল ক্লিনিকের তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

একদিন আগে ১৪ জানুয়ারি ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিটের শুনানি শেষ হয়।

গত ৯ জানুয়ারি শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে শিশু আয়ানের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের ডাক্তারি সনদ বাতিল ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। পরে শিশু আয়ানের বাবা রিটে পক্ষভুক্ত হন। নতুন করে রিটে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়। গত ৮ জানুয়ারি রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নাতে খৎনা করাতে গিয়ে টানা সাত দিন লাইফ সাপোর্টে থেকে শিশু আয়ান মারা যায়।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম