ঢাকা ২৯ মার্চ, ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম
রংপুর স্নেহা নার্সিং কলেজে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত কাল ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না: ওবায়দুল কাদের পতেঙ্গায় নোঙ্গররত ফিশিং বোটে আগুন, দগ্ধ ৪ সরকার সারাদেশে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে : মির্জা ফখরুল জিম্মি জাহাজ উদ্ধার প্রসঙ্গে যা জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দি মারিয়াকে হত্যার হুমকিদাতা গ্রেপ্তার বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাপকে গুলি করে হত্যা বরিশালে মসজিদে আগুন ত্রিশালে বাস চাপায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

বিশৃঙ্খল বিএনপি: আজীবন বহিষ্কারকেও পাত্তা দিচ্ছেন না

#

২২ মে, ২০২৩,  9:20 PM

news image

-অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া-


আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিএনপি বর্জনের ঘোষণা দিলেও প্রায় প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।  বরিশালে  সিটিতে তার দলের সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কাউন্সিলর পদে অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থী হতে তাঁরা আগেভাগেই নিজ নিজ এলাকায় নানা তৎপরতা শুরু করেছিলেন। এ নিয়ে তফসিল ঘোষণার পরই নগরজুড়ে কানাঘুষা ছিল যে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দলটির অনেক নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে নগর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা এমন সম্ভাবনাকে তখন পাত্তা দেননি। শুধু কাউন্সিলর নয়, মেয়র পদে বিএনপির প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান ওরফে রূপণও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।তিনি  কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য । কামরুলের বাবা প্রয়াত আহসান হাবীব কামাল বরিশাল নগর বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে দলটি। দলের এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ২৯ নেতা কাউন্সিলর পদে অংশগ্রহণ করায় তাঁদের সবাইকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি।কিন্তু এমন বিএনপি এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও বরিশালে বিএনপি নেতা-সমর্থকদের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখা যায়নি।

দলীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বরিশাল সিটি করপোরেশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। এদিন বরিশালের অন্তত ২৪টি ওয়ার্ডে বিএনপির বর্তমান এবং সাবেক নেতারা কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন আছেন বর্তমান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। এ ছাড়া পাঁচজন আছেন সদস্য। এ ছাড়া ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা, বিভিন্ন পদে থাকা সাবেক নেতারা আছেন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১০টি পদের মধ্যে সাতটিতে দলের বর্তমান ও সাবেক নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই বরিশাল সিটির ৩০টি ওয়ার্ডের অন্তত ২৫টি ওয়ার্ডে দলের নেতারা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন  এ নিয়ে দলের ভেতরে অস্বস্তি ছিল। এসব প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন বলে প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।   বিএনপির নেতারা দলীয় নেতাকর্মী  বিশ্বাস করতেন  ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে এসব প্রার্থী দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবেন। এ জন্য তাঁদের দলের পক্ষ থেকে নানাভাবে বোঝানোও হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাতে কাজ হয়নি। অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে নগর বিএনপির বেশ কয়েকজন পদধারী নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় তাঁরা রীতিমতো অবাক হয়েছেন।

ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন নগর বিএনপির সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর জাহানারা বেগম, ৬ নম্বরে প্রার্থী হয়েছেন মজিদা বোরহান, ৭ নম্বরে প্রার্থী হয়েছেন সেলিনা বেগম ও ১০ নম্বরে প্রার্থী হয়েছেন রাশিদা পারভীন। জানতে চাইলে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্থানীয় রাজনীতি করি। দীর্ঘদিন ওয়ার্ডের মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে আছি। মানুষের এই ইচ্ছাকে অবজ্ঞা করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে প্রার্থী হয়েছি।’ হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করলে দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাউন্সিলর হলে তো কিছু মানুষের উপকার করা যায়। বিশেষ করে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা উপকৃত হবে। আমার মনে হয় দলের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এরপরও বহিষ্কার করা হলে কী আর করার।’

এদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। কামরুল গতকাল বুধবার দুপুরে বলেন, ‘নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের ২৪টিতে আমাদের প্রার্থী আছে। ৭টি সংরক্ষিত আসনেও প্রার্থী আছে। আমরা সবাই আলোচনা করেই নির্বাচনী মাঠে নেমেছি।’ দেখা যাচ্ছে প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির হাই কমান্ডের অবজ্ঞা করে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই যাচ্ছে। কারন তাদের আছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা ও বিশ্বাস। বিএনপির নির্বাচন বিমুখতা নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বিএনপির এটা ভুলে গেছে নির্বাচন ছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের শৃংখলার মধ্যে রাখা দুস্কর। পক্ষান্তরে দেখা যায় আওয়ামী লীগ বরাবরই একটা নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক দল। দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী। কারণ, আওয়ামীগ ও তার নেতাকর্মীরা জানে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের উত্তম উপায় হচ্ছে নির্বাচন। অপরদিকে যারা অগণতান্ত্রিক তাদের নির্বাচনে আগ্রহ থাকেনা। কেউকেউ আত্মমর্যাদা হারানোর ভয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে চায়না। আবার কারো কারো ইচ্ছা থাকলেও তথাকথিত নেতাদের রক্তচক্ষুর ভয়ে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় বা বয়কট করে। এটাই হচ্ছে অগণতান্ত্রিক মানসিকতা। দেশের মানুষ এদের অনেক আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের কোন জনসমর্থই নেই।  বিএনপি  একটি বিশৃঙ্খল ও  বিচ্ছিন্নতাবাদী দল তা তারা বহুবার প্রমান করেছে । স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের সাথে হাত মিলিয়ে গনবিরোধী যে কাজ করছে  তার জন্য আজও তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। ২০০১-২০০৫ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশকে ৫ বার দূর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছে। একদিকে খালেদা জিয়ার দূর্নীতি আর অপরদিকে তারেকের চাঁদাবাজি। দেশের মানুষ এসবের পর বিএনপির প্রতি অতিষ্ট হয়ে গেছে। ভোট ডাকাতি, জিয়ার স্বৈরাচারী মনোভাব থেকে বিএনপি আজও বের হতে পারেনি। 

২০০৫ এ বিএনপির বিদায়ের পর দেশে যে এক অরাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল তার জন্য ও বিএনপি ও তার দোসররা  দায়ী। দীর্ঘ অরাজনৈতিক পরিবেশ থাকার পর দেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এক শান্তির ছোঁয়া পান। জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সুসংগঠিত করে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিনত করেছেন। বিএনপি জামায়াতের চোখে এসব উন্নয়ন ভালো লাগেনি। যার ফলে তারা একের পর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিএনপি বারবার নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে দোষারোপ করে আসছেন। অথচ তার সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। বিএনপির গত ১৫ বছরে নির্বাচন নিয়ে তালবাহানার কোনো শেষ নেই। এই তারা নির্বাচনে আসবেননা বলেন আবার চলে আসেন। তারা আসলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের বিরোধিতা করছেন। দেশের উন্নয়ন তাদের চোখে ভালো লাগে না। তারা মহা এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের দল থেকে ঘোষণা দেয়া হয় নির্বাচনে যাবেন না। অথচ সকল কেন্দ্রে বিএনপির নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। গত জানুয়ারি মাসের দিকে জাতীয় সংসদ থেকে অবৈধতার অভিযোগ দিয়ে বিএনপির সকল সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। তার কিছুদিনপর যখন উপনির্বাচন হয় তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আবার তিনি নির্বাচন করেছেন। এর দুটো কারন রয়েছে। এক.জনবিচ্ছিন্ন হয়ে আবোল তাবোল সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিএনপি বিশৃঙ্খল দলে পরিনত হয়েছেন। দুই নেতৃত্বের অভাব। তাই বিএনপি বুঝতে পেরেছেন  দীর্ঘ ৪ বছর সংসদে থাকার পর জনগণের সাথে বেইমানি করেছেন। যার জন্য তিনি আবার নির্বাচনে গিয়েছেন।আসন্ন নির্বাচনেও বিএনপি ষড়যন্ত্রের ছোবল দেয়ার জন্য বসে আছেন। সংসদ নির্বাচন পূর্ববর্তী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের ঘোষণা উপেক্ষা করে প্রত্যেকটি সিটিতেই বিএনপির নেতারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় গন বহিষ্কার করেও নির্বাচন থেকে সরানো যাচ্ছেনা তাদের। বিএনপির মূলত এই হাল হওয়ার মূল কারন হলো জনবিচ্ছিন্নতা। দীর্ঘদিন ধরে তার জনগণের ভোট পাচ্ছেননা। যার ফলে ক্ষমতা থেকে দূরে আছেন। বিএনপির তৃনমূল নেতৃত্ব একদিকে ক্ষমতা থেকে দূরে থাকায় দিশেহারা অন্যদিকে কেন্দ্রের দূর্বল নেতৃত্বের বলি হয়ে আছেন।এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে বলা যায়  যে বিএনপির নির্বাচনবিমুখীতা দলের তৃনমূল নেতাকর্মীদের মনোভাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। বিএনপির এ গনবিরোধী কার্যকলাপের কারনে  দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা কঠিন হয়ে পরছে। আর রীতিমতো বিএনপি তথাকথিত রাজনৈতিক দলে পরিনত হতে যাচ্ছে।

লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
ট্রেজারার
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
সাবেক চেয়ারম্যান
ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম